সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বিবেচিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে খুবই দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালিত হয়েছে। ড. ইউনুস সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, এই আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, বাতিল হবে নোবেল পুরষ্কার।’ ক্যাপশনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের একটি প্রেস বিবৃতিতে তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মন্তব্যের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট U.S. Response to Bangladesh Prime Minister Hasina’s Resignation’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি শর্টস খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
ভিডিওটিতে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেবছরের ০৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার ঘোষণা এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে দেখা যায়।
উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘Department of State Daily Press Briefing -August 5, 2024’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর মিল রয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০১:২৭ থেকে ০২:১০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটির উক্ত অংশে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের তৎকালীন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকার কথা এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ০৮ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেছেন৷
অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের প্রেস বিবৃতির ভিডিওটির অস্তিত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পূর্ব, ০৬ আগস্ট থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।
উক্ত ভিডিওতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং এই আদেশ অমান্য করলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তার নোবেল পুরষ্কার বাতিল করা হবে- এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৬ আগস্ট ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
সুতরাং, ম্যাথিউ মিলার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- U.S. Department of State – U.S. Response to Bangladesh Prime Minister Hasina’s Resignation
- U.S. Department of State – Department of State Daily Press Briefing -August 5, 2024
- যুগান্তর – শেখ হাসিনার পদত্যাগ, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র