বিএসএফের কুকুর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশী কুকুরকে সন্দেহ শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি, “সীমান্তে বিএসএফের গোয়েন্দা কুকুর অন্তঃসত্ত্বা, বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ!” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

যা দাবি করা হচ্ছে

অ্যাপভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘Ridmik News’ এ গত ১ জানুয়ারী “সীমান্তে বিএসএফের গোয়েন্দা কুকুর অন্তঃসত্ত্বা, বাংলাদেশি কুকুরকে সন্দেহ!” শিরোনামে (আর্কাইভ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “শুরু হয়েছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত। এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ বিএসএফের ১৭০ ব্যাটেলিয়নে। ঘটনাটি বাংলাদেশ সীমান্তে হওয়ায় আরো সংশয় বেড়ে গেছে। সন্দেহের তীর গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশি কুকুরের দিকে।”

রিদমিকের ফেসবুক পেজে উক্ত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

রিদমিক নিউজের বরাতে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএসএফের কুকুর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশী কুকুরকে সন্দেহ করার দাবিটি সঠিক নয় বরং এই ঘটনায় উক্ত কুকুরকে দেখভাল করা হ্যান্ডলারের গাফিলতি থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

কিওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক ‘ইনকিলাব’ এর ওয়েবসাইটে গত ১ জানুয়ারী “বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের কুকুর অন্তঃসত্ত্বা, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মেঘালয়ের তুরায় বাংলাদেশ সীমান্তের ছাউনিতে এক স্নিফার ডগ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তিন তিনটি শাবকেরও জন্ম দিয়েছে সে। এটি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। কিভাবে অন্তঃসত্ত্বা হলো বিএসএফের ওই স্নিফার ডগ, তা জানতে তৈরি হয়েছে ‘কোর্ট অফ এনকোয়্যারি’। 

নিয়ম অনুযায়ী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা গোয়েন্দা বিভাগের কোনো কুকুর যেকোনো সময় অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে না। কাজের স্বার্থে তাদের সেভাবেই রাখা হয়। প্রতি কুকুর পিছু একটি করে হ্যান্ডলার থাকেন। তারাই কুকুরদের চোখে চোখে রাখেন।  কিন্তু ল্যালসি আচমকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় এখন তার হ্যান্ডলারকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, তার গাফিলতির কারণেই ল্যালসি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে।

এ বিষয়ে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (জনকণ্ঠ, দৈনিক আমাদের সময়, ঢাকা ট্রিবিউন)  একই তথ্য পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

এ বিষয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং এনডিটিভির প্রতিবেদনেও একই তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলোতে উক্ত ঘটনায় বাংলাদেশী কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Screenshot source: Times of India

অর্থাৎ, কুকুরের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনাটির সাথে বাংলাদেশী কুকুরকে সন্দেহ করার মনগড়া একটি তথ্য বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।  

মূলত, সম্প্রতি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মেঘালয়ের তুরায় বাংলাদেশ সীমান্তের ছাউনিতে এক স্নিফার ডগ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার খবর প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। এ ধরনের কুকুরদের দেখভাল করার জন্য প্রতি কুকুর পিছু একটি করে হ্যান্ডলার থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কোনো কুকুর যেকোনো সময় অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে না। কিন্তু উক্ত কুকুর আচমকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় কুকুরটির হ্যান্ডলারের গাফিলতি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশের অ্যাপভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘Ridmik News’ তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে “সন্দেহের তীর গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশি কুকুরের দিকে।” শীর্ষক তথ্য যোগ করে প্রচার করছে। অথচ, এ ধরনের তথ্য ভারতীয় বা দেশীয় মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ভারতে বিএসএফের কুকুর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশী কুকুরকে সন্দেহ করা হচ্ছে শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যমের বরাতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img