Home Blog Page 117

সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারির নামে ইলিয়াস কাঞ্চনকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হুশিয়ারি প্রদান করেছেন দাবিতে চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনের আলোকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইলিয়াস কাঞ্চন সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে হুঁশিয়ারি প্রদান করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, জুলাই আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের নানা ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওর ক্লিপের সমন্বয়ে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ভিডিওটির শুরুতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর একটি প্রতিবেদনের শুরুর অংশের সংবাদ পাঠিকার ক্লিপ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তাকে,‘বিক্ষোভ আর হাতাহাতির মধ্যে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। এরপরই অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্য প্রদানের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তাকে, ‘সমন্বয়কদের জানিয়ে দেন, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে তাদের জানিয়ে দেন। তারা যেন আজকের দিনের পরে এইভাবে…’ শীর্ষক বক্তব্য দিতে শোনা যায়। তবে উক্ত বক্তব্যের ‘সমন্বয়কদের’ শব্দটি বাকি বক্তব্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ শোনায়। পরবর্তীতে ইলিয়াস কাঞ্চনের আরেকটি ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হয়, তিনি ওই জনসভায় ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে সমন্বয়কদের নিষিদ্ধ না করলে খুব শীঘ্রই ড. ইউনূসকেই গদি থেকে টেনে হিচড়ে নামানো হবে।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। তবে ভিডিওটি চলাকালীন তার ভয়েস মিউট করা ছিল। পরবর্তীতে তিনি, ‘শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। সমন্বয়করা ২৪ এর আন্দোলনের নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। যার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে আরেকটি ভিডিও দেখানো হয়। যেখানে তাকে, ‘এর সুষ্ঠু বিচার এরা কখনও করতে পারবে না। কারণ এদের হাত দিয়ে তো এখানে হত্যা হয়েছে। সেখানে তাদের মাধ্যমে কিন্তু সুষ্ঠু বিচার হবে না।’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। তবে উক্ত ভিডিওটির কোথাও তার মুখ থেকে আলোচিত দাবিটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলতে শোনা যায়নি।

ভিডিও যাচাই ১

শুরুতে চ্যানেল২৪ এর প্রতিবেদনটি অনুসন্ধানে সংবাদ পাঠিকার বক্তব্যের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ আর হাতাহাতির মধ্যে আত্মপ্রকাশ করলো নতুন সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ | Channel 24 শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত নতুন ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’-এর আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা নিয়ে উক্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। যার সাথে আলোচিত দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ২

পরবর্তীতে ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্য প্রদানের ভিডিওটি অনুসন্ধানে গণমাধ্যম ভোরের কাগজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একই ঘটনার ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মাঠে নামেন নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ভিডিওটিতে তাকে উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ কারার জন্যে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করতে শোনা যায়। তবে কোথাও তাকে সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি তুলতে শোনা যায় না। এছাড়াও দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটি ক্রপ করার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ৩

জনসভায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমন্বয়কদের নিষিদ্ধ করার দাবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের দেখানো ভিডিও ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে মূল ধারার গণমাধ্যম এসএ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কেন ক্ষেপলেন ইলিয়াস কাঞ্চন? | SATV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে উক্ত জনসভায় ইলিয়াস কাঞ্চনের সমন্বয়কদের নিষিদ্ধ করার দাবি তোলার বিষয়ে বলা হলেও দেখা যায় উক্ত ভিডিওটি মূলত নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে তার আলোচনা করার ভিডিও। উক্ত জনসভায় তাকে নিরাপদ সড়ক নিয়ে বক্তব্য প্রদান করতে দেখা গেলেও আলোচিত দাবিটির বিষয়ে তাকে কোনো কথাই বলতে শোনা যায়না। 

