বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব

সম্প্রতি, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন শীর্ষক দাবিতে  শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাপশনে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। 

খালেদা জিয়া

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ) এবং পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মারা যাননি বরং তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোলা একটি পুরোনো ছবি জুড়ে দিয়েকোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে প্রদর্শিত খালেদা জিয়ার ছবিটির উৎস যাচাইয়ের জন্য রিভার্স সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ০৯ মে “২৭ দিন পর করোনামুক্ত খালেদা জিয়াশীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner

এছাড়া, ২০২১ সালে একই বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এই ছবিটি পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঢাকা ট্রিবিউন

অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০২১ সালে খালেদা করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময়ে চিকিৎসাধী অবস্থান তোলা ছবি। উক্ত ছবির সাথে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং এক্স (সাবেক টুইটার) পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে, বিএনপির ওয়েবসাইট, অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং এক্সে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশীয় গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক ‘যুগান্তর’ এ গত ২২ সেপ্টেম্বর “নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে বেগম জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করে কিছুক্ষণ পর আবারও কেবিনে নেওয়া হয়। এরপর বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা যাননি। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন।

মূলত, গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে ১৮ তারিখে আবার কেবিনে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে, গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে বেগম জিয়ার শ্বাসকষ্টের কারণে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করে কিছুক্ষণ পর আবারও কেবিনে নেওয়া হলে বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তবে, সম্প্রতি খালেদা জিয়া মারা গিয়েছেন দাবিতে তাঁর ২০২১ সালে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মূহুর্তে তোলা পুরোনো ছবি সংযুক্ত করে তৈরি একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে প্রথম আলো’র সংবাদ বিকৃত করে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হলে বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মারা গেছেন দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img