গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে বিগত সরকারের গোপন বন্দিশালা কথিত ‘আয়নাঘর’ নিয়ে দেশব্যাপী নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির মুক্তির সংবাদও এসেছে গণমাধ্যমে। এরই প্রেক্ষিতে ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে এসে বাবা-ছেলের কান্নার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুক পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) টর্চার সেল কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে বের হয়ে বাবা-ছেলের কান্নার দৃশ্যের নয় বরং এটি ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া নারীর বিচার পেয়ে বাবা-ছেলের আবেগঘন মূহুর্তের ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওর কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Md Amit Hasan নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ আগস্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
মো. অমিত হাসান উক্ত পোস্টে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম নামক ব্যক্তিকে ট্যাগ করে জানান, এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার না। আমার স্কুলের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম এর মা রংপুর মেডিকেল কলেজে ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। পরবর্তীতে অনেকবার আন্দোলন করার পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস মেডিকেল কর্তৃপক্ষ পরিচালকসহ দোষীদের পদত্যাগ এবং শাস্তির আওতায় নিয়েছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন আজকে রাতের মধ্যেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আর এই আবেগঘন মূহুর্তে বাবা ও ছেলে কান্না করেন।
গত ১২ আগস্ট আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার নিজস্ব পেজের একটি ভিডিও (আর্কাইভ) শেয়ার করে লিখেন, “ভিডিও তে আমি আর আমার বাবা। আমি অন্যায় এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেছি। একা সম্ভব ছিল না। যারা আমার পাশে ছিলেন সবার কাছে আমি ও আমার পরিবার সারাজীবন ঋণী থাকবো। আল্লাহ সবাই কে ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক। সবাই আমার মায়ের জন্যে দোয়া করবেন।”
এছাড়া, আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম তার নিজস্ব ফেসবুকে পেজে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) প্রকাশ করে নিশ্চিত করেন, তিনি ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে আসেননি। বাবার সাথে তার আলিঙ্গনের ভিডিওটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় কিছুদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে গত ১০ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে ফাতেমা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এর বিচার দাবিতে কর্মসূচী পালন করেন।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) টর্চাল সেল কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে এসে বাবা-ছেলের কান্নার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Md Amit Hasan – Facebook Post
- Abdullah Al Maruf Jium – Facebook Post
- Mr. Strawberry – Facebook Post