বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কেএনএফের হামলার দৃশ্য দাবিতে মিয়ানমারের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, বান্দরবানের রেমাক্রি অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে গুলি করার পরের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

যা দাবি করা হচ্ছে

  • প্রচারিত ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছেঃ “আজ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত রেমাক্রি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেএনএ…।  লঙ্ঘন করলে একিই অবস্থা হবে। এর আগেও ২ বারের মতো হেলিকপ্টারের গায়ে গুলি লেগেছিল । তৃতীয়বার আসলে কিন্তু  খবর আছে : কেএনএফ”
  • প্রচারিত ছবিটির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছেঃ ‘বান্দরবানে বাংলাদেশ সরকারের সেনাবাহিনীর আগ্রাসন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সেনাবাহিনীর দমন পীড়ন রুখতে কেএনএফ এর যুদ্ধ চলাকালীন মুহূর্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার বিধস্ত অবস্থায় উদ্ধয়মান‌। ফুটেজ কেপচার বাই কেএনএফ যোদ্ধা।’

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বান্দরবানের রেমাক্রিতে কেএনএফ কর্তৃক সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে হামলার দৃশ্যের নয় বরং এটি চলতি বছরের গত ০৩ মার্চ মিয়ানমারের থান্টলাং শহরে একটি হেলিকপ্টারে ড্রোন হামলার ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম The Irrawaddy(Eng)-র টুইটার অ্যাকাউন্টে চলতি বছরের গত ০৮ মার্চ  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে প্রকাশিত একটি ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Twitter 

ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা যায়, এটি গত ০৩ মার্চ মিয়ানমারের থান্টলাং শহরে একটি হেলিকপ্টারে চীন ন্যাশনাল আর্মির ড্রোন হামলার পর ঐ হেলিকপ্টারের উড়ে যাওয়ার ভিডিও।

এই ভিডিওটির সঙ্গে বান্দরবানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও, Asia News নামের একটি অনলাইন পোর্টালের ওয়েবসাইটে গত ১০ মার্চ ‘At least one airstrike a day in Chin state since the start of 2023‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Asia News

উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির একটি অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিবেদনটির বিস্তারিত বিবরণী থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মিয়ানমারের থান্টলাং শহরের।

পরবর্তীতে এই সম্পর্কিত অনুসন্ধানে মূলধারার কোনো গণমাধ্যম ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশের কোথাও সম্প্রতি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে হামলার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটি বান্দরবানের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কেএনএফের হামলার কোনো ঘটনার নয়।

মূলত, গত ০৩ মার্চ মিয়ানমারের থান্টলাং শহরে একটি হেলিকপ্টারে চীন ন্যাশনাল আর্মি কর্তৃক ড্রোন হামলার দাবি করা হয়। পরবর্তীতে ঐ হেলিকপ্টার উড়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ঐ ভিডিওকেই পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে গুলি করার পরের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে কেনএনএফ সন্ত্রাসীদের হামলায় ২ সেনা সদস্য নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

Screenshot: Prothom Alo

উল্লেখ্য, পূর্বেও কেএনএফ ওর ওপর যৌথবাহিনীর হামলার দাবিতে মিয়ানমারের ভিডিও প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, মিয়ানমারের থান্টলাং শহরে হেলিকপ্টারে ড্রোন হামলার একটি ভিডিওকে বান্দরনবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কেএনএফ এর হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img