ভিডিও যাচাই ৪

সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্য প্রদানের দাবি করে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক সমকাল-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট হওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগেরদিন দেশব্যাপী আন্দোলনকারী, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের উপর হওয়া নির্যাতন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি একটি মানববন্ধন করে। অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন উক্ত কর্মসূচির সময় দেশব্যাপী হওয়া নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন। ভিডিওটিতে সেটিই দেখানো হয়েছে। তবে সেখানে আলোচিত দাবির প্রেক্ষিতে তাকে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। এছাড়াও উক্ত ভিডিওটি সমন্বয়কদের দল গঠনেরও বেশ আগের। অর্থাৎ, এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে ইলিয়াস কাঞ্চন সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে কোনো বক্তব্য প্রদান করেছেন কিনা জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দলকে জড়িয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হুঁশিয়ারি প্রদানের নামে অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রেগন্যান্ট বলায় ৯ মাসে দুই ট্রফি উপহার দিলাম শীর্ষক মন্তব্য রোহিত শর্মা করেননি

0

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারত। এর প্রায় ৯ মাস পূর্বে গত বছরের জুনে ভারতকে টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপাও এনে দিয়েছিলেন রোহিত। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, রোহিত শর্মা বলেছেন, “ওরা আমাকে প্রেগন্যান্ট বলেছিল, তাই নয় মাসে দুইটা ট্রফি উপহার দিলাম”।

উল্লেখ্য যে, বিগত বেশ কিছু সময় ধরে রোহিত শর্মার ফিটনেস নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও কটু কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ওরা আমাকে প্রেগন্যান্ট বলেছিল, তাই নয় মাসে দুইটা ট্রফি উপহার দিলাম’ শীর্ষক কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য রোহিত শর্মা করেননি বরং, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে রোহিত শর্মার এমন কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রোহিত শর্মা প্রকৃতপক্ষে এরূপ কোনো মন্তব্য করে থাকলে তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ার কথা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনেও তাকে এরূপ কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। তাকে তার খেলার ধরণ নিয়ে কথা বলতে ও অনুভূতি ব্যক্ত করতে দেখা যায়। টানা দুটি আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ক্যারিয়ারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে রোহিত বলেন, ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। যা হচ্ছে, সেটাই হতে থাকবে। তাছাড়া, শীঘ্রই ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।

এর আগে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সঞ্চালক ইয়ান বিশপের প্রশ্নের উত্তরে রোহিত বলেন, ‘দারুণ লাগছে জিততে পেরে। গোটা প্রতিযোগিতা জুড়েই আমরা ভাল খেলেছি। ফাইনালেও জেতার অনুভূতিটা বাকিগুলোর থেকে আলাদা। যে ভাবে খেলেছি সেটা বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে।’

নিজের খেলার ধরন নিয়ে রোহিত বলেন, ‘অনেকেই জানেন, আমার স্বাভাবিক খেলা নয় এটা। কিন্তু এই ধাঁচেই খেলতে চেয়েছিলাম। যখন আপনি আলাদা কিছু করছেন, তখন দল এবং কোচদের সমর্থন খুব দরকার হয়। আগে রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। এখন গৌতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা দু’জনেই আমাকে সমর্থন করেছে। তাই আগ্রাসী খেলা চালিয়ে গিয়েছি। আগে অন্য ভাবে খেলেছি। এখন অন্য ভাবে খেলে ফলাফল পাচ্ছি।’

অর্থাৎ, নানা বিষয়ে রোহিত শর্মাকে কথা বলতে দেখা গেলেও আলোচিত দাবিটির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ভারতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, “ওরা আমাকে প্রেগন্যান্ট বলেছিল, তাই নয় মাসে দুইটা ট্রফি উপহার দিলাম” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis

বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতারের ছবি করের টাকা অপচয়ে প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত নৈশভোজ দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এভাবেই ইসলামোফ্যাসিস্ট ইউনূস আমার করের টাকা অপচয় করে ব্রিটিশ বেনিয়া, আমেরিকান ডিপ স্টেট বেনিয়া, আইএসআই সমন্বয়ক এবং যুদ্ধাপরাধীদের খাওয়াচ্ছে। দ্রুত বা ধীরে, এই নৈশভোজের খাবার তাদের মুখের পরিবর্তে অন্য কোথাও ঠেসে দেওয়া হবে।…” (অনূদিত)

