সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সংঘাতের প্রেক্ষিতে ‘পাকিস্তান ভারতে হামলা করার পর ভারতীয়রা মুসলমানদের দোকান-পাট ভাংচুর করা শুরু।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকালে পাকিস্তান ভারতে হামলা করার পর ভারতে মুসলমানদের দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনার নয় বরং, ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের নৈনিতালে বয়স্ক মুসলমান ব্যক্তির দ্বারা নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনের ওপর কতিপয় হিন্দু সংগঠনের কর্মীদের নির্যাতনের ঘটনাকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Sachin Gupta নামক এক্স অ্যাকাউন্টে গত ০১ মে প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওতে বিশৃঙ্খলার দৃশ্যটি নৈনিতালের। সেখানে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর ক্ষোভ প্রকাশের নামে জনতা তাণ্ডব চালায়। মুসলমান নামের দোকানগুলিতে ভাঙচুর চালানো হয়, দোকান থেকে লোকজনকে টেনে বের করে মারধর করা হয়। ধর্ষণের অভিযুক্ত উসমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পুলিশ শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেছে।
এছাড়া, এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম Maktoob Media এর ওয়েবসাইটে গত ০১ মে ‘Tensions in Nainital after Muslim man’s arrest in POCSO case; Stones pelted at mosque, Muslim shops vandalized’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওর দৃশ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে গত ৩০ এপ্রিল এক নাবালিকা ভুক্তভোগীর মা তাকে থানার নিয়ে এসে ৬৫ বছর বয়সী ঠিকাদার উসমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ও POCSO আইনে এফআইআর দায়ের করলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর, সেদিন রাতে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যসহ একদল পুরুষ অভিযুক্তের অফিসের কাছে জড়ো হয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকান ও খাবারের দোকান ভাঙচুর করে।কাশিত একটি ভিডিওতে, কিছু পুরুষকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চড় মারতে দেখা গেছে। গ্রেফতারের পর, বুধবার রাত ৯:৩০ টার দিকে, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্য সহ একদল পুরুষ অভিযুক্তের অফিস থাকা বাজারের কাছে জড়ো হয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকান এবং খাবারের দোকান ভাঙচুর করে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিতে কিছু পুরুষকে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চড় মারতে দেখা গেছে।
অর্থাৎ, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রচারিত এই ভিডিওটি পাক-ভারত সংঘাতের আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।
সুতরাং, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ভারতে মুসলাম নাগরিকদের নির্যাতনের ঘটনা দাবিতে ভারতে ভিন্ন একটি ঘটনায় মুসলমান গোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর ।
তথ্যসূত্র
- Sachin Gupta – X Post
- Maktoob Media – Tensions in Nainital after Muslim man’s arrest in POCSO case; Stones pelted at mosque, Muslim shops vandalized