সম্প্রতি ‘জাপানি বিজ্ঞানীরা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পরিকল্পনা করছেন যা মাটি থেকে ঘরের বেস উঁচু থাকবে, ফলে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করবে।‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভূমিকম্প থেকে স্থাপনা রক্ষায় জাপানি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া বাড়ির ছবিটি বাস্তব নয় বরং এই বাড়িটি মূলত প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা ভূমিকম্প প্রতিরোধক বাড়ির নকশা বা ধারণা মাত্র।
ছবিটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে পেরুর রিকার্ডো পালমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী লুইস এনরিখ কুইভার ব্লগসাইট Arquitectura Magnetica তে ২০১১ সালের ১২ জুন ‘MAGNETIC ARCHITECTURE & SEISMIC STRUCTURES‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ব্লগ সাইটটি থেকে জানা যায়, এই ছবিটি লুইস এনরিখ কুইভারেরভূমিকম্প প্রতিরোধক স্থাপনা ও অবকাঠামোর গবেষণা ও ধারণা থেকে তৈরি করা।
এই ব্লগসাইটটিতে এই ছবিটি ছাড়াও সমজাতীয় আরও কিছু বাড়ির নকশা বা ধারণা খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ জাপানি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া এই বাড়িটি মূলত প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা ভূমিকম্প প্রতিরোধক বাড়ির নকশা বা ধারণা মাত্র।
জাপানে ভূমিকম্প সহায়ক বাড়ি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে:
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে American Society of Mechanical Engineers এর ওয়েবসাইট asme.org তে ২০১২ সালের ১৬ মে “Made in Japan: Earthquake-Proof Homes” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, Air Danshin নামে একটি জাপানিজ প্রতিষ্ঠান ভূমিকম্প প্রতিরোধক এমন একটি বাড়ির নকশা করেছে যেটিকে বলা হচ্ছে levitating house বা ভাসমান বাড়ি।
এই ধরনের বাড়িগুলো একটি স্ফীত এয়ারব্যাগের উপর বসানো থাকে। কখনো কোনো কম্পন সৃষ্টি হলে সেই এয়ারব্যাগে থাকা সেন্সরগুলো এক সেকেন্ডের মধ্যে একটি কম্প্রেসার চালু করে। এই কম্প্রেসারটি এয়ারব্যাগে বায়ু প্রবেশ করিয়ে এটিকে আরও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্ফীত করে এবং শেষ পর্যন্ত পুরো বাড়িটিকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক কংক্রিটের ফাউন্ডেশন থেকে তিন সেন্টিমিটার উপরে তুলে ফেলে। ভূমিকম্প চলাকালীন বাড়িটি এই উঁচুতে অবস্থান করে এবং ভূমিকম্প শেষে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।
পাশাপাশি মার্কিন গণমাধ্যম USA Today তে ২০২১ সালের ১১ মে “Fact check: Japanese firm’s technology allows houses to rise off ground, avoid earthquake damage” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এই ধরনের বাড়িগুলো সাধারণ বাড়ির মতোই। শুধু পার্থক্য হচ্ছে এই বাড়িগুলোতে সেন্সর ও এয়ার কম্প্রেসার থাকে। সেন্সরটি ভূমিকম্প শনাক্ত করা মাত্রই এয়ার কম্প্রেসারে সংকেত পাঠায়। এই এয়ার কম্প্রেসার থেকে প্রবাহিত বায়ু ভূমিকম্প-প্রতিরোধক কংক্রিটের ভিত্তি ও বাড়ির কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা পুরো বাড়িটিকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখে। জাপানিজ প্রতিষ্ঠান Air Danshin ২০০৫ সালে এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করে।
এই সম্পর্কে প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট New Atlas এ ২০১২ সালের ৮ মার্চ ‘Air Danshin creates airlift system to levitate houses during earthquakes‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আরও থেকে জানা যায়, এই প্রযুক্তিটি ২০১২ সালের মধ্যে জাপান জুড়ে ৯০ টি স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল।
বাড়িটি সম্পর্কে ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যায়,
একটি এয়ার চেম্বার বা বায়বীয় স্থান দ্বারা বাড়িটিকে তার ভিত্তি থেকে আলাদা করা হয়। হঠাৎ কোনো কম্পন শনাক্ত হলে (সাধারণত ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ সেকেন্ডের মধ্যে) একটি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে বাতাস এসে এই চেম্বারটি পূর্ণ করে এবং পুরো কাঠামোটি ১.১৮ ইঞ্চি বা ৩ সেমি পর্যন্ত তুলে নেয় এবং কম্পন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে এই প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে৷
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভূমিকম্প থেকে স্থাপনা রক্ষায় জাপানি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির সঙ্গে এই প্রযুক্তির কোনো মিল নেই।
মূলত, ২০০৫ সালে Air Danshin নামে একটি জাপানিজ প্রতিষ্ঠান ভূমিকম্প প্রতিরোধক levitating house বা ভাসমান বাড়ি উদ্ভাবন করে। এই ধরনের বাড়িগুলো সাধারণ বাড়ির মতোই। শুধু পার্থক্য হচ্ছে এই বাড়িগুলোতে সেন্সর ও এয়ার কম্প্রেসার থাকে। সেন্সরটি ভূমিকম্প শনাক্ত করা মাত্রই এয়ার কম্প্রেসারে সংকেত পাঠায়। এই এয়ার কম্প্রেসার থেকে প্রবাহিত বায়ু ভূমিকম্প-প্রতিরোধক কংক্রিটের ভিত্তি ও বাড়ির কাঠামোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা পুরো বাড়িটিকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি এমন বাড়ির ছবি দাবিতে বায়ুর উপর ভাসমান একটি বাড়ির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই বাড়িটি মূলত প্রযুক্তির সহায়তায় পেরুর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর তৈরি করা ভূমিকম্প প্রতিরোধক বাড়ির নকশা বা ধারণা মাত্র। এর সঙ্গে বাস্তব প্রযুক্তির কোনো মিল নেই।
সুতরাং, ভূমিকম্প থেকে স্থাপনা রক্ষায় জাপানি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Arquitectura Magnetica: MAGNETIC ARCHITECTURE & SEISMIC STRUCTURES
- ASME.ORG: Made in Japan: Earthquake-Proof Homes
- USA Today: Fact check: Japanese firm’s technology allows houses to rise off ground, avoid earthquake dama
- New Atlas: Air Danshin creates airlift system to levitate houses during earthquakes
- Japanology Plus_Youtube: Japanology Plus-Earthquake-resistant-Architechture