বৃহস্পতিবার, মার্চ 28, 2024
spot_img

মিম পোস্ট সত্য বক্তব্য হিসেবে প্রচার, বিতর্কিত কাজী সালাউদ্দিন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিমস বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। মিমস আমাদের আনন্দ দেয়, হাসায়, মিমস বিনোদনের একটি অন্যতম উৎস।তবে এটি অনেক সময় মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিংবা কোন মিমস মিম হিসেবে প্রচারের পর পরবর্তীতে বিবর্তন হয়ে সত্য বিষয় হিসেবে প্রচারিত হয়। মিমের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য দাবানলের মতো বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। মিমস বিবর্তিত হয়ে সত্য বিষয় হিসেবে প্রচারের এ ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। ঠিক সেরকমই দাবানলের মতো বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে একটি মিম।

সম্প্রতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এর নামে পরিচালিত কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন ওরফে সভাপতি সালাউদ্দিন নামের একটি মিম পেজ থেকে সাফজয়ী মেয়েদের বিয়ের খরচ দেয়া সংক্রান্ত একটি বক্তব্য কাজী সালাউদ্দিন এর নামে প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এর নামে পরিচালিত এই ট্রল পেজ থেকে করা এই সার্কাজম পোস্টের ব্যানারটি পরবর্তীতে ডাউনলোড হয়ে কাজী সালাউদ্দিনের বক্তব্য হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। বিষয়টি কাজী সালাউদ্দিন এর সত্য বক্তব্য হিসেবে নিয়ে অনেকেই কাজী সালাউদ্দিন কে সমালোচনা ও আক্রমণ করে লেখালেখিও করেছেন। মিমটিকে সত্য হিসেবে নিয়ে, কাজী সালাউদ্দিন এর বক্তব্য হিসেবে নিয়ে প্রচার করেছে এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মিমটিকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে নিয়ে প্রচার করেছে অনেক জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিও। এই যেমন ব্যারিস্টার সুমন বক্তব্যটিকে কাজী সালাউদ্দিন এর বক্তব্য হিসেবে নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং যমুনা টেলিভিশনও সেটিকে সত্য হিসেবে নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ার ওপর সংবাদ প্রকাশ করেছে। (আর্কাইভ)

প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়, “সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের নারী দলের বিজয় প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতির করা একটি মন্তব্য এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেন, আজ একটা ছবি ভাইরাল হয়েছে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। সেখানে তাকে বলতে শুনলাম, মেয়েরা জেতার পর তাদের কিছু দিতে পারিনি, কিন্তু ওদের বিয়ের সময় আমি ওদের উপহার দেবো। এখন মেয়েরা জিততে না জিততেই যদি তাদের বিয়ে দেয়ার চিন্তা থাকে তাহলে তো….”

মিমটিকে সত্য হিসেবে নিয়ে ক্রিকেটার জুনাইদ সিদ্দিকী তার ভেরিফাইড পেজে মিম ব্যানারটি ডাউনলোড করে পোস্ট করেছেন। (পোস্ট আর্কাইভ)

বক্তব্যটি কাজী সালাহউদ্দিন সত্যি দিয়েছেন কি না এমন দ্বিধায় থেকে সত্যতা জানতে চেয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন এটিএন বাংলার নিউজ উপস্থাপিকা আখি ভাদ্র।

সেই পোস্টের কমেন্টে বিষয়টিকে সত্য হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নি সাহা। যদিও পরবর্তীতে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে কমেন্টের রিপ্লাইয়ে পরবর্তীতে সরি বলেছেন। অর্থাৎ সাংবাদিক মুন্নি সাহাও মিমটিকে প্রথমদিকে কাজী সালাউদ্দিন এর সত্য বক্তব্য হিসেবে নিয়েছিলেন।

তবে রিউমর স্ক্যানার এর ফ্যাক্টচেক প্রকাশিত হওয়ার পর এটিএন বাংলার নিউজ উপস্থাপিকা আখি ভাদ্র তার পূর্বের পোস্টটি সরিয়ে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার এর ফ্যাক্টচেক পোস্টটি শেয়ার করেছেন

