সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সারাবিশ্বে তুমুল জনপ্রিয় ফেসবুক। জনপ্রিয়তার সাথে পাল্লা দিয়ে ফেসবুকে প্রচুর হ্যাকিংয়ের ঘটনাও দেখে আসছে বিশ্ব। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে সময়ে সময়ে হ্যাকিং রোধে মাধ্যমটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে আসছে ফেসবুক টিম৷ কিন্তু আইডি হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনা এখনও ভাবাচ্ছে এর ব্যবহারকারীদের। অ্যাকাউন্ট রক্ষায় অনেকেই তাই ফেসবুকের দেওয়া নির্দেশনার বাইরেও নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করছেন।
অ্যাকউন্ট রক্ষায় যে পদ্ধতি প্রচার হয়ে আসছে
১. ফেসবুকে Imran নামক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, “sticker comment please Ide plm” (স্টিকার কমেন্ট প্লিজ আইডি প্রবলেম)।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
২. ফেসবুকে Rita Das Roy নামক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়,

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন আরো কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুকের পথচলা
২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারীর দিনটার কথা আজও কি মনে পড়ে মার্ক জাকারবার্গের? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকারবার্গ সেদিন হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের একে অন্যের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যে ফেসবুক চালু করেন। ফেসবুককে এরপর আর সীমিত গন্ডিতে আটকে রাখা যায় নি। দিন যত পেরিয়েছে সামাজিক এই মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ফেসবুক গেল বছর পর্যন্ত ফেসবুক ইনকরপোরেশনের অধীনে থাকলে গত বছরের ২৮ অক্টোবর মূল প্রতিষ্ঠানের নাম মেটা (Meta) ঘোষণা করেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। এতদিন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ অন্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক ইনকরপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হলেও এখন মেটা’র অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

পরিসংখ্যান ভিত্তিক বৈশ্বিক সংস্থা statista এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই মুহূর্তে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৯৩ কোটি। সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তার বিচারে ফেসবুকের ধারেকাছেও নেই কেউ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউটিউবের ব্যবহারকারী ২৫৬ কোটি।

বাংলাদেশেও যে সমান জনপ্রিয় ফেসবুক সেটি বোঝা যায় পরিসংখ্যান দেখে৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ এবং সর্বোচ্চ ফেসবুক ব্যবহারকারীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বিটিআরসির ওয়েবসাইটের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জুন-২০২২ এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নষ্ট বা ডিজেবল হয় কীভাবে?
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল বা নষ্ট হয় ব্যবহারকারীর ভুলে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুকের নিয়মনীতি ভঙ্গ করলেই অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু উদাহরণ সামনে এনেছে ফেসবুক। যেমন: এমন কোনো কনটেন্ট পোস্ট করা যা ফেসবুক টার্মের বিরুদ্ধে যায়, ফেক বা ভুয়া নাম ব্যবহার করা, অন্য কারো নামে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার, ফেসবুকে এমন ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া যা ফেসবুকের নিয়ম এবং কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বিরুদ্ধ এবং হয়রানি, বিজ্ঞাপন, প্রচার বা অন্য কোনো আচরণের উদ্দেশ্যে অন্য লোকেদের সাথে যোগাযোগ করা যা অনুমোদিত নয়। হ্যাকিংয়ের পর হ্যাকারদের একটিভিটির কারণেও অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে যেতে পারে।

অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়ার আগে সাধারণত ফেসবুক সতর্ক করে ব্যবহারকারীকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবহারকারী কোনো ধরনের নোটিশ না পেয়েই তার অ্যাকাউন্ট হারিয়ে ফেলেন। অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হলে ফেসবুকে লগইন করা যাবে না, সে সময় স্ক্রিনে ডিজেবল সংক্রান্ত একটি মেসেজ দেখা যাবে। এর বাইরেও লগইনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় কীভাবে?
মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট The Network Pro এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাধারণত তিনভাবে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের শিকার হতে পারে। প্রথমটি ফিশিং (Phishing)। হ্যাকারদের জন্য মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হিসেবে দেখা হয় ফিশিংকে। ফিশিং মূলত এক ধরনের স্ক্যাম যেখানে হ্যাকাররা একটি ফেসবুক লগইন পেজ তৈরি করে যা দেখতে হুবহু আসল অ্যাকাউন্টের মতো। তারা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট কারণে লগ ইন করতে বলে জাল ইমেইল পাঠায়। ব্যবহারকারীরা তারপরে ইমেইলের লিঙ্কটিতে ক্লিক করেন যা তাদের জাল ফেসবুক লগইন পৃষ্ঠায় নিয়ে যায়। একবার তারা তাদের লগইন সংক্রান্ত তথ্যগুলো প্রবেশ করালে ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড সহ সমস্ত ডেটা হ্যাকারের ইমেইলে চলে যায়। ব্যবহারকারীরা প্রায়ই এই স্ক্যামের জন্য হ্যাকিংয়ের শিকার হয় কারণ একটি পৃষ্ঠা জাল কিনা তা বলা কঠিন।
দ্বিতীয়টি সংরক্ষিত পাসওয়ার্ডের ক্ষতিকারক ব্যবহার। বেশিরভাগ মানুষই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে বা তাদের ব্রাউজারে তাদের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে কারণ এটি সুবিধাজনক। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে অ্যাক্সেস পেয়ে সহজেই সংশ্লিষ্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।
তৃতীয়টি কীলগিং (Keylogging)। এই প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট ধরনের ম্যালওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকে যা ব্যবহারকারীর টাইপ করা সবকিছু রেকর্ড করে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত ভুলবশত এই ম্যালওয়্যারটি ডাউনলোড করে। কিছুক্ষেত্রে তারা এমনকি লক্ষ্যও করে না যে এটি তাদের ডিভাইসে ডাউনলোড করা হয়েছে। এটি ডিভাইসে থাকলে, একটি কীলগিং সফটওয়্যার টেক্সট, মেসেজ, ইমেইল এবং ডিভাইসে অন্য যেকোন ধরনের টেক্সট সহ ব্যক্তির টাইপ করা সবকিছু রেকর্ড করে। হ্যাকাররা পরে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে এই তথ্য ব্যবহার করে। সফটওয়্যারটি আপনার অজান্তেই ডিভাইসে ডাউনলোড হয়ে যায় বলে একে হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে বিপদজনক উপায় হিসেবে দেখা হয়।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, আপনার অজান্তেই আপনার ইমেইল অথবা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হলে, নাম অথবা জন্মতারিখ পরিবর্তন হলে, এমন কাউকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠানো যাকে হয়তো আপনি চেনেন না, এমন মেসেজ পাঠানো যা হয়তো আপনি লিখেন নি, এমন পোস্ট বা বিজ্ঞাপন দেওয়া যা হয়তো আপনার দ্বারা দেওয়া হয় নি – এমন ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করলেই বুঝবেন ফেসবুক অ্যাকাইন্ট হ্যাক হয়েছে।

ডিজেবল বা হ্যাক হলে কী পদক্ষেপ নিতে বলেছে ফেসবুক?
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফেসবুকের এলগরিদম ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কোনো অ্যাকাউন্টকে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধ মনে করে আপনার অ্যাকাউন্টকে ডিজেবল করে দেয়। এক্ষেত্রে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়েছে একটি ফর্ম পূরণ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে। এই ফর্মটি ফেসবুকের Help Center পেজে পাওয়া যায়। (এখান থেকেও দেখতে পারেন) এই ফর্মে আপনার ইমেইল ঠিকানা, পুরো নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (jpeg format) ফাইল আপলোড করতে হয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাকাউন্ট যখন ডিজেবল হয় তখন সেটি টেম্পোরারি ডিজেবল হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে ৩০ দিন পর সেটি পুরোপুরি ডিজেবল হয়ে যায়। তখন আর অ্যাকাউন্টটি ফিরে পাওয়া যায় না। তবে এই ৩০ দিনের মধ্যে যদি ফেসবুকের দেওয়া ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য ফেসবুকের কাছে পাঠানো হয় সেক্ষেত্রে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্টটি আবার রিভিউ করে দেখে। কোনো সমস্যা না পেলে অ্যাকাউন্টটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এমন সন্দেহ করলে শুরুতেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে এবং লগইন একটিভিটি রিভিউ করে দেখতে হবে আপনি ছাড়া আর কে কখন লগইন করেছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি দেখেন অ্যাকাউন্টে আপনার ডিভাইস ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস দিয়ে লগইন করা আছে তখন সেই সন্দেহজনক ডিভাইসগুলো রিমুভ করে দিতে হবে। এরপর ফেসবুক সাপোর্ট টিমের সহায়তা নিতে পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক। সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টে Help Center অপশনে গিয়ে সহায়তা নিতে হবে। (এই পেজে গিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে)

