প্রথম আলো’র সংবাদ বিকৃত করে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব প্রচার 

সম্প্রতি, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন‘ শীর্ষক দাবিতে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের আদলে তৈরি একটি স্ত্রিনশট ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

খালেদা জিয়ার

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়া একই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত স্ক্রিনশটটি স্টোরিতেও প্রচার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের(বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা যাননি এবং প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটেও এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ‘খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হলো’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো’র ওয়েবসােইটে প্রকাশিত  একটি সংবাদের শিরোনাম বিকৃত করে এই ভুয়া তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত স্ক্রিনশটটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের আদলে তৈরি এই স্ক্রিনশটটিতে সংবাদ প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে স্ক্রিনশটে থাকা তারিখ এবং প্রথমআলোর লোগোর সূত্র ধরে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনামে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একই দিনে ‘খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হলো’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Prothomalo

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত স্ক্রিনশটের সংবাদের সাথে উক্ত সংবাদের প্রতিবেদকের ক্রেডিট লাইন, ফিচারে থাকা খালেদা জিয়ার ছবি  এবং ছবির নিচে উল্লিখিত ক্যাপশনের হুবহু মিল রয়েছে। 

Screenshot Comparison by Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাঁকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে,খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে কোনো গণমাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, খালেদা জিয়ার পরিবার কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরণের কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

তবে অনুসন্ধানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিষয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটমুক্ত নয় দাবি করে তাঁকে (খালেদা) বিদেশে চিকিৎসা করানোর স্বার্থে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

অর্থাৎ, প্রথম আলোতে প্রকাশিত খালেদা জিয়ার সিসিইউতে নেওয়ার সংবাদটির শিরোনাম বিকৃত করে উক্ত দাবিতে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে। 

মূলত, গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এ বিষয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন পোর্টালে ‘খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হলো’ শীর্ষক শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত সংবাদের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এর শিরোনাম বিকৃতের মাধ্যমে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর সংবাদ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

সুতরাং, মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোকে উদ্ধৃত করে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং ‍উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ত্রিনশটটি এডিটেড বা বিকৃত। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img