বাংলাদেশ ও ভারতের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দিয়ে হিন্দুদের ওপর হামলার ভুয়া দাবি

সম্প্রতি, অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী হামলা অব্যাহত রয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দুইটি ফুটেজ দেখানো হয়েছে।

যদিও, ভিডিওটির মধ্যে স্ক্রিনে লেখা দেখা যায়, ইসলামপন্থীরা একটি মাজারে আক্রমণ করছে যা তারা ধর্মবিরোধী বলে মনে করে। 

এছাড়াও, দ্বিতীয় ফুটেজে একটি ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে বলতে দেখা যায়, মসজিদের কোরআন শরীফ জ্বলে গেছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনার নয় বরং, প্রথম ফুটেজটি শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার পীরের দরবারে হামলার ঘটনার এবং দ্বিতীয় ফুটেজটি ভারতের একটি মসজিদের ঘটনার যা আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

প্রথম ফুটেজ যাচাই

অনুসন্ধানে গত ২৮ নভেম্বর এইচ এস রিপন নামের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘জ্বলছে শেরপুর মুর্শিদ পীড়ের দরবার শরীফে হামলা আগুন ও লুটপাট।’ অর্থাৎ, এটি শেরপুরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলার ঘটনা।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীর) হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যুর জেরে আবারও হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় দরবারে হামলা করে ‌‘বিক্ষুব্ধ জনতা’।  এর আগে ২৬ নভেম্বর মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ঢাকা পোস্টের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর সকাল থেকে পীরের দরবারের বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা গাছপালা কেটে নেওয়াসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র গাড়িতে লুট করা শুরু করে দুর্বৃত্তরা। পরে দরবারের কিছু মুরিদ ও খাদেম দরবারে প্রবেশ করে দুটি ট্রাকসহ অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

দ্বিতীয় ফুটজে যাচাই

অনুসন্ধানে গত ০৮ অক্টোবর ‘Râhël Alì’ নামের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ এবং ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ভারতের ত্রিপুরার কদমতলা একটি মসজিদের ভিডিও।

এছাড়াও, ভারতের ত্রিপুরার কদমতলার উক্ত ঘটনার আরও ভিডিও দেখুন এখানে। 

গুগল ম্যাপ থেকেও জানা যায় এটি ভারতের ত্রিপুরার কদমতলা ‍বাজার মসজিদ।

সুতরাং, শেরপুরে পীরের দরবারে হামলার ঘটনাক ও ভারতের ত্রিপুরায় এক মসজিদের ঘটনারে ফুটেজ দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন শুরুতে দুইটি ফুটেজের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। তবে একটি ফুটেজ বাংলাদেশের বলে উল্লেখ করা হলেও পরবর্তীতে জানা যায়, এটি ভারতের একটি মসজিদের ঘটনা। তাই উক্ত অংশটি হালনাগাদ করা হলো। 

আরও পড়ুন

spot_img