নওগাঁয় জোরপূর্বক পদত্যাগের পর অসুস্থ শিক্ষক মারা যাননি

গত জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। গণআন্দোলনের মুখে গত ০৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গত ২৮ আগস্ট নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন এবং পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, এই শিক্ষক মারা গেছেন। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

কালের কণ্ঠকে সূত্র হিসেবে দেখিয়ে এ সংক্রান্ত আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পদত্যাগের পর অসুস্থ নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মারা যাননি বরং তিনি বর্তমানে ঢাকার হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, Tuhin Talukder নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩০ আগস্ট রাত ০১টা ৩৫ মিনিটে করা সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

তবে এর প্রায় সাড়ে ১৯ ঘন্টা পর একইদিন রাত ০৮টা ৫৭ মিনিটে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “জবরদস্তিতে পদত্যাগ, স্ট্রোক করে অধ্যক্ষ ‘ভালো নেই’” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদের বরাতে জানা যায়, ২৮ আগস্ট শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপে সাদা কাগজের পদত্যাগপত্রে সই করেন নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তিনি স্ট্রোক করেছেন বলে ধারণা করেছেন। সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে দুইদিন পর ৩০ আগস্ট সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। 

অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম এর মৃত্যুর দাবি প্রচার করার পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত সংবাদে তার মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও, একই বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এসব সংবাদের কোথাও তার পরবর্তী শারীরিক অবস্থা বা মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে, মূলধারার গণমাধ্যম কালের কন্ঠ এর নামের আদলে ‘দৈনিক কালের কন্ঠ’ নামের একটি পেজ থেকে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার বিষয়ে গত ০১ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট প্রচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত পোস্টটি সত্য মনে করে ফেসবুকে কালের কন্ঠ’র সূত্রে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার দাবিটি পুনরায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত পেজটি কালের কন্ঠ’র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ নয় বরং কালের কন্ঠ’র নামে খোলা ফেইক পেজ। এছাড়াও, কালের কন্ঠ’র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে প্রচারিত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম রবীন শিষ এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকার হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে চিকিৎসারত আছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অধ্যক্ষের মৃত্যুর খবরটি মিথ্যা বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন তিনি। 

সুতরাং, নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হয়ে অসুস্থ হওয়ার পর মারা গেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

হালনাগাদ/ Update

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকাকে জড়িয়েও একই দাবি সম্বলিত পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত বিষয়ে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো।

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img