বুধবার, অক্টোবর 8, 2025

ইসরায়েলী বাহিনীর হাতে শহিদুল আলমের আটকের দৃশ্য দাবিতে এআই ছবি প্রচার 

আজ (৮ অক্টোবর) ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের সামাজিক মাধ্যমে জানায়, গাজা অভিমুখী স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বহনকারী ‘কনশেনস’ (Conscience) নামের নৌবহরকে ইসরায়েলি বাহিনী অবৈধভাবে আটক, আক্রমণ ও জোরপূর্বক অপহরণ করেছে।

নৌবহরটিতে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও ছিলেন। একই দিনে প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম জানান, “ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী আমাদের জাহাজে উঠেছে এবং আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহিদুল আলমের গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে সৈকতের ধারে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় শহিদুল আলমের মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে দেখা যায়, যাকে চারজন অস্ত্র হাতে সামরিক পোশাক পরিহিত সৈন্য ঘিরে রেখেছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই ছবিসহ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন: রূপালী বাংলাদেশ, এনটিভি, এটিএন নিউজ (ইউটিউব)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি শহিদুল আলমের আটকের দৃশ্যের নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ছবিটির অস্তিত্ব বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি। ‘কনশাস’ বহরের আয়োজক ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) এক্স অ্যাকাউন্টে বহরটির সম্পর্কে নানা আপডেট প্রকাশ করা হচ্ছে। তাদের ইউটিউব চ্যানেলের লাইভ স্ট্রিমে আটক যাত্রীদের পূর্বে ধারণ করা ভিডিওবার্তাও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনো ছবি তারা প্রকাশ করেনি।

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা নতুন নৌবহরটিকে তার লক্ষ্য পূরণে বাধা দেওয়া হয়েছে। নৌযানগুলো এবং যাত্রীদের আটক করে আশদোদ বন্দরে নেওয়া হয়েছে। এক এক্স পোস্টে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সকল যাত্রী নিরাপদে আছেন এবং তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এই প্রতিবেদনে কিংবা ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এমন কোনো ছবি প্রকাশ করেনি।

পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিতে অস্ত্র হাতে সামরিক পোশাক পরিহিত চারজন সৈন্যের চেহারায়, শারীরিক গঠন ও উচ্চতায় উল্লেখযোগ্য মিল লক্ষ্য করা যায়। তাদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেও মিল দেখা যায়।

গত ৪ অক্টোবর, শহিদুল আলম নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে কনশাস বহরের যাত্রীদের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করেন। ছবিতে তিনি কালো পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ওই পাঞ্জাবিতে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের ছবি আঁকা রয়েছে। তবে আলোচিত ছবিতে তার পোশাকটি পাঞ্জাবি নয়। এ ধরনের পোশাকের পরিবর্তন সাধারণত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি তৈরি করার সময় দেখা যায়। এছাড়া, ছবিতে আবু সাঈদের ছবির অবস্থানও উল্টো, যা ৪ অক্টোবর প্রকাশিত ছবির তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মডারেশনে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, ছবিটি এআই ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation. 

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহিদুল আলমের আটক হওয়া দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Hive Moderation. 

আরও পড়ুন

spot_img