গারো নারীকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বা অপহরণের দাবিটি সঠিক নয়

সম্প্রতি এক আহত নারীর দুটি ছবি যুক্ত করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী বৌদ্ধ নারীদের নির্যাতন করছে বলে একটি দাবি এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচার করা হয়েছে। ভয়েস অব বাংলাদেশ হিন্দুস নামের এক্স আইডিতে গত ১২ জানুয়ারি এ দাবি সম্বলিত একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষ লাইক দিয়েছেন। 

গারো নারী

একই দাবিতে ভারতের এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে একই ছবি গত বছরের আগস্টেও প্রচার হয়েছে। সেসময়ের কিছু পোস্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক অপরিচিত গারো মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে শীর্ষক দাবির উল্লেখ পাওয়া যায়। 

এমন দাবির কিছু পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আদিবাসী/উপজাতি নারীকে নির্যাতন কিংবা অপহরণ শীর্ষক দাবিগুলি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাজেক ঘুরতে যাওয়া এক আদিবাসী/উপজাতি নারীকে উদ্ধার করে নিরাপদে স্থানে নেয় সেনাবাহিনী। এছাড়া ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং এটি গত বছরের আগস্টের ঘটনা।

প্রাথমিকভাবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে একজন আহত নারীকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তার পাশে এলাকার নারী ও শিশুদের উপস্থিতি রয়েছে। সেনাবাহিনীকে ভিডিওতে আহত নারীকে দৃশ্যত উদ্ধার করে গাড়িতে তুলতে দেখা যায়। স্থানীয়রা সেনাবাহিনীকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় উক্ত নারীর সাথে একই টি-শার্ট পরিহিত কয়েকজন বাঙালি যুবককে দেখা যায়।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার গত বছরের (২০২৪) আগস্টের বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পায়, যেগুলোতে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও প্রচার করে সেনাবাহিনী অপরিচিত গারো মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। অনুসন্ধানে ঘটনাটি গত বছরের ১৬ আগস্ট ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘কালবেলা খাগড়াছড়ি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত বছরের ১৬ আগস্টের একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টটি সেনাবাহিনী গারো মেয়েকে অপহরণ করে করে নিয়ে গেছে এই দাবির বিপরীতে করা হয়। পোস্টটিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহরণ দাবিকে গুজব বলে উল্লেখ করে লেখা হয়, “এটা মূলত আজকের ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে সাজেক যাওয়ার পথে মাচাং এলাকায়, মেয়েটি একজন আধিবাসী গারো মেয়ে.. স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মুসলিম ছেলের সাথে নাকি সাজেক যাচ্ছিল, পরে গ্রামবাসীরা দেখে মেয়েটিকে ধরে। পরবর্তীতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে একপ্রকার উলঙ্গ অবস্থায় সেনাবাহিনী উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।”

অর্থাৎ, রিউমর স্ক্যানার ঘটনাটি নিয়ে ঘটনার দিনেই ফেসবুকে দুই ধরনের বর্ণনা প্রচার হতে দেখতে পায়। 

এক. সেনাবাহিনী এক গারো নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। দুই. গারো তরুণী বাঙালি তরুণের সাথে সাজেকে ভ্রমণে যাওয়ায় স্থানীয়রা তাকে আটক করে মারধর করে, এ সময় সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

দুটি বর্ণনা সামনে রেখে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে সেদিন আসলে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। এ পর্যায়ে অনুসন্ধানে New Ton Chakma নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘটনার দিনের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে স্থানীয়দের সেনাবাহিনীর পথ রোধ করে বসে থাকার কয়েকটি ছবি যুক্ত করে লেখা হয়েছে— “সাজেক পর্যটনে কুকাম করার জন্য একদল বাঙালি ছেলে এক গাড়ো মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার সময়, মাচালং ব্রিজপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সেই মেয়েটিকে নিরাপদে পরিবারের নিকট পোঁছে দেওয়ার জন্য মাচালং এলাকার জনগণ সেই মেয়েটিকে আটকায়, পরে সেনাবাহিনী এসে জনসাধারণের কাছ থেকে মেয়েটিকে জোর করে কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে, মাচালং এলাকার জনগন অবরোধ পালন করছে। এলাকার জনগন বলছে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে মেয়েটি নিরাপদ নয়, তারা মেয়েটিকে জনসাধারণের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান। তবে মেয়েটির ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি।”

