সম্প্রতি, “সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করলো সেনাবাহিনী, ভয়ে হাসিনার নতুন সিদ্ধান্ত | Caretaker Government” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-১
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Boishakhi Tv News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর “নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া | BNP News | Morshed | 14Nov18” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক পর্যায়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-২
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, BNP Media Cell Narayanganj ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর “কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলা অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী অবরোধ বিএনপির আসন কক্সবাজার-২ মহেশখালী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মহেশখালীতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ সমর্থনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থাৎ, অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত ভিডিওতে উক্ত ফুটেজটি ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনীর গণভবন ঘেরাওয়ের সত্যতা জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব বাহিনী ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামবে। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করবে।
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে “সাঁজোয়া যান নিয়ে গণভবন ঘেরাও করলো সেনাবাহিনী, ভয়ে হাসিনার নতুন সিদ্ধান্ত” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনাবাহিনী গণভবন ঘেরাও করেছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Boishakhi Tv News: “নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া | BNP News | Morshed | 14Nov18”
- BNP Media Cell Narayanganj: “কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলা অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী অবরোধ বিএনপির আসন কক্সবাজার-২ মহেশখালী”
- কালেরকণ্ঠ: “নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে, পরিপত্র জারি”