ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসন আমলের অবসান ঘটে। ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপরই ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। এছাড়াও সেদিন যেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে না পারে সেজন্যে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা আগেরদিন রাত থেকেই সেখানে অবস্থা করেন। পরদিন সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা মারধর ও হেনস্তার শিকার হন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের গাড়িতেও সেসময় হামলা হয়। এর প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকায় কাদের সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে ৩১ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন দাবিতে ‘রাজধানীতে কাদের সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা ভয়বাহ সংঘর্ষ ৩১ পুলিশ খতম’ শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৫ আগস্ট কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা এবং ৩১ জন পুলিশ সদস্য নিহতের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মূলত Desh tv 71 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সংবাদ বুলেটিনের অংশ। যেখানে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার সংবাদের পাশাপাশি সেদিনের অন্যান্য খবরও প্রচার করতে দেখা যায়। উক্ত বুলেটিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাধার মুখে কাদের সিদ্দিকী, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাঠ করে শোনানো হয়। তবে উক্ত ভিডিওর কোথাও তাকে কুপিয়ে হত্যা করা কিংবা ওইদিন সংঘর্ষে ৩১ জন পুলিশ সদস্য নিহতের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রচার করতে দেখা যায়নি। বরং, প্রতিবেদনটিতে হামলার পরবর্তী সময়ে কাদের সিদ্দিকীর দেওয়া বক্তব্য দেখতে পাওয়া যায়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘সেখানে অনেক উত্তেজিত লোকজন দেখলাম, ছাত্রদের দেখলাম। আমাকে বলেছে আপনি চলে যান, আমি চলে এসেছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা কিন্তু সুন্দর আচরণ করেছে।’
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও একইদিনে দেশের কোথাও সংঘর্ষে ৩১ জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, রাজধানীতে কাদের সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা এবং সংঘর্ষে ৩১ পুলিশ সদস্য নিহত দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jugantor Website: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাধার মুখে কাদের সিদ্দিকী, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ
- Rumor Scanner’s Own Analysis