সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে থানাহাজতে একটি শিশুর ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বিশ্ব মানবতা আজ চরম বিপর্যয়ে! আওয়ামী লীগ করার অপরাধে মায়ের সাথে এই ছোট্ট অবুঝ শিশুর ঠাঁই হলো কারাগারে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশুর থানাহাজতে থাকার প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০১৫ সালের প্রায় ৯ বছর পুরোনো এক ঘটনার ছবি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

“১১ মাসের শিশুর ১৯ ঘণ্টা হাজতবাস” শীর্ষক শিরোনামের উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায় এবং ছবির বর্ণনায় লেখা হয়, “মহেশপুর থানাহাজতে শিশু রয়েল”। ছবিটির ঘটনার বিষয়ে উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “[থানাহাজতে প্রদর্শিত শিশু] রয়েলের বয়স ১১ মাস। বুধবার [২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর] রাতে তার বাবাকে [রাজু আহম্মদ] ধরতে গিয়েছিল পুলিশ। না পেয়ে ধরে নিয়ে আসে তার মাকে, সঙ্গে তাকেও। এরপর মা ও শিশুপুত্রকে ১৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় থানাহাজতে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার।” উক্ত প্রতিবেদনটিতে রাজুর বিরুদ্ধে থাকা অপরাধ বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, প্রচারিত উক্ত ছবির সংযুক্তিসহ সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
“মা-শিশুকে নিরাপত্তার জন্য থানায় নেওয়া হয়: পুলিশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, “মহেশপুর থানার ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, একদল লোক আব্দুল আজিজের বাড়িতে হামলা করায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। শুধু মাকে আনা হলে শিশুটিকে তো একা রেখে আসা যায় না, তাই তাকেও নিয়ে আসা হয় বলে জানান তিনি। ওসি বলেন, শিশু ও মাকে হাজতে রাখা হয়নি, গ্রিল দেওয়া বারান্দায় রাখা হয়েছিল। পরদিন সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ছবিটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলের নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের ছবি।
সুতরাং, থানাহাজতে ধারণকৃত শিশুর প্রায় ৯ বছর পুরোনো ছবি সাম্প্রতিক সময়ে বাবা আওয়ামী লীগ কর্মী হওয়ায় শিশু কারাগারে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – ১১ মাসের শিশুর ১৯ ঘণ্টা হাজতবাস
- Bdnews24 – মা-শিশুকে নিরাপত্তার জন্য থানায় নেওয়া হয়: পুলিশ