অন্তত গত ২৯ এপ্রিল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগুন ছোড়াছুঁড়ির একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “ভারতের মন্দিরে দুই গ্রুপের মারামারি”।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের মন্দিরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের দৃশ্যের নয় বরং, ‘অগ্নি কেলি’ নামক ভারতীয় একটি রীতি পালনের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘dayakukkaje’ ইউজারনেমের ভারত ভিত্তিক এক ফটোগ্রাফারের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২১ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও সম্পর্কে ইনস্টাগ্রাম পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “…২১-০৪-২৫। কর্ণাটকের মাঙ্গালুরুতে অবস্থিত কাটিল শ্রী দুর্গাপারমেশ্বরী মন্দিরে এক চমৎকার ভক্তিমূলক পরিবেশে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী ‘থুটেদারা’ বা ‘অগ্নি কেলি’ অনুষ্ঠান। মন্দির প্রাঙ্গণের বাইরে এই প্রাচীন রীতি অনুসারে, ভক্তরা একে অপরের দিকে জ্বলন্ত খেজুর পাতার শিখা নিক্ষেপ করেন। এটি বিশ্বাস ও উৎসবের প্রতীকী প্রকাশ। শতাব্দী প্রাচীন এই ঐতিহ্য বহু ভক্ত ও দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এটি দেবী দুর্গাপারমেশ্বরীর আশীর্বাদ আনয়ন করে।” (অনূদিত)
উক্ত ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে কাটিল মন্দিরের নামে পরিচালিত একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টকেও ট্যাগ করা হয়। কাটিল মন্দিরের নামে পরিচালিত উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে উক্ত ‘অগ্নি কেলি’ প্রথার একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Wion’ এর ইউটিউব চ্যানেলে “Thoothedhara Festival: Participants Hurl Burning Palm Fronds In Symbolic Battle” শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ঘটনার ভিডিও সম্বলিত একটি ভিডিও গত ২১ এপ্রিলে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে বলা হয়, ভারতের মাঙ্গালুরুর কাটিল শ্রী দুর্গাপরমেশ্বরী মন্দিরে ‘অগ্নি কেলি’ প্রথা পালিত হয়েছে। এছাড়াও, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটেও গত ২২ এপ্রিলে এ বিষয়ে প্রচারিত একটি ভিডিওতেও উক্ত রীতি পালিত হওয়ার ব্যাপারে বলা হয়।
উক্ত প্রথার ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে “Watch: To celebrate ‘goddess of war’, devotees in Mangaluru ‘throw fire’ at each other” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিলে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে কর্ণাটকের মাঙ্গালুরুতে আয়োজন করা হয় ‘অগ্নি কেলি’ নামে একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি আট দিনব্যাপী একটি বর্ণাঢ্য উৎসব, যার মূল আকর্ষণ আগুন ছোড়ার খেলা। এই আগুনের খেলা মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়, তারপর অংশগ্রহণকারীরা মন্দিরে ফিরে যান।
সুতরাং, ‘অগ্নি কেলি’ নামের ভারতীয় এক রীতি পালনের দৃশ্যকে ভারতের মন্দিরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।