একই দিনে আরেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে একটি পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে পথ অবরোধ করে থাকার একটি ভিডিও যুক্ত করে লেখা হয়েছে- “সমতল থেকে এক গারো মহিলা বাঙ্গালি ছেলের সাথে সাজেক পর্যটনে গেলে মাচালং এলাকার স্থানীয় জনসাধারণ মেয়েটিক আটকায়, আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এসে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়। মেয়েটিকে ফিরে পেতে স্থানীয় জনসাধারণ রাস্তা আটকে দেয়।”

এই পোস্ট দুটির তথ্যের সাথে উপরের দ্বিতীয় বর্ণনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জয়া রানী ত্রিপুরা নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি এই ভিডিওটি যুক্ত করে লিখেন, “আদিবাসী মেয়ে বাঙালি বন্ধু’র সাথে সাজেক যাওয়ার পথে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণ। সেনাবাহিনী মেয়েটি-কে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কিন্তু- কেন পাহাড়ি মেয়েরা স্বাধীনতা পায় না? পাহাড়ি নারীদের জিম্মি করে নির্যাতন করা বন্ধ হবে কবে?আমরা পাহাড়ি নারী, আমাদের কি স্বাধীন হবে না?উপজাতি চাই না!আদিবাসী চাই না! বাঙালি হতে চাই না! আমরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই।”

পরবর্তীতে উক্ত ঘটনা নিয়ে ১৭ আগস্ট আব্দুল জব্বার সোহাগ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টে উক্ত ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়। পোস্টে লেখা হয়, “১৫ই আগস্ট আমাদের একটা ট্রাভেল গ্রুপ ৪২ জন গেস্ট নিয়ে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সকালবেলা আমরা নকশীপল্লী রেস্টুরেন্ট থেকে  নাস্তা শেষ করে চাঁদের গাড়ি করে বাগাইহাটের আর্মি স্কুটে উদ্দেশ্যে রওনা হই। ১০:৩০ মিনিটে বাগাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে সাজেকের দিকে যাওয়ার সময়, মাচালং আর্মি ক্যাম্প এর ৩/৪ কিলোমিটার পরে হঠাৎ করে একটা মোটরসাইকেল আমাদের চান্দের গাড়ি ড্রাইভারকে ইশারা করে গাড়ি থামাতে বলে। আমাদের ড্রাইভার গাড়িটি থামিয়ে দেয়। মোটরসাইকেল থাকা ২ জন ছেলে আমাদেরকে বলে যে এখানে একজন উপজাতি মেয়ে আছে। তখন আমাদের একজন প্রতিনিধি বলে, ভাইয়া উনি ঢাকা থেকে আসছে আমাদের গ্রুপের সাথে অনলাইনে বুকিং করে, উনার গ্রামের বাড়ি হচ্ছে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট এবং উনি থাকে ঢাকাতে, ওনারা দুইজন একসাথে আসছে একজন বাঙালি, আরেকজন হচ্ছে গারো , উনারা একই সাথে পড়াশোনা করে ঢাকাতে, এবং উনারা ঢাকাতে একই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছে। এ সব বলে আমরা উনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি অনেকক্ষণ যাবৎ কিন্তু ওইখানকার উপজাতি যারা ছিলেন তারা কোনভাবেই এটা মেনে নিতে পারছে না, উনারা একটাই বলতেছে যে আমাদের মেয়ে আমাদেরকে দিয়ে দাও, তোমরা তোমাদের মত করে চলে যাও, এমনকি কেউ কেউ বলতেছে ওকে আমার লাগবে, আবার কেউ বলতেছে ওর আজকে খবর আছে, আবার কেউ বলতেছে, ওর এনআইডি কার্ড দেখাও, তারপর আমরা ওনাদেরকে এনআইডি কার্ড দেখানো সত্ত্বেও উনি বলতেছে যে ওই মেয়েটাকে আমাদেরকে দিয়ে দাও, আবার কেউ কেউ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, এবং উনারা লাঠি, বাঁশ ধারালো পাহাড়িদের অস্ত্র নিয়ে বের হয়। পাহাড়িদের এক ছেলে গারো মেয়েটাকে এবং সাথে থাকা বাঙালি মেয়েটাসহ দুজনকে গায়ে থাকা ওড়না ধরে গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করে, আমরা বাধা দিলে আমাদের মারধর করে। এভাবে চলতে থাকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আমাদের উপর পাহাড়িদের হামলা। কিছুক্ষণের মধ্যে সাজেক থেকে একটি আর্মি স্কট এর গাড়ি সামনে এসে হাজির হয়, আমরা একজন প্রতিনিধি উনাদের কে থামতে বলেন এবং  আমাদেরকে হেল্প করে, উনারা সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং এর মধ্যে যারা আমাদের উপর হামলা চালাইছে একের পর এক ছন্নবিচ্ছন্ন হয়ে আলাদা হয়ে যায়। শুধু যে উপজাতি ছেলেটা  আমাদের গাড়িটা দাঁড়াতে বলে, তাকে আমরা সেনাবাহিনীকে দেখায়ে দেই। তারপর সেনাবাহিনী ভাইয়েরা ওনাকে বলে যে তুমি এদিকে আসো কি হইছে কেনো তুমি গাড়িটাকে থামাতে বললে, কিন্তু উনি সামনে আসতে চায়নি, তারপর আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে আমরা পুরো ঘটনাটা বলি যে এই অবস্থা হয়েছে আমাদের সাথে, তারপর ওই ছেলেটাকে সেনাবাহিনী বলে যে গাড়ির সামনে এসে স্যারের সাথে কথা বল কি হইছে ঘটনা। উনি আসতে চান না এবং ওনার সাথে উনার এলাকার গ্রামবাসী উনাকে সেনাবাহিনীদের সাথে কথা বলতে দিচ্ছে না এবং উনাকে টেনে  নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ভিতরে।