মিম টি কাজী সালাউদ্দিন এর সত্য বক্তব্য হিসেবে নিয়ে শেয়ার করেছেন বুয়েটের শিক্ষক এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এনায়েত চৌধুরী এবং মডেল ও অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ। যদিও রিউমর স্ক্যানার এর ফ্যাক্টচেক প্রকাশিত হওয়ার পর নিজের শেয়ার পোস্টটি সরিয়ে নিয়েছেন এনায়েত চৌধুরী।

বক্তব্যটি সত্য হিসেবে নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে পোস্ট করেছিলেন সাংবাদিক আফরোজা সোমাও। তবে পরবর্তীতে তিনি পোস্টটিতে আপডেট যুক্ত করেছেন।

অনেকক্ষেত্রেই কোন তথ্য ছড়ানোর পর লোকজন যখন জানতে পারে তথ্যটি ভুয়া তখন তারা নীরবে পোস্টটি ডিলিট করে দেন। বন্ধুদের বা অনুসারীদের সাথে ভুয়া তথ্য শেয়ারের পর কেবল ডিলিট করাই ভালো পন্থা বা সমাধান নয়। বরং এতে তাদের অনেকেই মিসলিড হবে। তাই ভুলেও কখনও ভুয়া তথ্য শেয়ার করে ফেললে যখন তথ্যটি ভুয়া নিশ্চিত হওয়া যায় তখন পোস্টটি ডিলেটের পাশাপশি বন্ধু বা অনুসারীদের সাথে ফ্যাক্টটিও শেয়ার করা উচিত।

এছাড়াও আরো অনেকেই এই মিম পেজের পোস্টটিকে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এর সত্য বক্তব্য হিসেবে নিয়ে শেয়ার ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পোস্ট করেছেন। কাজী সালাউদ্দিনকে গালমন্দ করছেনও অনেকে। ফলশ্রুতিতে যে বক্তব্য তিনি দেননি সেই বক্তব্যের জন্যই সাফ জয়ের এই আনন্দঘন মুহুর্তে নেতিবাচক সমালেচনার স্বীকার হচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন।

কাজী সালাউদ্দিন এর এই মিমটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে গতকালই ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার

মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ যুগে ভুয়া তথ্য দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে পারে। নানান রূপেই ছড়াতে পারে ভুয়া তথ্য। সাম্প্রতিক সময়ে মিমস ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। কখনও সরাসরি মিমসের মাধ্যমে ডিসইনফরমেশন বা মিসইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। আবার কখনও কেবল একটি মিম পোস্ট প্রচার হতে হতে বিবর্তিত হয়ে একটা সময় সত্য বিষয় হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে।

মিমস একটা সময় সত্য হিসেবে প্রচারিত হওয়ার এই ঘটনাটিই বাংলাদেশে মিমস থেকে ভুয়া তথ্য বেশি ছড়াচ্ছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে মিমস বিবর্তিত হয়ে সত্য হিসেবে প্রচারের বিষয়টি পূর্বের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের দিনে দেশে এই বিষয়টি ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ভয়ানক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনকিছু শেয়ার করার পূর্বে নেটিজেনদের অবশ্যই যাচাই করে নেয়ার অভ্যাস তৈরি করা জরুরী। সচেতনতা ভুয়া তথ্য প্রতিরোধের অন্যতম মাধ্যম। যেকোন কিছু শেয়ারের পূর্বে তার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপর শেয়ার করে সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করুন।

কোন তথ্য শেয়ারের পূর্বে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন-

১. তথ্যটি কি সত্য?

২. তথ্যটির উৎস কি? উৎসটি কি নির্ভরযোগ্য? 

৩. তথ্যটি প্রকাশের তারিখ কত?

৪. তথ্যটি কি মিম বা স্যাটায়ার?

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img