চট্টগ্রামে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ধীমান সেন গুপ্ত নামের ছাত্রলীগ নেতা নিহতের ভুয়া তথ্য প্রচার

দেশব্যাপী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথেও ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মহানগরীর মুরাদপুর এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সেখানে গিয়েও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আক্রমণ করলে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নামতে চেষ্টা করে। এতে অনেকেই ভবন থেকে নিচে পড়ে আহত হন। উক্ত ঘটনায় ছাদ থেকে পড়ে দিমান সেন গুপ্ত নামের একজন ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন দাবিতে একটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ধীমান সেন গুপ্ত

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে দিমান সেন গুপ্ত নামের ছাত্রলীগ নেতা নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ধীমান সেন গুপ্ত মারা যাননি। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগ কর্মী নন বরং তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের একজন যুবলীগ নেতা।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Mahadi Hasan নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ১৭ জুলাই করা একটি পোস্টে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook

ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ধীমান সেন গুপ্ত গুরুতর আহত হয়েছেন। উক্ত পোস্টটিতে ধীমান সেন গুপ্তের ফেসবুক আইডির সন্ধানও পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ধীমান সেন গুপ্তের ফেসবুক আইডি পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ১৭ জুলাই বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি জানান, তিনি মারা যাননি। এছাড়া তার মৃত্যুর গুজবে কান না দিতেও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

Screenshot: Facebook

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Wahed Murad নামের আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে ১৭ জুলাই করা একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় ধীমান সেন গুপ্তসহ অন্যান্য আহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রামের ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Screenshot: Facebook

আহত ধীমান সেন গুপ্ত ছাত্রলীগ কর্মী কিনা তা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর-এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ জুলাই প্রাণে বাঁচতে ভবন থেকে লাফ, ৪ ছাত্রলীগ নেতা আহত শীর্ষক শিরোনাম প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, আহত ধীমান সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগের একজন নেতা। এছাড়াও জানা যায়, আন্দোলনকারীদের হাত থেকে বাচতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা মুরাদপুর এলাকার বেলাল মসজিদ গলির মিরদাদ ম্যানসন নামের ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়।

Screenshot: Jugantor

অর্থাৎ, চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভবনের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে আহত হওয়া ধীমান সেন গুপ্ত মারা যাননি।

মূলত, সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে গত কয়েকদিন যাবত দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন চলছে। এরই মাঝে চীন সফর শেষে কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা ”মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?” শীর্ষক মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে সারাদেশ। এতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীরা মুরাদপুর এলাকার বেলাল মসজিদ গলির মিরদাদ ম্যানসন নামের ভবনের ছাদে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা সেখানে গিয়েও আক্রমণ করলে তাদের হাত থেকে বাচতে ভবনের পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে বেশকয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মী গুরতর আহত হন। এ ঘটনায় ছাদ থেকে পড়ে ধীমান সেন গুপ্ত নামের একজন ছাত্রলীগ নেতা মারা গিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি একটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত নিহতের দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ধীমান সেন গুপ্ত বেঁচে আছেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগ নেতা নন। বরং, মহানগরীর ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড যুবলীগের একজন নেতা।

সুতরাং, চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ধীমান সেন গুপ্ত নামের ছাত্রলীগ নেতা মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img