সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নয়, শিশু জাবির গত বছরের ০৫ আগস্ট নিহত হয়েছেন

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “পুলিশের গুলিতে ‘আর্মি’ হতে চাওয়া ছোট্ট জাবিরের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামের একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় জাবির ইব্রাহিম নামের শিশু।

উল্লেখ্য যে, কিছু পোস্টের ক্যাপশনে পুলিশের গুলিতে এবং কিছু পোস্টের ক্যাপশনে সেনাবাহিনীর গুলিতে জাবিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত শিশু জাবির ইব্রাহিম সম্প্রতি গোপালগঞ্জে হওয়া সংঘর্ষে নিহত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে সে গত বছরের ০৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সংযুক্ত ফটোকার্ডে ‘রূপালী বাংলাদেশ” নামক সংবাদমাধ্যমের নাম ও লোগো পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে গত ১৬ জুলাই১৮ জুলাইয়ে “রূপালী বাংলাদেশ” এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ফটোকার্ড পোস্টগুলোর মন্তব্য বিভাগ পর্যবেক্ষণ করলে তাতে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের লিঙ্কের সংযুক্তি পাওয়া যায়।

“পুলিশের গুলিতে ‘আর্মি’ হতে চাওয়া জাবিরের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজের পরিবারের চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ছোট্ট জাবির।…বাবা কবির হোসেন জানান, ‘(গত বছরের ৫ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে আমরা একটি সেতুর উপর ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে সবাই দৌড়াতে থাকে। আমি জাবিরের ডান হাত ধরে ছিলাম। তখন একটি গুলি এসে তার পায়ে লাগে। কিছুদূর যাওয়ার পর সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।’ জাবিরকে প্রথমে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ করেন পরিবার। পরে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জাবিরকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের তুলাই শিমুল গ্রামে।”

এছাড়াও, জাবির ইব্রাহিমের বিষয়ে নানা সময়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, ইত্তেফাক, কালবেলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। উক্ত প্রতিবেদনগুলোতেও বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট মা–বাবার সঙ্গে ঢাকার উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে আনন্দমিছিলে থাকার সময় গুলিতে প্রাণ হারায় শিশু জাবির ইব্রাহিম (৬)।

সুতরাং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শিশু জাবির ইব্রাহিম সম্প্রতি গোপালগঞ্জে হওয়া সংঘর্ষে মারা গিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img