ব্লু টিক প্রদানে ত্রুটিপূর্ণ ফেসবুকের ব্যবস্থাপনা; বিভ্রান্ত গণমাধ্যম

একসময় মানুষ আদিম যুগে বাস করতো। এরপরে ধীরে ধীরে সভ্যতার পথ বেয়ে পৃথিবী এগিয়ে গেল শিল্প বিপ্লব আর নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে। চাকার আবিস্কারকে এক যুগান্তকারী ও ইতিহাস বদলের মতো বিষয় ধরা হয় তেমনি বাষ্পীয় ইঞ্জিন, বিদ্যুৎ, কম্পিউটার এবং সর্বোপরি ইন্টারনেট এর আবিষ্কার পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে আমূল। ইন্টারনেট অধ্যায়ের নানাবিধ রূপান্তর আর ব্যবহারের মধ্য থেকে নতুন আর এক দিগন্ত সৃষ্টি করেছে ভার্চুয়াল উপস্থিতি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

সময়ের সাথে সাথে সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেড়েছে এবং প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। নানান ধরণের মানুষ যুক্ত হয়েছে এই মাধ্যমগুলোতে। ফলে সময়ের প্রয়োজনীয়তায় বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং ফিচারকে আত্মীকরণ করেছে মাধ্যমগুলো। একই নামের ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রের আলাদা করে সতর্ক করতে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একজন ব্যবহারকারী বা তারকার নামে খোলা অনেকগুলো পেজ থেকে আসল পেজকে আলাদাভাবে চেনার জন্যই ভেরিফাইড চিহ্ন (ব্লু টিকমার্কসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমজাতীয় বিভিন্ন আইকন) যুক্ত করেছে।

কিন্তু হাল আমলের বেশকিছু ঘটনায় দেখা গেছে একজনের নামে খোলা ভুয়া পেজ অন্য কেউ ভেরিফাইড করে পরিচালনা করছে। যদিও ফেসবুকের ক্ষেত্রে এসকল উদাহরণ পাওয়া গেছে ফেসবুকের অর্থের বিনিময়ে ব্লু ভেরিফাইড সুবিধা চালুর পূর্বেই (কেননা প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এই সুবিধা চালু হবে)। ইতোমধ্যে টুইটার অর্থের বিনিময়ে ব্লু ভেরিফাইড সুবিধা চালু করেছে, ফেসবুকও করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমন অবস্থায়  ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে আসল অ্যাকাউন্ট আর নকল অ্যাকাউন্ট চেনা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে এই বিষয়টি আরো কঠিন হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Image: sproutsocial.com

ব্লু ভেরিফাইড কী

ব্লু ভেরিফাইড বা ব্লু টিক মার্ক ভেরিফাইড হলো কোনো নির্দিষ্ট প্রোফাইল, অ্যাকাউন্ট বা পেজ’কে সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে এই মর্মে নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি (অ্যাকাউন্ট সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি) ঐ অ্যাকাউন্টের নামের পাশে টিক মার্ক সম্বলিত একটি নীল রং এর আইকন যুক্ত করে দেয়। সাধারণত একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার একটি প্রোফাইল অথবা একটি পেজকে এই সুবিধা দেয় কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকের এমন নীতিমালার উল্লেখ দেখুন নিচে।

Screenshot: Facebook help center

ফেসবুকের যে ভুলে বিভ্রান্ত দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম

ইতোপূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে যে সাধারণত ফেসবুকে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হুবহু একই নামের দুটি হ্যান্ডেল (পেজ বা প্রোফাইল) ভেরিফাইড করে না। এ কারণে ফেসবুকে কোনো তারকার ভেরিফাইড পেজ এর কন্টেন্ট সহজেই বিশ্বাসযোগ্য সবার কাছে।

কিন্তু দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ফ্রান্সের তারকা খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পের নামে সার্চ করলে হুবহু একই নামের দুটি ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook search result page