কিন্তু যদি আপনি অ্যাকাউন্টেই প্রবেশ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে ফেসবুক পরামর্শ দিয়েছে সরাসরি ফেসবুকের হ্যাকড নামক পেজে গিয়ে অভিযোগ জানাতে। এক্ষেত্রে ইমেইল বা মোবাইল নম্বর দিতে হবে।

অ্যাকাউন্টে সমস্যা হলে স্টিকার কমেন্ট কাজে দেয়?
বাংলাদেশ এবং ভারতে অ্যাকাউন্টে সমস্যাজনিত কারণে প্রায়ই পোস্টে স্টিকার কমেন্ট করার অনুরোধ করে ব্যবহারকারীরা।

বিবিসি বাংলা বরগুনার এক তরুণীর সাথে কথা বলেছিল যিনি এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, ” কিছুদিন আগে তিনি ফেসবুক থেকে নোটিশ পান যে, তার আইডিতে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। এরপর তার একজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি লেখেন, যাতে কোন কারণে আইডি হারিয়ে গেলেও সেটি পুনরুদ্ধার করা যাবে বলে তার আশা।”
প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়, “এ ধরণের মন্তব্যের মাধ্যমে ফেসবুকে সংযোগ বাড়তে পারে, তবে আইডি রক্ষা বা নিরাপত্তার সঙ্গে এর কোন সম্পর্কে নেই।”

জাতীয় দৈনিক যুগান্তর‘কে একই মত দিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) আলীমুজ্জামান। তিনি জানান, “স্টিকার কমেন্ট করে কখনো আইডি হ্যাকের হাত থেকে বাঁচানো যায় না। এ ধরনের স্ট্যাটাস শুধুমাত্র ফেসবুকে সংযোগ বাড়তে পারে।”
ফেসবুক অত্যাধিক কমেন্টের ফলে কি রিচ বাড়ে?
২০২১ সালের ২০ মে ফেসবুকে Sahriar Sayem নামক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হয়। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, “আইডিতে সমস্যা হইছে, ঠিক হইতে নাকি প্রচুর স্টিকার কমেন্ট লাগবে Sticker comment needed।”

রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সায়েমের সাথে। তিনি বলেন, “সবাই বলতো যে রীচ কমে গেলে তখন কোন পোস্টে বেশি কমেন্ট আসলে রীচ বাড়ে।”
পোস্ট করার পর উপকার পেয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, “সাময়িক কিছু উপকার পেয়েছি। পরে আবার আগের মতো। যদিও আমি অতটা রেগুলার পোস্ট করি না।”
ফেসবুকের সাধারণ ব্যবহারকারীরা যে রিচ ডাউনের অভিযোগ করে আসছেন সেটি মূলত অর্গানিক রিচ। এই ধরনের রিচ পেইড বা টাকা দিয়ে কেনা নয়। ধরুন, আপনার প্রোফাইলে হাজারখানেক মানুষ যুক্ত আছেন। কিন্তু কোনো পোস্ট করলে সেই তুলনায় আশানুরূপ রিয়েক্ট বা কমেন্ট পাছেন না। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, অর্গানিক রিচ কমে গিয়েছে।
কেন এমন হয়- এই প্রশ্নে ফেসবুকের এডস প্রোডাক্ট টিমের সাবেক প্রধান ব্রিয়ান বোলান্ড (Brian Bolan) বলছেন, প্রথম কারণ খুবই সাধারণ। আগের তুলনায় এখন প্রতিদিন প্রচুর কন্টেন্ট পোস্ট করা হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী যখন ফেসবুকে লগইন করেন তখন গড়ে ১৫০০ স্টোরি তার সামনে আসে। এর ফলে প্রতিযোগিতা বাড়ে, কোন পোস্টটি নিউজফিডে আগে আসবে তা নিয়ে। দ্বিতীয় কারণের সাথে নিউজ ফিড কীভাবে কাজ করে তা জড়িত। সমস্ত সম্ভাব্য বিষয়বস্তু ব্যবহারকারীকে দেখানোর পরিবর্তে ফেসবুকে প্রতিটি ব্যক্তিকে তাদের জন্য সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু দেখানোর জন্য নিউজ ফিড ডিজাইন করা হয়েছে। ফেসবুকে লগ ইন করার সময় একজন ব্যক্তি যে দেড় হাজারের বেশি পোস্ট দেখতে পারেন, তার মধ্যে নিউজ ফিড প্রায় ৩০০ টি পোস্ট প্রদর্শন করে। কোন পোস্ট দেখাতে হবে তা বেছে নিতে, নিউজ ফিড প্রতিটি সম্ভাব্য পোস্টকে (বেশি থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ) প্রতিটির সাথে সম্পর্কিত হাজার হাজার ফ্যাক্টর দেখে রেঙ্ক করে।
ব্রিয়ান জানান, আমাদের পরীক্ষায় আমরা সবসময় দেখেছি যে নিউজ ফিড র্যাঙ্কিং সিস্টেম ফেসবু্কে মানুষকে আরও ভালো আরও আকর্ষক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। ফেসবুক তার আয় বাড়াতে এমন করে না বলেও জানান তিনি।