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি সরকারি তহবিল থেকে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজের নয় বরং, বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতারের ছবি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে থাকা ব্যানারে দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতার লেখা রয়েছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে অনলাইন সংবাদমাধ্যম সারাবাংলা ডট নেটে’র ওয়েবসাইটে “কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের ইফতার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৬ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ছবিটির বর্ণনায় উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে ইফতার করলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা”। এ বিষয়ে উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে ইফতার করলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) গুলশান হোটেল ওয়েস্টিনে এ ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়। ইফতার মাহফিলটিতে নানা দেশের কূটনীতিক, নানা সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে একইদিনে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’তে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সৌজন্যে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। এছাড়াও, এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। তবে, কোথাও উক্ত ইফতার বা নৈশভোজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আয়োজন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়নি।

সুতরাং, বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতারের ছবিকে করের টাকায় প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত নৈশভোজের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

মামুনুল হকের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়, ২০২১ সালের

সম্প্রতি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক সাম্প্রতিক সময়ে এক নারীসহ আটক হয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, মাওলানা মামুনুল হকের ২০২১ সালের নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওতে থাকা ‘NewsBangla24.com’ এর লোগোর সূত্র ধরে অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল প্রচারিত একটি  ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ৪১ সেকেন্ড থেকে ৫১ সেকেন্ড অংশের সাথে মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে থেকে জানা যায়, সেসময় (২০২১) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে নারীসহ আটকে রেখেছিল পুলিশ।

পরবর্তীতে, উক্ত বিষয়ে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ওয়েবসাইটেও ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল একই বিষয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে নারীসহ মামুনুল হককে আটকে রেখেছিলেন স্থানীয় জনতা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে, মামুনুল হকের দাবি ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী।

সুতরাং, মাওলানা মামুনুল হকের ২০২১ সালের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

ধর্ষকের পক্ষের আইনজীবীকে মারধর দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘ধর্ষকের পক্ষের আইনজীবি বা ধর্ষণ বিরোধীকে একটু ছাত্র জনতার আপ্যায়ন। এভাবে চলুক অবিরাম মাইরেরর উপর ওষুধ নাই’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ধর্ষকের পক্ষের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ধর্ষকের পক্ষে আইনজীবীকে মারধরের নয় বরং, যুবলীগ নেতাকে মারধরের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Pratidiner Thakurgaon’ নামক স্থানীয় একটি গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ০৯ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা ‘তলো/য়ার জাহাঙ্গীর’ ছাত্রদের হাতে ধরা পড়ে। 

উক্ত তথ্যের সুত্র ধরে অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ৯ মার্চ ‘সেই যুবলীগ নেতা ‘তলোয়ার জাহাঙ্গীর’কে গণপিটুনি দিলেন শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,  ঠাকুরগাঁওয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অন্যতম হামলাকারী মো. জাহাঙ্গীর ওরফে ‘তলোয়ার জাহাঙ্গীর’ শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়েছেন। অভ্যুত্থানের সময় তিনি রামদা নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও আদালত চত্বরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়ে সে। পরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পরবর্তীতে, একই বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ মার্চ ‘ঠাকুরগাঁওয়ে যুবলীগ নেতাকে গ*ণধো*লাই দিল শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

সুতরাং, ঠাকুরগাঁওয়ে গত আগস্টের আন্দোলনে হামলাকারী যুবলীগ নেতাকে মারধরের ভিডিওকে ধর্ষকের পক্ষের আইনজীবীকে মারধরের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হবিগঞ্জে মোবাইল চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে আগুনে তাপ দেওয়া ব্যক্তি হিন্দু নন

সম্প্রতি, এক ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে আগুনের তাপ দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা দাবি করা হচ্ছে, উক্ত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গাছে বেঁধে আগুনের তাপ দেওয়া ব্যক্তি হিন্দু নন বরং, তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী। তার নাম শহিদুল এবং বাবার নাম কিম্মত আলী।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গতকাল (১০ মার্চ) Parvez Mallik নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, (হবিগঞ্জের) যমুনাবাদে দুই মোবাইল চোরকে আটক করে জনতা।

একই দিনে Md Tufajjol Islam নামক আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে মোবাইল চুরির অভিযোগে যমুনাবাদে আটক হওয়া ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যে আটক হওয়া ব্যক্তি বলেন, তার নাম শহিদুল এবং বাবার নাম কিম্মত আলী।

