সম্প্রতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত ভিডিওতে পুতুলকে ‘যদি আপনি আমাকে সমর্থন করেন তাহলে আমি আপনার পাশে দাঁড়াবো। আমি ভাঙ্গা, সাদরপুর, চরভদ্রাসনকে স্বপ্নের শহরে পরিনত করবো।’ বলতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওটি প্রায় ৭৩ হাজার বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুতুলের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই ভিডিওর বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। পুতুলের লিংকডইন এবং এক্স অ্যাকাউন্টেও এমন ভিডিওর অস্তিত্ব মেলেনি।
পরবর্তীতে, ভিডিওটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ‘Mitol Ahmed Sabuj’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ সেপ্টেম্বর একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

তবে ভিডিওটিতে পুতুলের বলা বক্তব্য কবেকার বা কোথাকার এরূপ কোনো প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়নি। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়,‘ফরিদপুর-৪ এর আরো একজন প্রার্থী, উনি সম্ভবত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এর শিক্ষিকা। কিন্তু তিনি বাংলাদেশি। এই শিক্ষিকা চর ভদ্রাসন, সদরপুর, ভাঙ্গার উন্নয়ন করতে চায়।’
উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এটি থেকে আরও অসংখ্য এ ধরনের ভিডিও (১, ২, ৩) প্রচার করা হয়ে হয়েছে।
প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওতে থাকা পুতুল সদৃশ ব্যক্তির মুখাবয়বের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একই পোশাকে পুতুলের একটি ছবি অন্তত ২০২২ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই ছবিটি অনলাইনে রয়েছে।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’ এর ‘AVSRDD (2025)’ মডেলের মাধ্যমে ভিডিওটি পরীক্ষা করে রিউমর স্ক্যানার। মডেলটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ডিপফেক ভিডিওকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DeepFake-o-meter: AVSRDD (2025)