সম্প্রতি “আর্জেন্টিনার ১০ বছরের গোল খাওয়ার রেকর্ড” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে দেখুন এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিসংখ্যানে দেখানো ১৮ টি তথ্যের মধ্যে ১৫ টি মিথ্যা ও ৩ টি তথ্য সত্য।
১৯৪৫ সালে উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের দাবি করা হয়।কিন্তু আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯৪৫ সালে আর্জেন্টিনা তিনবার উরুগুয়ের সম্মুখীন হয় এরমধ্যে দুই ম্যাচ আর্জেন্টিনা জিতে এবং এক ম্যাচ ড্র হয়। এরমধ্যে কোপা আমেরিকার ম্যাচে ১-০ গোলে এবং কোপা নিউটন ম্যাচে ৬-২ গোলে আর্জেন্টিনা জিতে। অপর ম্যাচে কোপা লিপটন ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র হয়।
সুতরাং, ১৯৪৫ সালে উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
এছাড়াও ১৯৫০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম বলিভিয়া ম্যাচে ৮-৩ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবি করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা-বলিভিয়ার সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ১৯৫০ সালে আর্জেন্টিনা-বলিভিয়ার কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় নি।
সুতরাং, ১৯৫০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম বলিভিয়া ম্যাচে ৮-৩ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
এছাড়াও, ১৯৫৪ সালে পেরু বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচে সাথে ৬-০ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবি করা হয়। তবে আর্জেন্টিনা ও পেরুর সকল ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯৫৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও পেরুর মধ্যকার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় নি।
সুতরাং, ১৯৫৪ সালে পেরু বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচে সাথে ৬-০ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
এছাড়াও, ১৯৫৮ সালে জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচে সাথে ৮-০ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবি করা হয়। তবে আর্জেন্টিনা ও জার্মানির সকল ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ জার্মানির মধ্যকার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত ম্যাচে ৩-১ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজিত হয়।
সুতরাং, ১৯৫৮ সালে জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচে সাথে ৮-০ গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচ পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৬২ সালে আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে ম্যাচে ৫-৪ গোল ব্যবধানে আর্জেন্টিনার ম্যাচ পরাজয়ের দাবি করা হয়। তবে আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের সব ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ১৯৬২ সালে এই দুই দলের মধ্যকার কোনো খেলাই অনুষ্ঠিত হয় নি।
সুতরাং, ১৯৬২ সালে আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে ম্যাচে ৫-৪ গোল ব্যবধানে আর্জেন্টিনার ম্যাচ পড়াজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়ার ম্যাচে ৫-৩ গোলে আর্জেন্টিনা হারার দাবি করা হয়। কিন্তু নাইজেরিয়ার সাথে আর্জেন্টিনার এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি। বরং ১৯৬০ সালে দু দলের মধ্যকার কোনো ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয় নি।
সুতরাং, ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়ার ম্যাচে ৫-৩ গোলে আর্জেন্টিনা হারার দাবিটি মিথ্যা।
১৯৬৪ সালে আর্জেন্টিনা বনাম ইতালির ম্যাচে ৭-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবি করা হয়। কিন্তু ইতালির সাথে আর্জেন্টিনার এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
সুতরাং, ১৯৬৪ সালে আর্জেন্টিনা বনাম ইতালির ম্যাচে ৭-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৭০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির ম্যাচে ৬-০ গোলে আর্জেন্টিনা হারার দাবি করা হয়। কিন্তু জার্মানির সাথে আর্জেন্টিনার এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
সুতরাং, ১৯৭০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির ম্যাচে ৬-০ গোলে আর্জেন্টিনা হারার দাবিটি মিথ্যা।
১৯৭৫ সালে আর্জেন্টিনা বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে ৫-২ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবি করা হয়। কিন্তু জার্মানির সাথে সুইজারল্যান্ডের এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
সুতরাং, ১৯৭৫ সালে আর্জেন্টিনা বনাম সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে ৫-২ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৮০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম চিলি ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনা হারার দাবি করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার সাথে চিলির এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায় নি। ১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২-২ গোলে ম্যাচ ড্র করে আর্জেন্টিনা এবং চিলি।
সুতরাং, ১৯৮০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম চিলি ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
সুতরাং, ১৯৮৮ এবং ১৯৮৫ সালে আর্জেন্টিনা বনাম বলিভিয়া ম্যাচে যথাক্রমে ৬-০ ও ১১-১ গোল ব্যবধানে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৮৮ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি ম্যাচে ৫-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবি করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার সাথে জার্মানির এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ১৯৮৮ সালে চার দেশীয় টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে ১-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
সুতরাং, ১৯৮৮ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি ম্যাচে ৫-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা।
১৯৭৭, ১৯৯৬ এবং ২০১৬ সালে ব্রাজিলের সাথে যথাক্রমে ৫-০, ৬-২, ৩-০ গোল ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার দাবি করা হয়। তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ১৯৭৭ এবং ১৯৯৬ সালের ম্যাচের ফলাফলের কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবে ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোল ব্যবধানে হারায় ব্রাজিল।
সুতরাং, ১৯৭৭ এবং ১৯৯৬ ব্রাজিলের সাথে যথাক্রমে ৫-০, ৬-২ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি মিথ্যা। তবে ২০১৬ সালে ৩-০ গোল ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার দাবিটি সত্য।
২০১০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি ম্যাচে ৪-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবি করা হয়। আর্জেন্টিনার সাথে জার্মানির এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১০ সালে ফিফা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে ৪-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
সুতরাং, ২০১০ সালে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি ম্যাচে ৪-০ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি সত্য।
২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবি করা হয়। আর্জেন্টিনার সাথে স্পেনের এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা স্পেনের কাছে ৬-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।
সুতরাং, ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন ম্যাচে ৬-১ গোলে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের দাবিটি সত্য।
মূলত, কাতারে চলমান ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্রাজিলের ফুটবল সমর্থকরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল দল আর্জেন্টিনার কিছু কিছু পরিসংখ্যান কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রচার করছে৷ এসব পরিসংখ্যানের ২০১৬ সালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়, ২০১০ সালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে পরাজয় এবং ২০১৮ সালে স্পেনের কাছে ৬-১ গোলে পরাজয়ের দাবিগুলো সত্য। তবে বাকি ১৫ টি দাবি মিথ্যা।
সুতরাং, “আর্জেন্টিনার গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ গোল খাওয়ার রেকর্ড” শীর্ষক শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পরিসংখ্যানটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ের ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-বলিভিয়ার ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-পেরুর ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-জার্মানির ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-ইতালি ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-সুইজারল্যান্ড ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-চিলি ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচ পরিসংখ্যান
- আর্জেন্টিনা-স্পেন ম্যাচ পরিসংখ্যান