সার্চ বক্সসহ রেজাল্টের ফেসবুক ফিড দেখুন নিচেঃ

Screenshot: Facebook search result page

এমবাপ্পের ভুয়া পেজটির বিশ্লেষণ

পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে দেখা যায় যে পেজটি ভিয়েতনাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। অথচ এমবাপ্পে ফ্রান্সের খেলোয়াড় এবং ক্লাব ফুটবলেও তিনি ফ্রান্সের-ই একটি ক্লাবে খেলছেন। সেক্ষেত্রে তার রিয়েল পেজ হলে সেটি ফ্রান্স থেকে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। [আসল পেজটি ফ্রান্স থেকেই পরিচালিত হচ্ছে]

এখানে উল্লেখ্য যে, কোনো তারকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট যদি কোনো এজেন্সি বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের মাধ্যমেও পরিচালিত হয় সেক্ষেত্রে সাধারণত খেলোয়াড়ের নিজ দেশের-ই এজেন্সি বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বা পেজ এফিলিয়েশন ট্রান্সপারেন্সিতেই উল্লেখ থাকে। এর বাইরে অনেকক্ষেত্রে আলোচিত তারকা নিজের লগিন করা কিংবা তারকার অ্যাকাউন্ট থেকেই পেজ ক্রিয়েট করাসহ বিভিন্ন কারণেই সত্যিকারের পেজটি সেই তারকার নিজ দেশ ব্যতীত শুধুমাত্র ভিন্ন একটি দেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ নেই।

Image: Collage of two page’s transparency

তবে নিজদেশসহ একইসাথে বিভিন্ন কারণে আরো কয়েকটি দেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যেমনঃ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ। দেখুন নিচের ছবিতেঃ

Screenshot: Facebook/Cristiano Ronaldo

এছাড়াও এমবাপ্পের নামে তৈরি দুটি পেজের মধ্যে লাইক, কমেন্ট কিংবা শেয়ারের ক্ষেত্রেও নানাবিধ পার্থক্য দেখা যায়। আসল পেজটিতে 17M followers , অপরদিকে ভুয়া (ভেরিফাইড) পেজটিতে মাত্র 1.1M followers।

Image: Collage of two page’s transparency

ফেসবুকের এই ভুল থেকে দেশীয় গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি

কিলিয়ান এমবাপ্পে’র এই দুটি ভেরিফাইড পেজ এর একটি তার নিজের এবং অন্যটি তার নামে পরিচালিত ফেক বা ভুয়া পেজ। যেহেতু ভুয়া পেজটিও ভেরিফাইড তাই এই পেজের কন্টেন্টকেও অনেকে সত্যিকারের কিলিয়ান এমবাপ্পের পেজের কন্টেন্ট ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়। উপরে বর্ণিত ফেসবুকের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী এই ভুয়া পেজটি যে ফেসবুকের ভুলেই ভেরিফাইড হয়েছে তা বলা যায়। 

এই ভুয়া কিন্তু ভেরিফাইড পেজটির একটি কনেন্ট থেকে তথ্য নিয়ে দেশীয় মুলধারার গণমাধ্যম “সময় টেলিভিশন‘ একটি ভিডিও প্রতিবেদন ও সাধারণ ওয়েব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

Screenshot: Somoy TV youtube

মোদ্দাকথা, পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো ফেসবুক পেজটি ফ্রেঞ্চ তারকা এমবাপ্পের আসল পেজ নয় বরং এমবাপ্পের নামে তৈরি একটি ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত পোস্টটি করা হয়েছিল। এছাড়া এমবাপ্পের ফেসবুক ব্যতীত অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও রোনালদোকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়নি। 

