সম্প্রতি, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে যমুনা টিভির লোগো যুক্ত মনির খানের বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে মনির খানকে বলতে দেখা যায়, “আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আপনারা সবাই জানেন যে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাথে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। পদ পদবি সহ এবং কেন্দ্রীয় ঘোষিত সমস্ত কর্মসূচিতে আমার উপস্থিতি ছিলো। এই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে আমি নানান রকমের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। যারা আমার সংগীত কর্মে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ, যারা বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছেন, সকল পর্যায়ের ভক্তদের কাছ থেকে সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির কিছু কথা বার্তা আমার কানে আসে। সেরকম একটি বুকে ভিতরে ব্যথা-বেদনায় আমার কাজ করতো। অনেকের প্রশ্ন ছিলো, ‘সংগীতশিল্পী হিসেবে আপনাকে বুকে ধারণ করেছি, রাজনীতির মাঠে আমরা একটু অশান্তি বা একটু কষ্ট পাই।’ এই রাজনীতির মাঠে এসে আমি ভেবে ছিলাম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে এই দলের সাথে আমি সংযুক্ত হই। এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওনি আহ্বান জানিয়েছিলেন কাজ করার জন্য। আমি তার কথায় এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি, বড় বড় পদও পেয়েছি। আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তেমন বড় কোন কারণ নাই। বলতে পারেন সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা থেকেই। রাজনীতির ভেতরে যে কৌশলগত দিক, রাজনীতির মধ্যে যে রাজনীতি থাকে, এটা আমার জানা ছিল না।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে তার বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণার ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটিতে থাকা যমুনা টিভির লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রচারিত ‘ক্ষোভে-অভিমানে বিএনপি ছাড়লেন মনির খান’ শিরোনামের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ৬ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ২ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে, এই ভিডিওর ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড অংশ থেকে ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড অংশ অর্থাৎ, ‘আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি এই দল থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি’ কথাটি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর শুরুতেও ব্যবহার করা হয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনটির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, মর্যাদা ক্ষুন্ন ও শৃঙ্খলা না থাকার অভিযোগ জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন, সঙ্গীতশিল্পী মনির খান। বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, রাজনীতির ভেতরেও যে রাজনীতি থাকে সেটি তার জানা ছিলো না। পদত্যাগপত্র বিএনপি মহাসচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, মনির খান। গত ১০ বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো বলেও মন্তব্য করেন এই সংগীত শিল্পী।’
অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণার এই ভিডিওটি ২০১৮ সালের।
উল্লিখিত প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে ‘বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন মনির খান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কণ্ঠশিল্পী মনির খান বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নেমেছিলেন ভোটের প্রচারণাতেও। কিন্তু শেষদিকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে তার মনোনয়ন। তার পরিবর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মতিয়ার রহমানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন মনির খান।
পরবর্তীতে মনির খান রাজনীতিতে ফিরেছেন কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ‘বিএনপির রাজনীতিতে ফিরছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবারও রাজনীতিতে আসছেন বলে জানিয়েছেন এই শিল্পী।
রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে মনির খান গণমাধ্যমকে জানান, সেই সময় অভিমান থেকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। অভিমানটা ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে বিএনপি মনির খানকে মনোনয়ন না দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
এছাড়াও, এই বিষয়ে কালের কন্ঠের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।
মনির খানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান বিষয়ে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাগোনিউজ২৪.কম এর ওয়েবসাইটে চলতি মাসের ১৩ তারিখ ‘বিএনপি থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বললেন মনির খান’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ১৩ জুলাইজাগো নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনির খান বলেন, ‘আমার এলাকার শত্রুপক্ষ এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। ২০১৮ সালের বিএনপির সঙ্গে আমার মনোমালিন্যের ঘটনাটিকে আমার শত্রুপক্ষ দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ মিথ্য তথ্য ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে অনেকেই আমাকে ফোন করছেন।’
নতুন করে সেই ঘটনা ছড়ানোর কারণ কি বলে মনে করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মনির খান বলেন, ‘বিএনপি থেকে নমিনেশন সংগ্রহ করলেই তো আমিই মনোনয়ন পাবো। এ বিষয়টি অনেকের সহ্য হচ্ছে না। বিএনপির সবাই তো আমার বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। যারা আমার ভালো চায় না, সেই শত্রুপক্ষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। মিথ্যা একটা ঘটনাকে আবার নতুন করে ছড়ানো হচ্ছে। ২০১৮ সালে একটা ঘটনার কারণে আমি বিএনপির পদ-পদবি থেকে দূরে সরে এসেছিলাম। আমি তো কখনো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করিনি।’
মনির খান আরও জানান, বিএনপির ভেতরের কিছু অসাধু লোক এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মনির খান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
সুতরাং, ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে কণ্ঠশিল্পী মনির খানের পদত্যাগ করার ঘোষণার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV : ক্ষোভে-অভিমানে বিএনপি ছাড়লেন মনির খান
- The Daily Star : বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন মনির খান
- Dhaka Tribune: বিএনপির রাজনীতিতে ফিরছেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান
- Kaler Kantho: রাজনীতিতে ফিরছেন মনির খান
- Jagonews24.com : বিএনপি থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বললেন মনির খান