রিচ বা এনগেজমেন্ট বাড়াতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কমেন্ট করার যে অনুরোধ জানিয়ে থাকেন এটিকে ফেসবুক কমেন্ট বেটিং (Comment Bating) হিসেবে অভিহিত করেছে। মূলত এই প্রবণতা Engagement Bating এর অংশ।

এক পোস্টে ফেসবুক জানিয়েছে, রিয়েক্ট, ট্যাগ এবং শেয়ারও এই এংগেজমেন্ট বেটিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। এতে রিচ বাড়ে কি না সে বিষয়ে ফেসবুক কিছু না জানালেও এই ধরনের পোস্টের বিষয়ে ফেসবুকের কঠোর অবস্থানের কথা এসেছে একই লেখায়।
বিগত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুক টিম এই ধরনের পোস্টগুলো নিয়ে কাজ করছে। বিশেষত কমেন্ট বেটিংয়ের ব্যাপারে ২০১৮ সালে কঠোর অবস্থানে যায় ফেসবুক। সে বছর থেকে এই ধরনের পোস্টের কমেন্টগুলো অবনমন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফেসবুকের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশিকা নেই। তারা বলছে, “আমরা আরও নির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ করছি না কারণ আমরা চাই না যে লোকেরা ফিড র্যাঙ্কিংয়ের সুবিধা নেওয়া চালিয়ে যেতে এইগুলো ব্যবহার করুক।”

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
স্টিকার কমেন্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট রক্ষা এবং রিচ বাড়ানোর বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে মেটা’র ডেভেলপার সার্কেলের ঢাকা শাখার প্রধান আরিফ নিজামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “এ ধরনের কোনো পরামর্শ বা নির্দেশনা দেওয়া হয় নি ফেসবুকের পক্ষ থেকে। এগুলো সবই ভুয়া।”
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে ফেসবুক টিম এবং বাংলাদেশে ফেসবুকের পলিসি হেড সাবহানাজ রশিদ দিয়া’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই লেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত কেউই সাড়া দেন নি।
অর্থাৎ, বিগত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে স্টিকার কমেন্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট রক্ষা এবং রিচ বাড়ানোর প্রচার হয়ে আসছে। অথচ এই পদ্ধতির কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই ধরনের কমেন্ট করার ফলে কমেন্ট অবনমনের মতো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক টিম।
তথ্যসূত্র
- Statista : Most popular social networks worldwide as of January 2022, ranked by number of monthly active users
- History.com : Facebook launches
- Statista : Number of monthly active Facebook users worldwide as of 2nd quarter 2022
- Facebook : Disabled Accounts
- The Network Pro : 3 Ways Your Facebook Account Can Get Hacked and How to Prevent It
- Facebook : Hacked and Fake Accounts
- বিবিসি বাংলা : ফেসবুক স্ট্যাটাস: পিকচার বা স্টিকার কমেন্ট আইডি বাঁচাতে পারে?
- Jugantor : ফেসবুকে স্টিকার কমেন্ট কি আইডি বাঁচাতে পারে?
- Facebook : Organic Reach on Facebook: Your Questions Answered
- Facebook : Fighting Engagement Bait on Facebook
- Facebook : How to Avoid Posting Engagement Bait on Facebook
- Facebook : Introducing Meta: A Social Technology Company
- বিটিআরসি : ইন্টারনেট গ্রাহক