বিষয়টি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন পড়া যাবে এই লিংকে

Screenshot: rumorscanner

ফেসবুকের ভুলে ভেরিফাইড হয়ে যাওয়া ভুয়া ফেসবুক পেজসমুহ

আর এক ফরাসি তারকা ও স্পেনের ফুটবল ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদের খেলোয়াড় অহেলিয়া চুয়ামেনির নামেও একটা ভুয়া ফেসবুক পেজ’কে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভেরিফাইড করে দেয়। পেজের ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে জানা যায়, পেজটি ২০২১ সালের ০৫ ডিসেম্বর খোলা হয়েছে এবং পেজটির পরিচালনায় রয়েছেন মরক্কোর দুইজন এবং ইজিপ্ট বা মিশরের একজন অ্যাডমিন। অথচ চুয়ামেনি একজন ফরাসি ফুটবলার, যিনি ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দল এবং স্পেনের ফুটবল ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদের হয়ে খেলেন এবং যে দেশগুলো থেকে তার নামে তৈরি ভেরিফাইড পেজ চালানো হচ্ছে সে দেশের সাথে তার কোনো যোগসূত্রই নেই।

Screenshot: Fake Aurélien Tchouaméni page

অন্যদিকে চুয়ামেনির ভেরিফাইড টুইটার প্রোফাইল থেকে জানা যায় তার কোনো ফেসবুক প্রোফাইল নেই। নিজের টুইটারের বায়োতেই এই তথ্য লিখে রেখেছেন তিনি।

Screenshot: Aurélien Tchouaméni Twitter

অনুসন্ধানে আরো দেখা যায় যে গত ২৪ নভেম্বর (২০২২) সময়েও তিনি তার টুইটার বায়োতে “নো ফেসবুক” বা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই সেটা উল্লেখ করেননি। যেহেতু আলোচিত ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ১০/১১ দিন পর তৈরি এবং বর্তমানে তিনি তার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে তার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট/পেজ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। সেহেতু ধারণা করা যায় তিনি এই ভুয়া পেজটি দেখেই তার টুইটার বায়ো হালনাগাদ করেছেন। 

এছাড়াও, আলেহান্দ্রো গার্নাচো নামের একটি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। পেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে টুইটারে একটি হ্যান্ডেলে এই পোস্টটিকে আলেহান্দ্রো গার্নাচোর করা পোস্ট নয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ, টুইটার হ্যান্ডেলটির দাবি অনুযায়ী পেজটিও আলেহান্দ্রো গার্নাচোর নয়। [এই টুইটে অহেলিয়া চুয়ামেনির ভুয়া ফেসবুক সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছিল।]

Image: Fake page’s screenshot from Twitter/The CR7 Timeline

পেজটি থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে একটি পোস্ট-ও করা হয়। যদিও পোস্টটির আর্কাইভ কপি রাখা সম্ভব হয়নি তবে পেজটির লিংকটি সংরক্ষণে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও পেজটির ট্রান্সপারেন্সি ইনফরমেশনের একটি স্ক্রিনশটও রাখা হয়েছিল।

দেখা যাচ্ছে পেজটি তৈরি করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি। Screenshot: Facebook

কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে দেখা যায় যে, পেজটি এখন আর ফেসবুকে নেই। পেজের লিংকটি-ও এখন আর কাজ করছেনা। এই নাম ও কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও পেজটি এখন আর ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যায়না।

অর্থাৎ, পেজটিকে ফেসবুক কর্তৃক অথবা ক্রিয়েটর কর্তৃক ডিলেট করা কিংবা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে (সাময়িক কিংবা চিরস্থায়ীভাবে)। যেহেতু একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে গার্নাচোর এই ফেসবুক পোস্টটিকে এবং পেজটিকে ভুয়া দাবি করা হয়েছে এবং পেজটি এখন আর সচল নয় তাই বলা যায় যে পেজটি গার্নাচোর নিজের অফিশিয়াল পেজ ছিলনা। কেননা গার্নাচোর অফিশিয়াল পেজ হলে তা ডিলিট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে, ফেসবুকে সার্চ করে আলেহান্দ্রো গার্নাচো নামে আলোচিত ভেরিফাইড পেজটি ব্যতীত আরো একটি ভেরিফাইড পেজ (কভার ছবি এবং প্রোফাইল ছবি দেওয়া নেই এমন) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Alejandro Garnacho’s Fake page

