উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেনি মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, এঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৫২২ জন আহত হয়েছে বলে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাইলস্টোনে হওয়া বিমান দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৫২২ আহত হয়েছে দাবি করে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ কোনো বিবৃতি দেয়নি।  প্রকৃতপক্ষে, মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক সমকালের ওয়েবসাইটে গত ২৬ জুলাই মাইলস্টোনে দগ্ধ অফিস সহকারী মাসুমার মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৩৫ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত দুর্ঘটনায় দগ্ধ জারিফ ফারহান ও মাইলস্টোনের অফিস সহকারী মাসুমা গত ২৬ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ মৃত্যুবরণ করেন। যাতে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। 

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, উক্ত ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা প্রকাশ করে গত ২৪ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে এ ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী, দুই শিক্ষক ও দু’জন অভিভাবকের নিহতের তথ্য জানানো হয়।

পরবর্তীতে Milestone School and College এর ফেসবুক পেজে গত ২৪ জুলাই প্রচারিত ওই বিবৃতিটির সন্ধান পাওয়া যায়। বিবৃতিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ ২৪ জনের নিহতের তথ্যের পাশাপাশি ৫ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্যও পাওয়া যায়। এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয় এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ৪৮ জন গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে। 

Screenshot: Facebook 

মাইলস্টোনের পক্ষ থেকে দেওয়া এই বিবৃতিতে মূলত গত ২৪ তারিখ বিকেল ৬ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত হওয়া নিহতের তথ্যগুলোই উঠে এসেছে। তাছাড়াও বিবৃতিতে শুধু প্রতিষ্ঠানটির সাথে সম্পৃক্ত মানুষের তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে।  

পরবর্তীতে মাইলস্টোন কলেজের ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২৬ জুলাই বিকেল ৫ টা ৩৩ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির মাধ্যমে ওই সময় পর্যন্ত উক্ত দুর্ঘটনায় স্কুলটির শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের হতাহতের সর্বশেষ তালিকা প্রদান করে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ। 

এতে দেখা যায়, ২৬ জুলাই বিকেল পর্যন্ত স্কুলটির ২৬ জন শিক্ষার্থী, ৪ জন অভিভাবক, ২ জন শিক্ষিকা ও ১ জন স্টাফ মিলিয়ে মোট ৩৩ মারা যান। 

উক্ত তালিকা সম্বলিত পোস্টটির পর মাইলস্টোন কলেজের ফেসবুক পেজে আর কোনো পোস্ট করা হয়নি। এছাড়াও পরবর্তীতে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আর কোনো বিবৃতি প্রকাশ করার তথ্যও পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের বরাতে এ ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৫২২ আহত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। 

উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রচারিত তথ্যে উক্ত বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যায় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগে প্রচারিত আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে নিহতের সংখ্যা ৩১ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন বলা হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে তা নিহত ২৭ জন এবং আহতের সংখ্যা ৭০ জন বলা হয়।

সুতরাং, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৫২২ জন আহত হয়েছে দাবিতে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img