পরবর্তী অনুসন্ধানে স্থানীয় গণমাধ্যম দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের ওয়েবসাইটে আজ (১১ মার্চ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৮ মার্চ হবিগঞ্জ উপজেলার লামাতাসি ইউনিয়নের যমুনাবাদ (৬নং ওয়ার্ড) গ্রামের আব্দুল কাইয়ূম মিয়ার বাড়ি থেকে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনার পরদিন (০৯ মার্চ) সন্দেহভাজন চোর হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে সাহিদুলকে আটক করে স্থানীয় জনতা। এ সময় তাকে উত্ত্যম-মধ্যম দিলে তার সহযোগি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের বনদক্ষিন গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জায়েদ মিয়া মোবাইল চুরির সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানায়। পরে সাহিদুলের কথানুযায়ী স্থানীয় কটিয়াদি বাজার থেকে জায়েদ মিয়াকে আটক করে যমুনাবাদে নিয়ে যান জনতা। এক পর্যায়ে তাকেও উত্ত্যম-মধ্যম দেয়া হয়। এ সময় সে মোবাইল চুরির সাথে জড়িত নয় বললে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের একাংশ পুড়ে যায়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ.ক.ম উস্তার মিয়া তালুকদার ঘটনাস্থলে পৌছলে তার কাছে উল্লেখিতরা মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করে। পরে মুচলেকার মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকজন ও লস্করপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মতিন এবং তারাপাশা গ্রামের বাসিন্দা সাধন মিয়ার জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

অর্থাৎ, গাছে বেঁধে রাখা ব্যক্তিটি হিন্দু নন, মুসলিম ধর্মের অনুসারী।

সুতরাং, মোবাইল চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে আগুনে তাপ দেওয়া মুসলিম যুবককে হিন্দু দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে বলাৎকার নিয়ে যুগান্তরের পুরোনো সংবাদের তারিখ সম্পাদনা করে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, গত ২ মার্চ মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে “রোজার মধ্যে একাধিক ছাত্রকে বলাৎকার, মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেফতার” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দাবিতে গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদের আদলে একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে ৷

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ‘রোজার মধ্যে একাধিক ছাত্রকে বলাৎকার, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামে যুগান্তরে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি, বরং ২০২১ সালে যুগান্তরে উক্ত শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তারিখ পরিবর্তন করে সাম্প্রতিক সময়ের সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত স্ক্রিনশটটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২১ মে “রোজার মধ্যে একাধিক ছাত্রকে বলাৎকার, মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেফতার” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ ও সময় ব্যতীত বাকি অংশের সাথে আলোচিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটের হুবহু মিল রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে যুগান্তর আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি।


অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদনের তারিখ সম্পাদনা করে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

একই বিষয়ে সেসময় দেশের মূলধারার একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন (,) প্রকাশিত হয়।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো সংবাদ দেশের গণমাধ্যমগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

সুতরাং, ২০২১ সালে ‘রোজার মধ্যে একাধিক ছাত্রকে বলাৎকার, মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামে যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তারিখ পরিবর্তন করে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

রাজশাহীর বৈছাআর নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ভিন্ন ঘটনার

সম্প্রতি, রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে একটি কক্ষে দুইজন নারী ও পুরুষকে নৃত্য করতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নয় বরং, অন্তত ২০২২ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Masti with Dice’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর ‘Indian Girl Hostel Party | Party in Dubai | Night Club | Tiktoker | Girls Hostel Ki Masti| BTS 2023’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner.

ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, এটি একটি ভারতীয় মেয়েদের হোস্টেল পার্টির দৃশ্য। এছাড়া, একই ভিডিও বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় দাবিতে প্রচার হতে দেখা গেছে (,)।

ভিডিওটির সঠিক প্রেক্ষাপট নিশ্চিত করা সম্ভব না হলেও এটি নিশ্চিত যে, এটি সাম্প্রতিক নয় এবং এর সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ভিডিওটি অন্তত ২০২২ সাল থেকে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে।

সুতরাং, দুই তরণ-তরণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের আলোচিত ভিডিওটি রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বক্তব্যের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন মেয়ের ভিডিও প্রচার

গত ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (পিআইসিইউ) লাইফ সাপোর্ট রাখা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মেয়ের কথা বলার দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, মাগুরার উক্ত শিশুর হাসপাতালে কথা বলার দৃশ্য এটি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আলোচিত শিশুর কথা বলার দৃশ্যের নয় বরং চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনাকে মাগুরার শিশুটি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে চাঁদপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চাঁদপুর বুলেটিনের ফেসবুক পেজে গত ১০ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়৷ ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে পৈশাচিক নির্যাতনে শিকার রোজিনার চাওয়া…”

আরো অনুসন্ধান করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “কিশোরীকে গরম খুন্তির ছেঁকা-নির্যাতন, মামা-মামি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৭ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “নির্যাতনের শিকার রোজিনা আক্তার (১৫) চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় গতকাল (৬ মার্চ) রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন আলী আহম্মদ ভূঁইয়া। রোজিনা চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘এক বছর আগে রোজিনাকে ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে না জানিয়ে রোজিনার মামা রুবেল মোল্লা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তান রিফাতকে দেখাশোনা করার কথা বলে তাকে (রোজিনা) ঢাকায় বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু রোজিনাকে গৃহকর্মীর কাজ করানো হতো। গত জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে চলে আসেন রুবেল মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। এক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে রোজিনাকে দেখা করতে এবং কথা বলতে দেননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজিনা মামা-মামির নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন রোজিনার অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথম থানায় নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করায়।’

রোজিনা জানায়, নানা অজুহাতে মামা-মামি তাকে মারধর করত। ধারালো দা, ছুরি দিয়ে শরীরে আঘাত করেছে। পিঠে ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে। গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিত। পায়ের আঙুলগুলো থেঁতলে দিয়েছে। ঠিকমতো খাবার দিত না। মা–বাবার সঙ্গেও দেখা বা কথা বলতে চাইলে দিত না। গতকাল বাসায় মামি ছিল না। তখন সে ঘর থেকে পালিয়ে বাইরে চলে আসে।”

এছাড়া এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ফেসবুক পেজেও একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। আরটিভিতে প্রদর্শিত রোজিনার দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরীর তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরী মাগুরার আলোচিত শিশুটি নয় বরং চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনা।

অপরদিকে মাগুরার আলোচিত শিশুটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে মূলধারার গণমাধ্যম সমকালে গত ১০ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে।…তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিকে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুই এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।”

এছাড়া, মাগুরার শিশুটির বিষয়ে একইদিন রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে মাগুরার শিশুটির ব্যাপারে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে জানানো হয় এবং বলা হয়, “প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং তদানুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটি লাইফ সাপোর্টে আছে।”

সুতরাং, চাঁদপুরে মামা-মামির হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী রোজিনার কথা বলার দৃশ্যকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আলোচিত শিশুর কথা বলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আজমির শরীফ জিয়ারতের দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত আজমির শরীফ দরগাহ্ জিয়ারত করতে গেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷  

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটিতে প্রায় ২২ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং ভিডিওটি প্রায় পনেরশ বার শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২২ সালে শেখ হাসিনার আজমির শরীফ জিয়ারতের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভির লোগো লক্ষ্য করা যায়৷ উক্ত সূত্র ধরে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৮ সেপ্টেম্বর ‘আজমির শরিফ জিয়ারত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সে বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সফরের শেষ দিন (৮ সেপ্টেম্বর) আজমিরের খাজা গরিবে নেওয়াজ দরগাহ শরিফ জিয়ারত করে শেখ হাসিনা।

পরবর্তীতে, আরেক ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ০৮ সেপ্টেম্বর ‘আজমির শরীফ জিয়ারতের মাধ্যমে ভারত সফর সমাপ্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়৷ 

অর্থাৎ, শেখ হাসিনার ভারতের আজমির শরীফ জিয়ারতের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়৷ 

সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সময়ের ভারতের আজমির শরীফ জিয়ারত দাবিতে ২০২২ সালের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র