খুঁজে পাওয়া এই ভুয়া তবে ভেরিফাইড পেজটিতে প্রথমত কভার ছবি এবং প্রোফাইল ছবি দেওয়া নেই। দ্বিতিয়ত পেজটির ইউআরএল এ NadamOfficila উল্লেখ করা। 

Screenshot: Alejandro Garnacho’s Fake page

এছাড়াও পেজটির ইন্ট্রোতে nadamoussaofficial ইউজারনেম এর একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ও নাদা মুসা নামের একটি উইকিপিডিয়া নিবন্ধের লিংক যুক্ত করা আছে। এ থেকে ধরে নেওয়া যায় যে পেজটি “নাদা মুসা” নামের একজন মিশরীয় অভিনেত্রীর।

Screenshot: Alejandro Garnacho’s Fake page

এই পেজটি-ই যে আলোচিত (ইতোমধ্যে ডিলিট) পেজ নয় সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে ট্রান্সপারেন্সি অপশনের পেজ দুটি তৈরির তারিখের ভিন্নতা থেকে।

দেখা যাচ্ছে যে এই পেজটি (ভুয়া কিন্তু এখনও সচল) তৈরি হয়েছে ২০২১ সালের ১১ই ডিসেম্বর। আর আগের পেজটি (যেটি ডিলিট করা হয়েছে) তৈরি করা হয়েছিল ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি। এছাড়াও এই পেজটির ক্যাটাগরি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে Actor, যা আলেহান্দ্রো গার্নাচোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আর্জেন্টাইন ফুটবলার এনজো ফার্নান্দেজ এর নামে খোলা ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি ২০২২ সালের ১৬ই আগষ্ট খোলা হয়েছে। পাকিস্তান (২ জন এডমিন) ও মরোক্কো (১ জন এডমিন) থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ফার্নান্দেজ এর নিজ দেশ আর্জেন্টিনা থেকে নয়। এছাড়াও ফার্নান্দেজ এর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তার অফিশিয়াল টুইটার ও টিকটকের লিংক এর ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি ফেসবুক থাকতো তাহলে ফেসবুকের ব্যাপারেও উল্লেখ করা থাকতো। এই ভুয়া ভেরিফাইড পেজটি ব্যতীত তার নামে আর কোনো ভেরিফাইড পেজও নেই। অর্থাৎ, এনজো ফার্নান্দেজ ফেসবুক ব্যবহার করেননা।

Screenshot: Collage of fake page’s and real instagram info

উরুগুয়ের ফুটবলার রোনাল্ড আরাউহো এর ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি-ও পরিচালিত হচ্ছে পাকিস্তান (২ জন এডমিন) ও মরোক্কো (২ জন এডমিন) থেকে। উপরে বর্ণিত এনজো ফার্নান্দেজ এর মতো, তবে তার নিজ দেশ উরুগুয়ে। এছাড়াও তিনি স্পেনের একটি ক্লাবের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেন। 

Screenshot: Fake Ronald Araujo page

রোনাল্ড আরাউহো এর অফিশিয়াল টুইটারে তিনি তার নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এর যে লিংকটি দিয়েছেন সেটিতে প্রবেশ করে দেখা যায় যে পেজটি এখনো ভেরিফাইড হয়নি। অর্থাৎ, ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি তার নয়।

Screenshot: Twitter/Ronald Araujo

স্প্যানিশ ফুটবলার ফুটবলার পাবলো গাভী এর ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি-ও পরিচালিত হচ্ছে ভিয়েতনাম (২ জন এডমিন) থেকে। পেজটি খোলা হয় ২০২২ সালের ১৫ই এপ্রিল।

Screenshot: Fake Pablo Gavi’s page 

অথচ পাবলো গাভী স্পেনের খেলোয়াড় এবং ক্লাব ফুটবলেও স্পেনের একটি ক্লাবের হয়ে খেলেন তিনি।

