পাবনায় বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ ও জামাত নেতা শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রাইডে পোস্ট নামে ফেসবুকের একটি পেজের ফটোকার্ডের আদলে একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ ও জামাত নেতা। ভাগ মিলে সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনের”।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ ও জামাত নেতা। ভাগ মিলে সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনের” শীর্ষক শিরোনামে ফ্রাইডে পোস্ট কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বরং, ফ্রাইডে পোস্টের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিন্ন একটি ফটোকার্ডকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদিত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ফ্রাইডে পোস্টের নাম বা লোগোর উল্লেখ রয়েছে এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।

এরই সূত্র ধরে ফ্রাইডে পোস্টের ফেসবুক পেজে গত ২৪ ডিসেম্বর এবং এর আগে-পরে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রচারিত দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড ফ্রাইডে পোস্টের ফেসবুক পেজ বা ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়নি।

তবে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বরে ফ্রাইডে পোস্টের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে সংযুক্ত উক্ত একই ছবিযুক্ত “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছাত্রদল নেতা, ভাগ দেন পুলিশ-সাংবাদিককেও” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটির ডিজাইন এবং ব্যবহৃত ছবির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে টেক্সট ডিজাইন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মূল ফটোকার্ডের সাথে এর ফন্ট ও টেক্সট ডিজাইনের পার্থক্য আছে। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মূল ফটোকার্ডটির “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছাত্রদল নেতা, ভাগ দেন পুলিশ-সাংবাদিককেও” শীর্ষক শিরোনামটি মুছে “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ ও জামাত নেতা। ভাগ মিলে সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনের” শীর্ষক শিরোনাম লিখে ফটোকার্ডটি সম্পাদিত করা হয়েছে।

উক্ত ফটোকার্ডটিতে তথ্যসূত্র হিসেবে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সমকালকে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া, উক্ত ফেসবুক পোস্টটির মন্তব্য সেকশনেও এ বিষয়ে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির মূল অংশসহ প্রতিবেদনের লিঙ্কের সংযুক্তি পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে “বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছাত্রদল নেতা, ভাগ দেন পুলিশ-সাংবাদিককেও” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বরে সমকালে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পাবনার ঈশ্বরদীতে দিনরাত চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই রূপপুর প্রকল্পঘেঁষা পদ্মা নদীর চারটি পয়েন্টে দিনরাত সমানতালে চলছে অবৈধ এ কার্যক্রম। লাখ লাখ টাকার বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর হাসান সুমন। অভিযোগ রয়েছে, নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে বালু তোলার কাজ চালাতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ ফাঁড়ির পুলিশ ও সাংবাদিকদের মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আকিবুল ইসলাম। তাঁর দাবি, অবৈধ এ কার্যক্রমের সঙ্গে পুলিশ বা প্রশাসন জড়িত নয়। বরং এ ধরনের কাজের অভিযোগ পেলে তারা বাধা দেয়। সম্প্রতি ওই চার পয়েন্টে বালু তোলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এখন যেহেতু জেনেছেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অর্থাৎ, উক্ত ফটোকার্ডটি মূলত এরই প্রেক্ষিতে প্রচার করা হয়েছিল। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে আলোচিত ফটোকার্ডের দাবিটির পক্ষে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, “পাবনার ঈশ্বরদীতে বালু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক যুবলীগ ও জামাত নেতা। ভাগ মিলে সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসনের” শীর্ষক দাবিতে ফ্রাইডে পোস্টের লোগো সম্বলিত প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img