সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে দেশের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উক্ত এলাকাসমূহে আটকে পড়া মানুষদের সাহায্য করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন উদ্ধারকর্মী দল কাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি বন্যা কবলিত মানুষের জন্য মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দান করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সম্প্রতি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও দেখুন নিউজ ২৪।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি দেশের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দান করেন নি বরং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের নামে তৈরি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সূত্রে ভুয়া এই দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরতে বিভ্রান্তির সূত্রপাত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। নিউজ২৪ এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি বন্যা কবলিত মানুষের জন্য মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দানের বিষয়টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা জানান।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পোস্ট দাবিতে ‘Nahid Islam’ নামক ফেসবুক পেজে গত ২৪ আগস্ট তারিখে প্রচারিত পোস্টটি খুঁজে পাই।
উক্ত ফেসবুক পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিলে পেজটি চালুর সময়ে এটির পূর্ব নাম ছিল ‘Free Motion24’, যা গত ৯ আগস্টে পরিবর্তন করে ‘Nahid Islam’ করা হয়। এছাড়া এটি ভেরিফাইড কোনো পেজও না।
এছাড়া, নাহিদ ইসলামের আসল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি বন্যা কবলিত মানুষের মসজিদের দানবক্সের জন্য ৭ কোটি টাকা দান করার বিষয়ে কোন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একই তথ্য যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম পোস্ট করেছেন দাবিতেও প্রচারিত হয়েছে।
‘Asif Mahmud’ নামক পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই ফেসবুক পেজটি গত ৯ আগস্ট চালু করা হয়।
অন্য দিকে Sarjis Alam পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটির পূর্ব নাম ছিল অনুভূতি, যা গত ২২ মে চালু হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট নাম পরিবর্তন করে ‘Sarjis Alam’ করা হয়।
এছাড়াও, আসিফ মাহমুদ ও সারজিস আলম এর আসল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি দেশের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দানের বিষয়ে কোন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য আমরা পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দানের বিষয়টি মিথ্যা বলে আমাদের নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়।
সুতরাং, কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ কমিটি বন্যা কবলিত মানুষের জন্য মসজিদের দানবক্সের ৭ কোটি টাকা দান করেছেন শীর্ষক ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।