Screenshot: Fake Pablo Gavi’s page 

সুইজারল্যান্ডের নারী ফুটবল খেলোয়াড় আলিশা লেহম্যান এর নামেও ভুয়া ফেসবুক পেজ ভেরিফাইড হয়ে গেছে। 

Screenshot: Fake Alisha Lehmann page

পেজটি Shilpa Ganesh নামে খোলা হলেও ২০২৩ সালের ২৩শে জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে “Alisha Lehmann” রাখা হয়। পেজটি মরোক্কো এবং পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়।

Screenshot: Fake Alisha Lehmann pages transparency 

ফেসবুকের ভুল থেকে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে (ক্রীড়া) বিভ্রান্তি

গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি অহেলিয়া চুয়ামেনির নামের ভুয়া ভেরিফাইড পেজটিতে রোনালদোকে নিয়ে একটি পোস্ট আপ্লোড করতে দেখা গেছে। পোস্টের ক্যাপশন ছিল “For me you will always remain the best in history no matter what. You’re the greatest of all time without any doubt.”।

Screenshot: Fake Aurélien Tchouaméni page

এই পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যাবহার করে রোনালদোর ছবি সংযুক্ত করে আমেরিকান বহুজাতিক ক্রীড়া ভিত্তিক মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন ইনকর্পোরেটেড এর ফুটবল ভিত্তিক প্রোগ্রাম (সাইট) ইএসপিএন এফসি এর ফেসবুক পেজ এবং টুইটারেও আপ্লোড করা হয়। অর্থাৎ, ইএসপিএন এফসি কর্তৃপক্ষ অহেলিয়া চুয়ামেনির নামের ভুয়া পেজটির পোস্টকে সত্যিকার অহেলিয়া চুয়ামেনির পোস্ট ভেবে তা শেয়ার (নিজেরা পোস্টের তথ্য আপ্লোড) করেছেন।

Screenshot: Twitter/ESPNFC

[ ইএসপিএন এফসি  (আগে ছিল ইএসপিএন সকারনেট) টেলিভিশন স্টুডিও প্রোগ্রাম যা সকার কভার করে যা প্রতিদিন স্ট্রিমিং পরিষেবা ESPN+ এর মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। ]

একইভাবে,  আলেহান্দ্রো গার্নাচোর নামের খোলা ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এর পোস্টটিকেও সত্যিকারের আলেহান্দ্রো গার্নাচোর অফিশিয়াল পোস্ট ভেবে সেটিও ইএসপিএন তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং টুইটারে শেয়ার করেছে (পোস্টের স্ক্রিনশট কিছুটা সম্পাদিত একটি টেমপ্লেটে)।

Image: Fake page’s screenshot from Twitter/The CR7 Timeline

এই ভুয়া ভেরিফাইড পেজের পোস্টটির অস্বিত্ব এখন আর না পাওয়া গেলেও এটিকে হুবহু কপি করে তার নামে খোলা আরো একটি ভুয়া পেজে পোস্ট করা অবস্থায় পাওয়া যায়। সেই পোস্টটি দেখুন এখানে

Screenshot: Twitter/ESPN FC

কিন্তু গার্নাচোর অফিশিয়াল টুইটারে রোনালদোকে নিয়ে একই ক্যাপশনে বা সমজাতীয় কোনো টুইট পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের পোস্টকে সত্য ভেবে শেয়ার করেছে ইএসপিএন এর ফুটবল বিষয়ক অফিশিয়াল পেজ ও টুইটার হ্যান্ডেলে (ESPN FC)।

আর গণমাধ্যম কিংবা ক্রীড়া সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে এই ভুলগুলো হয়েছে ফেসবুকের ভেরিফিকেশন (ব্লু টিক) প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে।

