বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চলাকালীন ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বাঙালি অফিসার মতিউর রহমান একটি যুদ্ধবিমান নিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করার সময় ওই বিমানে থাকা রশিদ মিনহাজ নামে পাকিস্তানী শিক্ষানবীশ পাইলটের সাথে ধস্তাধস্তির সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং দুজনই নিহত হন। মতিউর যেদিন নিহত হন সেই ২০ আগস্টই তিনি তাঁর স্ত্রী মিলি রহমানের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেছিলেন শীর্ষক একটি দাবি গেল কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে৷
প্রিয়তমা মিলি সম্বোধনে শুরু করা দীর্ঘ চিঠিটির শুরুর অংশটি এমন, “একটা চুম্বন তোমার পাওনা রয়ে গেলো…সকালে প্যারেডে যাবার আগে তোমাকে চুমু খেয়ে বের না হলে আমার দিন ভালো যায় না। আজ তোমাকে চুমু খাওয়া হয় নি। আজকের দিনটা কেমন যাবে জানি না… এই চিঠি যখন তুমি পড়ছো, আমি তখন তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। ঠিক কতোটা দূরে আমি জানি না। মিলি, তোমার কি আমাদের বাসর রাতের কথা মনে আছে? কিছুই বুঝে উঠার আগে বিয়েটা হয়ে গেলো।…..”

উক্ত দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট স্ত্রী মিলি রহমানের উদ্দেশ্যে আলোচিত চিঠিটি লিখেননি বরং আরিফ মঈনুদ্দীন নামে এক ব্যক্তি ২০১৩ সালে কাল্পনিক এই চিঠিটি লিখেছিলেন যা পরবর্তীতে মতিউরের লেখা বাস্তব চিঠি হিসেবে প্রচার পেয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০১৪ সালের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, চিঠিটি ভুয়া। মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমানের একটি সাক্ষাৎকারের বরাতে বলা হয়, আলোচিত চিঠিটি মতিউর রহমান লিখেননি৷ পরবর্তীতে চিঠিটি কার লেখা তা জানতে গভীর অনুসন্ধানের পর রিউমর স্ক্যানার জানতে পারে, ২০১৩ সালের ০৯ নভেম্বর আরিফ মঈনুদ্দীন নামে এক ব্যক্তি এই চিঠিটি পোস্ট করেছিলেন। চিঠিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট তিনি তার পোস্ট সম্পাদনা করে জানান, “চিঠিটি রূপক। কাল্পনিক অর্থে লেখা। কেউ বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ রইলো।” সে সময় তিনি কমেন্ট সেকশনেও একই তথ্য দেন।

পরবর্তীতে জনাব আরিফ মঈনুদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন যে এই চিঠিটি তারই লেখা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবি প্রচারের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।