ডেনমার্কে পড়তে গিয়ে বাবুর্চির কাজে বাংলাদেশি যুবকের মাসে ৬ লাখ টাকা আয় শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়  

সম্প্রতি, ‘মাত্র ৫ মাসে গাড়ি কিনল ডেনমার্কে পড়তে এসে, বাবুর্চি হিসেবে জব করে ঘন্টাপ্রতি ১৬০ ডলার বেতন যা বাংলাদেশি টাকাই ২৫০০ টাকা এবং প্রতি দিন ৮ ঘন্টা চাকরি করে মাসিক ৬ লাখ টাকার উপর কামাই করে’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

গত ২৮ মে সাদমান ভাই নামের এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত দাবিতে করা একটি পোস্ট প্রচার করা হয়েছে।

ডেনমার্কে

পোস্টে ড্যানিশ ক্রোনার এবং এক ব্যক্তি একটি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি যুক্ত করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘মাত্র ৫ মাসে গাড়ি কিনল Denmark এ পড়তে এসে! Job করে সে বাবুর্চি হিসেবে! ঘন্টাপ্রতি 160 dollars বেতন যা বাংলাদেশি টাকাই ২৫০০ টাকা হয়! প্রতি দিন ৮ ঘন্টা চাকরি করে সে! মাসিক কামাই ৬ লাখ টাকার উপর! নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে সে, টাকার অভাবে IELTS রেজিস্ট্রেশন করতে পারছিল না এক সময়! আমার কাছে ধার করে সেই টাকা দিয়ে IELTS এক্সাম দেয় আর এখন সে Denmark এ! নিম্নবিত্তরাই বিশ্ব জয় করে, এটা এক অনেক বড় শক্তি! ’

এই পোস্টটিতে এখন পর্যন্ত ২৩ হাজারের অধিক রিয়েক্ট পড়েছে। 

এছাড়াও, একই তথ্য ও ছবি সম্বলিত  ফেসবুকের আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশি যুবক ডেনমার্কে পড়তে এসে মাত্র পাঁচ মাসে গাড়ি কেনা, বাবুর্চি হিসেবে চাকরি করে ঘন্টাপ্রতি ১৬০ ডলার বেতন পাওয়া এবং মাসিক ৬ লাখ টাকা আয় শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভাইরাল পোস্টে থাকা ড্যানিশ ক্রোনারের ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Harunor Rashid Hira নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি একজন ডেনমার্ক প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন থাকেন। ২০২৩ সালের ১৫ জুন ছবিটি পোস্ট করে জনাব হীরা জানান, সেসময় তিনি বাসায় ফেরার সময় তার ব্যাগ ফেলে আসেন যাতে এই ৫০০০ ড্যানিশ ক্রোন ছিল। পরে তিনি সেই ব্যাগ এই অর্থসমেত ফেরত পান। হীরা উল্লেখ করেছেন, ৫০০০ ড্যানিশ ক্রোন বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। হীরার এই পোস্ট থেকে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে পোস্টগুলোতে থাকা উক্ত ব্যক্তির ছবিও একই অ্যাকাউন্টেই পাওয়া যায়। এই অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী কাভার ফটো হিসেবে আপলোড করা হয় ছবিটি। এই পোস্ট থেকেও আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

হারুনুর রশীদ হীরা উক্ত দাবিগুলোর বিষয়ে গত ৩১ মে একটি পোস্ট করেন।

Screenshot source: Facebook 

পোস্টে তিনি জানান, আলোচিত পোস্টে যা দাবি করা হচ্ছে তা অসত্য, ভুয়া এবং বানোয়াট।

হীরা লিখেছেন, ”আমি কোন বাবুর্চি না আমি কোপেনহেগেন এর একটি বিলাশবহুল রেষ্টুরেন্টে কিচেনে কাজ করি।” 

হীরা জানাচ্ছেন, ”আমি প্রতি দিন ৮ ঘন্টা কাজ করি না,আমি যে কাজ করি একটি কোম্পানির অধিনে সেখানে আমি নিজেই শিডিওল সেট করি আমার এবং আমার সাথে যারা কাজ করে তাদের।” 

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমার মাসিক কামাই মোটেও ৬ লাখ টাকার উপরে না ম্যাক্সিমাম ২লাখ হতে পারে।” 

হীরা জানিয়েছেন, তিনি কোনো নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে না, তার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজন সামরিক কর্মকর্তা।

“আমি যে বাবার সন্তান,আমার বাবার অনেক কোটি টাকা না থাকতে পারে কিন্ত জন্মের  পরে অভাব কি জিনিস তা আমি কখনো দেখি নি।তাই IELTS পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমি কারো কাছ থেকে ধার করে পরীক্ষা দিবো এটা খুবই হাস্যকর ব্যাপার।”, বলছেন তিনি। 

‘সাদমান ভাই’ নামের যে পেজটি থেকে এ বিষয়ে প্রথম পোস্ট করা হয় সেটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৪ হাজার ফলোয়ারের পেজটি বেশ নতুন, খোলা হয়েছে গত মাসের ০৮ মে। পেজটি বাংলাদেশ থেকে একজন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ০৪ জন পরিচালনা করছেন।

মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘মাত্র ৫ মাসে গাড়ি কিনল ডেনমার্কে পড়তে এসে, বাবুর্চি হিসেবে জব করে ঘন্টাপ্রতি ১৬০ ডলার বেতন যা বাংলাদেশি টাকাই ২৫০০ টাকা এবং প্রতি দিন ৮ ঘন্টা চাকরি করে মাসিক ৬ লাখ টাকার উপর কামাই করে’ শীর্ষক দাবিতে এক যুবকের ছবি সহ কিছু পোস্ট  প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, হারুনুর রশিদ নামের এক ডেনমার্ক প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিন্ন সময়ের দুইটি ছবি সংগ্রহ করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এসব দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন। 

সুতরাং, ডেনমার্কে পড়তে গিয়ে বাবুর্চির কাজে বাংলাদেশি যুবকের মাসে ৬ লাখ টাকা আয়সহ প্রাসঙ্গিক কিছু দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img