গত ০৪ মে গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৭০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এরই প্রেক্ষিতে, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর হামলার ঘটনায় ৫৪ জন আটক ৩০ জন ছাত্রদল বাকি ২৪ জন শিবির কর্মী’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় ৫৪ জন আটকের মধ্যে ৩০ জন ছাত্রদল ও বাকি ২৪ জন শিবিরের কর্মীর দাবিটি সঠিক নয় বরং, এ পর্যন্ত আটক মোট ৭০ জনের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছে পুলিশ।
অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে একটি লিংক দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে amardeesh247 নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। উক্ত লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায়, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলায় জড়িত সন্দেহে ৫৪ জন আটক, অধিকাংশই ছাত্রদল ও শিবির কর্মী’ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এর প্রকাশকাল হিসেবে ০৬ মে, ২০২৫ তারিখের কথা উল্লেখ রয়েছে।
কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় গাজীপুরে টানা অভিযানে মোট ৫৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৩০ জন ছাত্রদল কর্মী এবং ২৪ জন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী বলে জানিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
জিএমপি কমিশনার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। হামলার পরিকল্পনা, সমন্বয় ও বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে।”
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে, যা ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উসকানির ইঙ্গিত দেয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্তে গতি এসেছে।
হামলায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দাবি করেছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল, যার মাধ্যমে সংগঠনটির উত্থান থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
গাজীপুর শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্র রাজনীতির অন্ধকার দিক আবারও সামনে এসেছে। দেশব্যাপী এই ঘটনার নিন্দা জানানো হচ্ছে এবং দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
তবে, হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার অভিযোগে প্রথমে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মী বলে পুলিশের দাবি।
এছাড়া, সর্বশেষ মোট ৭০ জনকে আটক করা হয়েছে। সেখানেও পুলিশ দাবি করেছেন আটককৃতদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মী।
ফ্রি ডোমেইনের ব্লগসাইট ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানোর এই পদ্ধতি গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি রিউমর স্ক্যানারের ইনভেস্টিগেশন ইউনিট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বেরিয়ে এসেছে এসব সাইটের পেছনে কারা আছেন, কারাই বা এসব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এবং কাদের এসব অপতথ্যের শিকার বানানো হচ্ছে। পড়ুন এখানে।
সুতরাং, হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় ৫৪ জন আটক ৩০ জন ছাত্রদল, বাকি ২৪ জন শিবির কর্মী- শীর্ষক তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র