সেনাবাহিনী ভাইরা বলতেছে তুমি কথা শেষ করে তারপরে যাও, কিছুক্ষণ পরে উপজাতি ছেলেটা  অভিনয় শুরু করে যে সে সেন্সলেস হয়ে গেছে। তারপর ওইখানকার উপজাতি যারা ছিল তারা উনাদের ওই উপজাতি ছেলেকে নিয়ে বলে যে মেরে ফেললো রে মেরে ফেলল। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম একের পর এক চান্দের গাড়ি করে উপজাতি মহিলারা আসতে শুরু করে। সবার একটাই কথা  মেয়েটাকে আমাদের হাতে তুলে দাও, তারপর সেনাবাহিনী ভাইরা বলে যে দেখতেছি কি হয়েছে। আমরা অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করি ,তারপরও উপজাতিরা বুঝছে না। আমাদের উপর এবং সেনাবাহিনীর উপরে আবারো লাঠিসোটা দিয়ে হামলা করে, তারপর আমাদের সাথে থাকা গারো মেয়ে এবং আরও তিনটা মেয়ে ছিল সবাইকে আমরা ঘেরাও করি এবং সেনাবাহিনী আমাদেরকে ঘেরাও করে রাখে যেন আমাদের উপরে কেউ হামলা না করতে পারে। এর মাঝে আমাদের উপরে লাঠি সোটা দিয়ে আঘাত করে এবং সেনাবাহিনী ভাইদের উপরও আঘাত করে তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে, আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আমাদের ওই গারো মেয়েটাকে উঠিয়ে দিব। এর মাঝে এক থেকে দেড়শ উপজাতি মহিলা এসে আমাদের পায়ের ফাঁক  দিয়ে মেয়েটাকে টেনে টেনে নিয়ে, মারধর শুরু করে এবং অস্বাভাবিক নির্যাতন চালায় এবং তাকে আধা উলঙ্গ করে ফেলে। এর মাঝে গারো মেয়েটি সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপর আমরা বলি যে মেয়েটা মরে গেছে মনে হয় এই বলার সাথে সাথে উপজাতিরা ছেড়ে দেয়। সাথে সাথে আমরা এবং সেনাবাহিনী সহ গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করলেও পিছন থেকে আমাদের উপর আবারও হামলা চালায়। এর মাঝে গারো মেয়েটাকে গাড়িতে উঠানোর সময় মেয়েটাকে আবার গাড়ি থেকে ফেলে দেয় নিচে। তারপর আবার আমরা নিজেরা চেষ্টা করি গাড়িতে ওঠানোর জন্য, তখনো আমাদের উপর ও সেনাবাহিনী ভাইদের উপরে লাঠিসোটা দিয়ে হামলা শুরু করে। অনেক চেষ্টার পরে আমরা আবার গাড়িতে তুলে গাড়ি টান দেওয়ার সাথে সাথে আমাদের দুইজন হোস্ট এবং একজন গেস্ট কে টেনে নিচে ফেলে দেয়। এর মাঝে আমরা দুই-তিন জন মেয়েটাকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে আসার সময় সামনে একটা বাজার পড়ে। উপজাতিদের সেখানেও আমাদের উপরে ১০০ থেকে ২০০ লোক হামলা চালায় গাড়ি আটকায় রেখে, সেনাবাহিনী গাড়ি এবং আমাদের উপরে আবারো হামলা চালায় , সেখান থেকে কোন রকম আমরা মাচালং আর্মি ক্যাম্পে ফিরে আসি, এর মাঝে মাচালং আর্মি ক্যাম্পের উর্ধ্বতম কর্মকর্তা ও ওইখানে গিয়ে হাজির হয় উনার গাড়িও আটকে দেয় উপজাতিরা,এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের, একজন মেয়ে গাইড এবং মেয়ে গেস্ট এবং দুইজন ছেলে গেস্ট আরো দুইজন গাইড গুরুতর ভাবে আহত হয়,এর মাঝে দুইজনের অবস্থা খুবই খারাপ ছি। এর মাঝে একটা কথা না বললেই নয়, আমরা ট্রাভেল গ্রুপ রা যাদের উপরে নির্ভরশীল,,বিশেষ করে চাঁদের গাড়ির ড্রাইভারা। তারা আমাদের পিছনে তাদেরকে লেলিয়ে দেয়, এটা কখনোই আমরা আশা করি না। কারণ আমরা সারা বছর গেস্ট নিয়ে চাঁদের গাড়ি করে যাই সাজেকে, উনারা আমাদেরকে এই বিষয়ে সাহায্য করবে, কিন্তু তা না করে উল্টো আদিবাসীদেরকে গোপনে ইনফর্ম করে আমাদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।”

