সম্প্রতি ‘ফুটপাতহীন এক মহানগর ঢাকা যেন বিএনপির দখল রাজ্য’ শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, রাজধানীর প্রায় ৭০% ফুটপাত দখল হয়ে গেছে এবং এই দখল থেকে বছরে প্রায় ২,১৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে, যা সরাসরি বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পকেটে যাচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ফুটপাতহীন এক মহানগর ঢাকা যেন বিএনপির দখল রাজ্য’ শিরোনামে কালের কণ্ঠ কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজধানীর ফুটপাত দখলের বিষয়ে প্রচারিত কালের কণ্ঠের একটি ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালের কণ্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ০৫ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিন্ন একটি ফটোকার্ডের সঙ্গে আলোচিত ফটোকার্ডটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এর লোগো, তারিখ ও ডিজাইন মূল ফটোকার্ডের সঙ্গে মিল থাকলেও শিরোনাম ও তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে মূল ফটোকার্ডের ‘ফুটপাতহীন এক মহানগর ঢাকা’ শিরোনাম পরিবর্তন করে আলোচিত ফটোকার্ডে ‘ফুটপাতহীন এক মহানগর ঢাকা যেন বিএনপির দখল রাজ্য’ শিরোনাম যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ভিজ্যুয়াল অংশে ‘পুরোটাই যাচ্ছে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পকেটে’ নামে একটি নতুন পয়েন্ট সংযোজন করা হয়েছে। তাছাড়া, ফটোকার্ডটির শিরোনাম ও ভিজ্যুয়াল অংশে নতুন যুক্ত লেখাগুলোর ফন্ট কালের কণ্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের ফন্ট থেকে ভিন্ন।

কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে মূল ফটোকার্ড সম্বলিত পোস্টের মন্তব্য অংশে ওই প্রতিবেদনের ওয়েবসাইট লিংক পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় ফুটপাত থাকলেও সেগুলো পথচারীদের জন্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সেগুনবাগিচা, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, মিরপুর ১০ থেকে ১৪ এবং মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান, গাছ, খুঁটি, ফুটওভারব্রিজের সিঁড়ি, ময়লার স্তূপ ও নানা স্থাপনা পথচারীদের চলাচলে বড় বাধা সৃষ্টি করছে। উদাহরণস্বরূপ, বায়তুল মোকাররমের সামনে ২০০টির বেশি দোকানের কারণে ফুটপাত সংকুচিত হয়ে গেছে, গুলিস্তানের ৯৫ শতাংশ ফুটপাত ব্যবহার অনুপযোগী এবং মিরপুর ১০ থেকে ১৪ নম্বর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার ফুটপাত সম্পূর্ণ দখল হয়ে আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ২৩৬টি অভিযানে ৪৫ কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করলেও এর আওতায় থাকা ২২৩ কিলোমিটার ফুটপাতের বেশির ভাগই এখনো বেদখল রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত এক বছরে ৭০টি অভিযানে মাত্র ১.৭৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনে হকারদের কাছ থেকে বছরে প্রায় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রতিবেদনের কোথাও কোনো রাজনৈতিক দলকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আলোচিত প্রতিবেদনটি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম লিখেছেন। ৫ আগস্ট জহিরুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে মূল ও সম্পাদিত ফটোকার্ডের তুলনা দেখিয়ে ‘কালের কণ্ঠের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করা হয়। এতে তিনি লিখেছেন, “ভাইগো ভাই… আমার নিউজ দিয়া কি করতাছে!!”
সুতরাং, ‘ফুটপাতহীন এক মহানগর ঢাকা যেন বিএনপির দখল রাজ্য’ শিরোনামে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Kaler Kantho: Facebook Post.
- Zahirul Islam: Facebook Post