বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি “অবশেষে পল্টনেই হবে বিএনপির মহাসমাবেশ। সরকার চেয়েছিল সরোয়ারদী উদ্যানে, অবশেষে নতজানু হয়ে সরকার পল্টনে দিতে বাধ্য হয়েছে, সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। ইনশাআল্লাহ বিএনপির বিজয় হবে।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং বিএনপিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীর গোলাপবাগে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশের মূলধারার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৭ ডিসেম্বর “বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বিএনপি ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চায়। নয়াপল্টনে ১০ হাজারের বেশি লোকের জায়গা হবে না। জনদুর্ভোগ ও বিশৃঙ্খলা পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিকল্প জায়গা হিসেবে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপিকে চারটি বিকল্প জায়গার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

পাশাপাশি একইদিনে আরেকটি জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠে “আগের সিদ্ধান্তেই ডিএমপি, নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ নয়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খানকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।

একই বিষয়ে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত ৮ ডিসেম্বর “শনিবারের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি  প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপি তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের সড়ক ব্যবহারের দাবি থেকে থেকে সরে এসেছে। 

ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সাথে দলটির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে তারা নয়াপল্টনের পরিবর্তে ঢাকার কমলাপুরে স্টেডিয়ামে সমাবেশের প্রস্তাব দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুরের বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশের প্রস্তাব এসেছে।

পরবর্তীতে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল ‘Bangla Tribune’ এ গত ৯ ডিসেম্বর “১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর (শনিবার) ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সায়েদাবাদ এলাকার গোলাপবাগ মাঠে করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান তিনি।

মূলধারার আরেকটি অনলাইন পোর্টাল ‘bdnews24’ এ ১০ ডিসেম্বর “শেষতক সমাবেশ গড়াল গোলাপবাগ মাঠে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, অনুমতি পাওয়ার পরপরই গোলাপবাগ মাঠ বিএনপিকর্মীদের জমায়েতে পূর্ণ হয়ে যায়। একইসাথে শুরু হয় মঞ্চ তৈরির কাজও। 

এছাড়া এই প্রতিবেদন লেখার সময় শনিবার (১০ ডিসেম্বর) গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হওয়ার তথ্যও গণমাধ্যম সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।

মূলত, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলের নেতা-কর্মীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ৯টি বিভাগীয় (সাংগঠনিক বিভাগসহ) গণসমাবেশের আয়োজন করেছে। সর্বশেষ ঢাকায়, ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করে দলটি।  এ সমাবেশের স্থান নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশটি করতে চাইলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে একাধিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, তাদেরকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি বরং তাদেরকে চারটি বিকল্প জায়গার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে ডিএমপি ও বিএনপির দীর্ঘ মতবিরোধ শেষে অবশেষে দলটিকে সায়েদাবাদ এলাকার গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার  অনুমতি দেওয়া হয়।

সুতরাং, ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়; এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img