ছবির শিশুটি আগুনে পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নয় 

- Advertisement -

গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সম্প্রতি ‘সেদিনের আগুন লাগা ট্রেনের সবচেয়ে কিউট যাত্রী’ শীর্ষক দাবিতে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১০ জানুয়ারি ‘অভিমানি জীবনের গল্প নামের’ একটি ফেসবুক পেজ থেকে এ দাবিতে প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) মাত্র ৩৭ ঘণ্টার ব্যবধানে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার রিয়্যাক্ট পড়েছে। পোস্টটিতে ১৪শ এর অধিক কমেন্ট এবং ২৯৪ বার শেয়ার করা হয়েছে।  

আগুনে পুড়ে

ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস ক্রাউট্যাঙ্গেল অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত একই ক্যাপশনে ৮৮টি পোস্ট হয়েছে এবং সবগুলো পোস্ট মিলিয়ে ৮২ হাজারেরও অধিক রিয়্যাক্ট পড়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, ফেসবুকের এই টুলস ব্যক্তিগত আইডি থেকে করা পোস্টের সংখ্যা দেখায় না এবং যেসব ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ভেরিফাইড আইডির পোস্ট দেখায় সেগুলোরও নির্দিষ্ট ফলোয়ার সংখ্যা পেরিয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ ছড়ানোর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত শিশুর ছবিটি দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোনো যাত্রীর নয় বরং অন্তত ২০২২ সালের মার্চ থেকেই এই ছবিটি ইন্টারনেটে থাকার প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া দাবিকৃত ছবির ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনেরও পার্থক্য রয়েছে।

সূত্রের সন্ধান

এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চেয়ে অসংখ্য ফ্যাক্টচেক অনুরোধ পাই আমরা। পরবর্তীতে এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। গত ০৯ জানুয়ারি রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে ‘Love You’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই ক্যাপশনে সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। গত ০৫ জানুয়ারি বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগে। অর্থাৎ ঘটনার প্রায় ৪ দিন পর উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রথম পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে কোনো তথ্যসূত্রও উল্লেখ করা হয়নি। এই দাবিতে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটিও করা হয়েছে একটি ফেসবুক পেজ থেকে, শিশুটির পরিবার বা বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকে এই তথ্য আসেনি। এমনকি বিশ্বস্ত কোনো সূত্র কিংবা গণমাধ্যমে এখন অবধি এই বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।

বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় শিশুর ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভিন্ন দুইটি ফেসবুক পেজে (,) হুবহু একই ছবি খুঁজে পাই।

পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান করে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ আরবি নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই ছবিযুক্ত একটি পোস্ট পাই আমরা। তবে উপরোক্ত কোনো পোস্টেই শিশুর পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের বিস্তারিত অনুসন্ধানেও শিশুর নাম কিংবা পরিচয় জানা যায়নি। 

Screenshot: Facebook.

ছবির শিশুর পরিচয় জানতে চেয়ে আমাদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এই শিশুর ছবিযুক্ত প্রথম পোস্টকারী আরবি নামের উক্ত ফেসবুক আইডির সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু প্রতিবেদনটি লেখা অবধি কোনো প্রত্যুত্তর আসেনি।

এছাড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে নীল রঙের দুইটি সিটের মধ্যকার ফাঁকা অংশ দিয়ে শিশুর ছবিটি তোলা হয়েছে। এই সূত্র ধরে আগাই আমরা। ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল ইউটিউবে বেনাপোল এক্সপ্রেসের একটি ভিডিও খুঁজে পাই। ভিডিওতে দুই রঙের সিট (,) দেখা যায়, যা আলোচ্য ছবিতে থাকা সিটের রঙের সাথে মিলে না। এছাড়া দাবিকৃত ছবিতে ধরার হাতল লক্ষ্য করা গেলেও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে এমন হাতল দেখা যায়নি। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় ছবিটি বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়।

Image Comparison: Rumor Scanner.

এছাড়াও গত ০৬ জানুয়ারি ডয়েচে ভেলে বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সূত্র দিয়ে জানানো হয়েছে, গত ০৫ জানুয়ারি পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে কোনো শিশু নেই।

মূলত, গত ০৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যাওয়া এ ট্রেনের ‘সবচেয়ে কিউট যাত্রী’ উল্লেখ করে একটি শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, প্রচারিত শিশুর এই ছবিটি পুরোনো। ২০২২ সালের মার্চে ফেসবুকে প্রচারিত একটি পোস্টে একই ছবি পাওয়া যায়। এছাড়া দাবিকৃত ছবির ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের পার্থক্য রয়েছে।

সুতরাং, গত ৫ জানুয়ারি পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী দাবিতে ফেসবুক থেকে সংগৃহীত একটি শিশুর পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img