মুক্তিযুদ্ধে জিয়া পরিবারের অবদান নিয়ে ড. ইউনূসের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

দীর্ঘদিন ধরে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ অবদান একমাত্র জিয়া পরিবারের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু করছেন একমাত্র জিয়া পরিবার।’ শীর্ষক দাবিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ইন্টারনেটে একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।

ড. ইউনূস

২০১৮ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

২০১৯ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ)।

২০২০ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ)। 

২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ)।

২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ)।

২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),  এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়া পরিবারের অবদান এবং জিয়া পরিবারের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসা মন্তব্যটি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সাল থেকে তার নামে উক্ত মন্তব্যটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রচার হয়ে আসছে।

ফেসবুকে উক্তিটি প্রথম কখন পাওয়া যায়?

ড. মুহাম্মদ  ইউনূসের নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারিত উক্ত মন্তব্যটির উৎস অনুসন্ধানে দেখা যায়, অন্তত ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে তার নামে উক্ত মন্তব্যটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুল ব্যবহার করে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এই সম্পর্কিত সম্ভাব্য প্রথম দিকের পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Crowdtangle

তবে এই পোস্টটিসহ সে সময় ফেসবুকে প্রচারিত অন্যান্য পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলোর কোথাও তার এই সম্পর্কিত মন্তব্যের কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস কখন, কোথায় এমন মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে পোস্টগুলোতে কোনো তথ্য নেই।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি এমন মন্তব্য করেছেন?

পরবর্তীতে দাবিটি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

এতে দেখা যায়, তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের আগে ৪ টি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এই চারটি পোস্টের কোথাও আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Screenshot Collage: Rumor Scanner

পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সেন্টারের ফেসবুক পেজ ঘুরেও উল্লিখিত সময়ে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে প্রচারিত আলোচিত দাবিটির উৎস যাচাইয়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ও বিএনপি বা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে তাঁর মন্তব্য অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম, আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট ও ব্লগসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও মন্তব্য দেখুন

এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে দাবিটির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় রিউমর স্ক্যানার টিম থেকে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সেন্টারের সাথে মেইলে যোগাযোগ করা হয়। মেইলের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘অধ্যাপক ইউনূস কখনো এ ধরনের কথা বলেননি।’

মূলত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জিয়া পরিবারের অবদান এবং জিয়া পরিবারের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার দাবিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ অবদান একমাত্র জিয়া পরিবারের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু করছেন একমাত্র জিয়া পরিবার।’ শীর্ষক একটি মন্তব্য দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে ড. ইউনূসের করা এ ধরণের মন্তব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি বলে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও  ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক একটি মন্তব্য প্রচার হলে সেটিও মিথ্যা প্রমাণ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

প্রতিবেদনটি দেখুন: ‘খালি মাঠে বসে গোল আর দেওয়ার সুযোগ নেই’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. ইউনূসের নয় 

সুতরাং, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ অবদান একমাত্র জিয়া পরিবারের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু করছেন একমাত্র জিয়া পরিবার।’ শীর্ষক মন্তব্যটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img