যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের গাড়িবহরে আ. লীগের হামলা দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সাথে এই সফরে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা হেনস্তার শিকার হন। বিমানবন্দর থেকে বের হতে তারা গাড়িতে ওঠার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে এবং ‘জয় বাংলা’সহ অন্যান্য স্লোগান দিতে থাকে। 

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘যুক্তরাষ্ট্রে ইউনুসের গাড়ি বহরে আ.লীগের হামলায় পালালো ইউনূস!’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের গাড়িবহরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, নেপালের গণঅভ্যুত্থানকালীন ঘটনা এবং যুক্তরাজ্যে একটি উদযাপন প্যারেডে দূর্ঘটনার ফুটেজ সংযুক্ত করে এই দাবি ছড়ানো হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই- ১

প্রথম ফুটেজটিতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে কিছু যানবাহন ভাঙচুর করতে দেখা যায়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে wehatethecold নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৯ সেপ্টেম্বর ‘The side of Nepal the media won’t show you’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর প্রথম ফুটেজটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০৩ থেকে ০০:০৬ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, সম্প্রতি নেপালে সংঘটিত আন্দোলন চলাকালে সেখানে অবস্থান করতেছিলেন উক্ত ভ্লগার। ভিডিওটি তার ক্যামেরায় ধারণকৃত নেপালের সেসময়ের পরিস্থিতির দৃশ্য৷ 

পরবর্তীতে, ভারতীয় গণমাধ্যম News 18 এর ফেসবুক পেজে ‘wehatethecold’ ইউটিউব চ্যানেলের ভ্লগারের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতেও আলোচিত ভিডিওর প্রথম ফুটেজের অনুরূপ সংযুক্তি লক্ষ্য করা যায়। 

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, আন্দোলন চলাকালে নেপালে অবস্থানকারী ওই ভ্লগারের নাম হ্যারি জ্যাকশন। তার প্রচারিত ভিডিওতে তিনি নেপালে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকালীন পরিস্থিতির দৃশ্য ধারণ করেছেন৷ 

অর্থাৎ, প্রথম ফুটেজের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের গাড়িবহরে হামলার দৃশ্য নয়। 

ভিডিও যাচাই- ২

দ্বিতীয় ফুটেজে একটি জনসমাগমে পুলিশের সদস্যদের একটি গাড়ির সামনে বিক্ষুদ্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম 7NEWS এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ মে ‘Car ploughs through crowd at Liverpool football parade’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজের মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ২৬ মে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ফুটবল দল লিভারপুল এফসির জয় উদযাপনের প্যারেডের সময় সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে মানুষের ওপর একটি গাড়ি চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চার শিশুসহ কয়েক ডজন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়ির সামনে বিক্ষুদ্ধ জনতার সাথে পুলিশের বাকবিতন্ডায় একটি ফুটেজে মিরর ইফেক্ট ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

একই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ মে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকেই একই তথ্য জানা যায়। 

অর্থাৎ, দ্বিতীয় ফুটেজের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূসের গাড়িবহরে হামলার দৃশ্য নয়।

তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গাড়িবহরে হামলা হলে তা জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের গাড়িবহরে হামলা দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা৷ 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img