চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে নয়, অমিত সূত্রধর নিহত হয়েছেন মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায়

চট্টগ্রামে হাজারী গলিতে মো. ওসমান নামের এক দোকানদার ফেসবুকে ধর্মীয় সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবি সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করায় গত ০৫ নভেম্বর হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে তার দোকানে হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে, ওসমানকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানায় এবং ইটপাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের ছোঁড়া অ্যাসিডে সহকারী কমিশনারসহ সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে যৌথ বাহিনী অভিযানে নামে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত অমিতের লাশ বাড়িতে আনার বা আনার পরের দৃশ্য ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে ফেসবুকে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি এককভাবে প্রায় ৫ লক্ষ বার দেখা হয়েছে, ৩১ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং প্রায় ৭ হাজারেরও অধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হিন্দু কিশোর অমিত সূত্রধর চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হননি বরং এই কিশোর মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ নিহত হননি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে S.b. Saikat নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৭ নভেম্বর তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নিহত ছেলেটির নাম অমিত সূত্রধর। তার বাড়ি – ভৈরব গঞ্জ বাজার, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট। গতকাল (০৬ নভেম্বর) সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলেটি মারা যায়।

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠে গত ০৬ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “মৌলভীবাজারে অটোরিকশা উল্টে দুই কলেজছাত্র নিহত, শিশুসহ আহত ৩” শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে দুই কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো তিনজন। বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে কমলগঞ্জের হিড বাংলাদেশ অফিস সংলগ্ন বটতলা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- শ্রীমঙ্গলের কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদিহি এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল সায়েম (১৭) ও ভাগলপুর এলাকার রবি সূত্রধরের ছেলে অমিত সূত্রধর (১৮)। তারা কমলগঞ্জ সরকারি গণ মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।”

অমিত সূত্রধরের অধ্যয়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয় নামের ফেসবুক পেজে গত ৬ নভেম্বর তারিখে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বরাতে এই বিষয়ে একটি শোক সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়। শোক সংবাদটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় অমিত সূত্রধর ও আব্দুল্লাহ আল সায়েমের নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে শোক প্রকাশ করা হয়। 

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী কিশোর সিলেটের মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

পাশাপাশি, চট্টগ্রামে ঘটা সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়েছেন কি না সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম নিশ্চিত হয়েছে, উক্ত ঘটনায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ নিহত হননি।

সুতরাং, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত হিন্দু কিশোর অমিত সূত্রধর চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img