সম্প্রতি কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে, কুয়েতের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে স্ত্রী তার স্বামীকে নিয়ে মজা করছিলেন। যেটা অনেকটা রোস্টিংয়ের মতো ছিল। অনুষ্ঠানে স্বামী মঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। এতে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্টুপিড বলেন। আর তাতে পাত্র চটে গিয়ে পাত্রীকে ডিভোর্স দেন। বিয়ের তিন মিনিটের মাথায় এই ঘটনা ঘটে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, কালবেলা, আলোকিত বাংলাদেশ, মাই টিভি (ইউটিউব), দ্যা ঢাকা টাইমস, বার্তা২৪, দৈনিক করতোয়া, অর্থসূচক (ইউটিউব), রিদ্মিক নিউজ, জুম বাংলা, পদ্মা নিউজ (ইউটিউব), আমাদের কাগজ।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং একটি অনলাইন পোর্টালের বরাতে ছড়িয়ে পড়া সাড়ে চার বছরেরও বেশি পুরোনো সংবাদকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিবেদনে সংবাদটির সূত্র হিসেবে ডেইলি মিররের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা The Mirror এর ওয়েবসাইটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। তবে মিররের প্রতিবেদনে এই ঘটনা কবে ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
মিরর তাদের প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে Q8 News নামক একটি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করেছে।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কিওয়ার্ড সার্চ করতে গিয়ে আমরা মিররেরই ওয়েবসাইটে একই সংবাদ ২০১৯ সালের ০৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হতে দেখেছি।
দুটো প্রতিবেদনেরই ভাষা, তথ্য এবং শব্দচয়নে মিল পাওয়া যায়। পূর্বের প্রতিবেদনেও Q8 News নামক গণমাধ্যমটিকেই সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কুয়েত ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল Kuwait Daily News (Q8 News) এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
এক প্যারার এই সংবাদ প্রতিবেদনে ডিভোর্সের কারণ বলা হলেও পাত্র পাত্রীর নাম এমনকি কুয়েতের ঠিক কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো ছবি প্রকাশ না করে প্রতীকী একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এই প্রতিবেদনের বরাতেই সেসময় মিরর ছাড়াও আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে (Daily Mail, India Times, Metro, The Sun) সংবাদ প্রকাশিত হয়।
কিন্তু Kuwait Daily News ছাড়া আর কোনো সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বাড়তি তথ্যের খোঁজ মেলেনি। তাই সংবাদটির সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে, সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, কুয়েতে বিয়ের তিন মিনিট পরই স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে স্বামী মঞ্চে উঠতে গিয়ে পড়ে গেলে স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে স্টুপিড বলেন। আর তাতে পাত্র চটে গিয়ে পাত্রীকে ডিভোর্স দেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। ২০১৯ সালে কুয়েতের একটি অনলাইন পোর্টালের বরাতে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার পর সম্প্রতি এটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিররে প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও সংবাদটি ঘটনার সময় যাচাই ব্যতিত সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বিয়ের তিন মিনিট পরই ডিভোর্সের সাড়ে চার বছরের পুরোনো সংবাদকে সাম্প্রতিক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।