পিজি হাসপাতালের পূর্ণরূপ পাকিস্তান জেনারেল হাসপাতাল নয়

সম্প্রতি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-কে অনেকে এখনও পিজি হাসপাতাল ডাকে, যার পূর্ণরূপ ‘Pakistan General হসপিটাল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা পিজি হাসপাতালের পূর্ণরূপ ‘Pakistan General হসপিটাল নয় বরং এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ

অনুসন্ধানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম প্রধান মেডিকেল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে এটিকে তৎকালীন সরকার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে এবং দেশের উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এটির সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে।

Screenshot from bsmmu website

পরবর্তীতে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল “হোটেল শাহবাগ থেকে বিএসএমএমইউ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from prothomalo website

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), আগে এর নাম ছিল ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ, সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল।

Screenshot from prothomalo website

প্রতিবেদনটিতে ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ এবং ইফতিখার-উল-আউয়াল সম্পাদিত ঐতিহাসিক ঢাকা মহানগরী: বিবর্তন ও সম্ভাবনা বইটিকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ১৯৬৫ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েটে মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চের জন্য শাহবাগে জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৬৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনজন সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপদেষ্টা স্যার জেমস ডি এস কেমেরন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক এ কে এস আহম্মদকে নিয়ে এই ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। পরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠিত স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের সঙ্গে এটি যুক্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অনুরোধে তৎকালীন মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী মুসলিম লীগের পরিত্যক্ত ভবনটি (ব্লক এ) পোস্টগ্র্যাজুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে এখানেই পিজি হাসপাতালের কার্যক্রম চলে। তবে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নাম দেওয়া হয়।

মূলত, বর্তমানে যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), এটি এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত। যার পূর্ণরূপ ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ। তবে এই তথ্যটিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাকিস্তান জেনারেল হাসপাতাল নামে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা পিজি হাসপাতালের পূর্ণরূপ ‘Pakistan General Hospital নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img