সম্প্রতি ‘This Hindu boy converted to Islam to marry a Muslim girl. He died in an accident a week after converting to Islam বা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে হিন্দু তরুণ ধর্মান্তরিত হয়েছিল। ধর্মান্তরিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি টুইট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে।
টুইটারে প্রচারিত এমন একটি টুইট দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে হিন্দু তরুণের ধর্মান্তরিত হওয়া এবং ধর্মান্তরিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর তথ্যটি সঠিক নয় বরং ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ঐ তরুণ আরও প্রায় ৪ বছর পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১১ জানুয়ারি ‘ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ল হার না–মানা সাঈদের পথচলার লড়াই‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ঐ তরুণের নাম সাঈদ আবদুল্লাহ (২২)। গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
প্রতিবেদনটি থেকে সাঈদ আব্দুল্লাহর বন্ধুদের সূত্রে আরও জানা যায়, সাঈদ আবদুল্লাহর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ার হোতালিয়া পাড়ায়। তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে।
পরবর্তীতে চকরিয়ার এক ব্যক্তির আর্থিক সহায়তায় তিনি এসএসসি পাস করে ঢাকায় এসে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখানকার হোস্টেলে ওঠেন এবং এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পরবর্তীতে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাঈদ আব্দুল্লাহর ফেসবুক একাউন্টটি (Abdullah Sayeed) খুঁজে পাওয়া যায়।
একাউন্টটি বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাঈদ আব্দুল্লাহর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
সাঈদ আব্দুল্লাহ পোস্টটিতে তার ইসলাম গ্রহণের প্রায় সাড়ে ৪ বছর অতিক্রম হয়েছে উল্লেখ করে লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম গ্রহনের প্রায় ৪ বছর ৫ মাসের মতো হলো। আমার প্রিয় মা বাবা ভাই বোন যারা এখনো বুঝতে পারছে না যে আল্লাহই আমাদের একমাত্র রব, একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য রব ও মুহাম্মাদ (স) সত্য নবী এবং ইসলামই একমাত্র সত্য দ্বীন আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত দান করেন।আপনারা সবাই আমার পরিবার আত্মীয় স্বজনদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করবেন।’
অর্থাৎ, সাঈদ আব্দুল্লাহর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং তিনি স্কুলে অধ্যয়নকালীন সময়েই প্রায় সাড়ে ৪ বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া অনুসন্ধানে সাঈদ আব্দুল্লাহ বিবাহ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সাঈদ আব্দুল্লাহ বিবাহ সম্পর্কিত তথ্যানুসন্ধানে তার ফেসবুক একাউন্টের রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস খুঁজে দেখা যায়, তিনি সেখানে কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেছিলেন।
Screenshot from Sayeed Abdullah’s Facebook Account)
পাশাপাশি সাঈদ আব্দুল্লাহর বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে তার সহপাঠীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
তার সহপাঠী খন্দকার সিয়াম আহমদে জানান, সাঈদ আব্দুল্লাহ ধর্মান্তরিত হয়েছিল নিজ ইচ্ছায়। কোনো মেয়ে বা অন্য কেউ জড়িত ছিল না এবং তিনি বিবাহিতও ছিলেন না।
মূলত, তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী সাঈদ আব্দুল্লাহ গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার তেজগাঁওয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে যে, মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং ধর্মান্তরিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাঈদ আব্দুল্লাহ সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেননি। বরং তিনি স্কুলে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই প্রায় সাড়ে চার বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন৷ এছাড়া অনুসন্ধানে সাঈদ আব্দুল্লাহ বিবাহ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে হিন্দু তরুণ সাঈদ আব্দুল্লাহর ধর্মান্তরিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Prothom Alo: ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ল হার না–মানা সাঈদের পথচলার লড়াই
- Sayeed Abdullah_Facebook Post: Sayeed Abdullah Facebook Post (আর্কাইভ)