ঢাবিতে শিবিরের ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্কের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অ্যাকাডেমিক ভবনে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এই মেশিনগুলোতে ‘SHIFA’ নামে ব্র্যান্ডিং দেখা যায়। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দাবি উঠেছে যে, শিবিরের এই কার্যক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্ক রয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবিতে শিবিরের স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, এই ভেন্ডিং মেশিনটি শিবিরের ‘Students’ Health Initiative for All – SHIFA’ নামক একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগের অংশ। আলোচিত ভেন্ডিং মেশিনের ‘SHIFA’ লোগো পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের লোগো থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা। এছাড়া, পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনও এই উদ্যোগের সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।

বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য প্রথমে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংস্থাটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং শিফা ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও শিক্ষা খাতে কাজ করে থাকে। সংস্থাটির দাবি, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে তারা। তবে তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম বা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া, শিফা ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন সম্পর্কিত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, ঢাবিতে স্থাপিত ভেন্ডিং মেশিনে ব্যবহৃত ‘SHIFA’ লোগো এবং পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের লোগোর মধ্যে তুলনা করলে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শিবিরের ‘SHIFA’ উদ্যোগের পূর্ণরূপ হলো ‘Students’ Health Initiative for All’, যার একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে। শিফার ডিরেক্টর মাজহারুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, আমাদের উদ্যোগ পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানতাম না। আমাদের ‘SHIFA’ শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং এটি কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়।

শিফার ফেসবুক পেজে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক পোস্টে দেখা যায়, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করেছিল। এতে তুরস্কের উন্নয়ন সংস্থা টিকা (টিকা ঢাকা), আপন ফাউন্ডেশন, রিদম বাংলাদেশ, বায়োফার্মা লিমিটেড এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালের সহযোগিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। মাজহারুল ইসলাম জানান, এগুলো কেবল কার্যক্রমভিত্তিক সহযোগিতা। এর সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ফার্স্ট এইড বক্স প্রদান সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব উদ্যোগ।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশন রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছে, ঢাবিতে সম্প্রতি স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই। এছাড়া, তারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। ভেন্ডিং মেশিনে ব্যবহৃত ‘শিফা’ নামের ব্র্যান্ডিং, লোগো বা ডিজাইনও তাদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং বর্তমানে তারা বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

সুতরাং, ঢাবিতে শিবিরের উদ্যোগে স্থাপিত স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে পাকিস্তানের শিফা ফাউন্ডেশনের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রচারিত দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Shifa Foundation: Website
SHIFA: Facebook Page
Statement from Majharul Islam, Director, SHIFA
Statement from Zia ur Rehman, Associate Director Operations, Shifa Foundation, Pakistan

আরও পড়ুন

spot_img