এই বর্ণনার সাথে ভিডিওর দৃশ্যত ঘটনারও মিল পাওয়া যায়। ভিডিওতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া আহত গারো নারীটির পাশে কয়েকজন বাঙালি যুবককে দেখা যায়, যারা একই টি-শার্ট পরে আছে। তারা অজ্ঞান হয়ে যাওযা উক্ত গারো মেয়েকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং উপরের বর্ণনার মতো কাছাকাছি দৃশ্য দেখা যায়। 

বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানার উক্ত ভ্রমণ দলের সাথে ছিলেন এমন একজনের সাথে কথা বলেছে এবং তিনি রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনী গারো মেয়েটিকে নির্যাতন করেনি বরং সেনাবাহিনীর সহায়তায় গারো মেয়েটিকে উদ্ধার বা হেফাজত করা গিয়েছিল।

পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার উপর প্রকাশিত মূল ধারার গণমাধ্যম নিউজ২৪ এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “রাঙামাটির সাজেকে যাওয়ার পথে মাচালং ব্রিজ পাড়া এলাকায় নারী পর্যটককে অপহরণের চেষ্টা করেছে একদল দুর্বৃত্ত। তবে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় রক্ষা পেয়েছেন ওই পর্যটক। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন পর্যটক দলটির আরও চার সদস্য। অপহরণ চেষ্টার শিকার পর্যটকের মার্লিনা রেমা। তার বাড়ি হালুয়াঘাট ময়মনসিংহ।

সূত্র জানায়, গত শুক্রবার ঢাকা থেকে আসা ৭ জন বন্ধুর সঙ্গে এই নারীও পর্যটক সাজেক ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। পথে মাচালং ব্রিজপাড়া এলাকায় কয়েকজন দুর্বৃত্তকারী তাদের গাড়ি গতিরোধ করে। এ সময় গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে ওই নারীকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।

খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাবাহিনী টহল দলের উপস্থিত দেখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় একজন দুর্বৃত্তকে সেনাবাহিনী আটক করে।এ সময় উক্ত এলাকায় উপস্থিত প্রায় ১০০-১৫০ জন গ্রামবাসী সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘেরাও করে। তারা অপহরণকারী দুর্বৃত্তকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং উদ্ধারকৃত পর্যটককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা প্রদান করে।

এ সময় গ্রামবাসী অপহরণে বাধাপ্রদানকারী আরও ৪ জন পর্যটককে মারধর করে। উত্তেজিত গ্রামবাসীর বাধা প্রদান সত্ত্বেও সেনাবাহিনী অপহরণ চেষ্টার শিকার পর্যটককে নিকটস্থ ক্যাম্পে নিরাপদে নিয়ে যেতে সমর্থ হয় এবং আহত পর্যটকদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে। অতঃপর সেই পর্যটককে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুলিশের নিকট নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃক উক্ত পর্যটককে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।”

অর্থাৎ, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, একজন প্রত্যক্ষ দর্শনার্থীর বক্তব্য সব মিলে দ্বিতীয় বর্ণনাটির সত্যতা প্রতীয়মান হয়। 

সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বৌদ্ধ বা গারো নারীকে নির্যাতন ও অপহরণের দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis 
  • Media Report on the Incident 
  • Eyewitness statement
  • Facebook posts analysis 

আরও পড়ুন

spot_img