সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পত্রিকায় প্রকাশিত দুইটি সংবাদের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে
- ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়
- বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
উক্ত দুই সংবাদের ছবি সম্বলিত ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সময়ে কেবল ইকোনমিস্টের সূত্রে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় এমন দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
২০২২ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্টের বরাতে দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়া ও বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের দাবিতে প্রচারিত সংবাদের ছবি দুইটিই পুরোনো। এর মধ্যে দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর। অপরদিকে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের সংবাদটি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির।
দাবি ১: ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্যা ইকোনমিস্টের বরাতে দেশের ৮০ ভাগ মানুষের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত দাবির সূত্র হিসেবে একটি সংবাদের প্রতিবেদনের ছবি প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি কবে, কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এমন কোনো তথ্য পোস্টগুলো থেকে জানা যায় না।
তবে এ নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে ফেসবুকের মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায়, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর, তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়।
অনুসন্ধানে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর ফেসবুকে Qawmi Online Movement/কওমী অনলাইন আন্দোলন নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘দৈনিক আমার দেশের আজকের শিরোনাম, আজঃঢাকা, শনিবার, ২৩নভেম্বর ২০১৩, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২০, ১৮ মহররম ১৪৩৫ হিজরী‘ শীর্ষক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টটিতে আলোচিত দাবিটির ন্যায় হুবহু একটি শিরোনাম খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টটি ছাড়াও আরও একাধিক ফেসবুক পোস্টে একইদিনে আমার দেশ পত্রিকার ওয়েবসাইট প্রিভিউতে আলোচিত শিরোনামটি খুঁজে পাওয়া যায়। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে আমার দেশ পত্রিকাটি বন্ধ থাকায় ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যায়নি। তবে সার্বিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, আলোচিত সংবাদটি ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল।
দ্যা ইকোনমিস্ট এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল?
এ নিয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত সংবাদটিতে বিদ্যমান প্রতিবেদনের অংশটুকু পড়ে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইকোনমিস্টের অনলাইন সংস্করণে ‘বাংলাদেশি পলিটিক্স;ট্রেঞ্চ ওয়ারফেয়ার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জনমত জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ নির্দলীয় সরকারের পক্ষে।
পরবর্তীতে এসব সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দ্যা ইকোনমিস্টে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে করা এই প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলা হয়েছে দেশের চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এছাড়া এই জনমত জরিপ কারা করেছে এ সংক্রান্তও কোনো তথ্যও প্রতিবেদনটিতে নেই।
অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইংরেজি সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্ট।
সে প্রতিবেদনের একটি অংশে বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে সংবাদপত্রটি জানায়, বাংলাদেশের চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। ইকোনমিস্টে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২৩ নভেম্বর তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১০ বছর পুরোনো এই প্রতিবেদনটিই নতুন করে আবার প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটির সাথে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ২০১৩ সালের প্রায় দশ বছরের পুরোনো একটি প্রতিবেদনের সাথে চলতি বছরের জানুয়ারির একটি প্রতিবেদন অপ্রাসঙ্গিকভাবে মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে সংবাদপত্রটি জানায়, বাংলাদেশের তৎকালীন চার-পঞ্চমাংশ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনের সূত্রে একই বছরের ২৩ নভেম্বর ‘ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ। বর্তমানে এই প্রতিবেদনটিই ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের সাথে মিলিয়ে আবার কখনো না মিলিয়েই কেবল এককভাবে নতুনভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইকোনমিস্টে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় দাবিতে প্রায় দশ বছরের পুরোনো একটি তথ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেদনটির সময় উল্লেখ না করেই প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Qawmi Online Movement/কওমী অনলাইন আন্দোলন: ‘দৈনিক আমার দেশের আজকের শিরোনাম, আজঃঢাকা, শনিবার, ২৩নভেম্বর ২০১৩, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২০, ১৮ মহররম ১৪৩৫ হিজরী‘
- Daily Inqilab: বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
- The Economist: Bangladeshi politics, Trench warfare