ফেসবুকের ভুল থেকে ক্রীড়া ভক্তদের মাঝে বিভ্রান্তি

গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভুয়া ভেরিফাইড এই পেজটির কন্টেন্ট শেয়ার দেওয়া সহ পেজটিকে মেনশন করে অনেক মন্তব্য পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এমন দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

Screenshot: Facebook/Page

অহেলিয়া চুয়ামেনির ভুয়া ফেসবুক পেজ এর পোস্ট থেকে বিভ্রান্ত হওয়ার নমুনা দেখা যাবে এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে (ফেসবুক)। এছাড়াও টুইটার পোস্টগুলো দেখা যাবে  এখানে, এখানে এবং এখানে

মেসি, রোনালদো এবং মেসির স্ত্রী ও রোনালদোর বান্ধবীর নামে ভুয়া ভেরিফাইড পেজ ফেসবুকে

ফেসবুকের এই ত্রুটির কারণে ভুয়া পেজ ভেরিফাইড হয়ে গেছে মেসি, রোনালদো, মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো এবং রোনালদোর বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ এর নামে-ও। অর্থাৎ, বর্তমানে মেসি, রোনালদো, মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো এবং রোনালদোর বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ এর নামে ফেসবুকে মোট দুটি করে ভেরিফাইড পেজ বিদ্যমান।

লিওনেল মেসির নামে দুটি ভেরিফাইড পেজ রয়েছে। ভুয়া ভেরিফাইড পেজটি ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল। পরিচালিত হচ্ছে মরোক্কো থেকে।

Image: Collage of two page’s feed

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নামে খোলা ভুয়া ভেরিফাইড পেজের ক্ষেত্রে রোনালদোর পূর্ণ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়া পেজটিতে কভার ছবি নেই, খোলা হয়েছে ২০২২ সালের ৫ই জুলাই এবং পরিচালিত হচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে।

Image: Collage of two page’s feed

ভুয়া ভেরিফাইড পেজের ইউআরএল দেখে বোঝা যায় যে পেজটিকে রোনালদোর অফিশিয়াল পার্সোনাল পেজ হিসেবে একপ্রকার দাবি করা হয়েছে।

Screenshot: Fake Ronaldo’s page

উইকিপিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পূর্ণ নাম হলো “ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো”।

Screenshot: Wikipedia

এছাড়াও তারকাদের ডাটাবেজ ও রেটিং সাইট আইএমডিবি’তেও রোনালদোর পূর্ণ নাম উল্লেখ করা হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দোস সান্তোস আভেইরো”।

Screenshot: Google search page

মেসির স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর নামে খোলা ভুয়া ভেরিফাইড পেজটির ইউআরএল থেকে দেখা যাচ্ছে যে পেজটি “Alisa Buchinger Karate” নামের একজনের। ট্রান্সপারেন্সি সেকশন থেকে দেখা গেছে যে পেজটি ২০১৭ সালের ৭ই নভেম্বর “Alisa Buchinger” নামে খোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি “Antonela Roccuzzo” নামে পরিবর্তন করা হয়েছে। পেজটি পরিচালিত হচ্ছে আমেরিকা থেকে।

Screenshot: Fake Antonela Roccuzzo page

কিন্তু আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর ইন্সটাগ্রাম থেকে জানা যায় যে তিনি কোনো ফেসবুক পেজ/ প্রোফাইল এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেননা।

Screenshot Source: Antonela Roccuzzo

রোনালদোর বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ এর নামে ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজটি খোলা হয়েছে গত ১৭ই মার্চ (২০২২)। এছাড়াও পেজটি কেবলমাত্র ভিয়েতনাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। 

Screenshot: Fake Georgina Rodriguez page

এই ভুয়া পেজটি থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভুয়া কিন্তু ভেরিফাইড (ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে) পেজের পোস্ট শেয়ার করে লেখা হয়েছে “My husband has official personal Facebook page.Follow him folks”।

এছাড়াও আরও একটি পোস্ট শেয়ার করে লেখা হয়েছে “Congrats, husband”। দুটি পেজ-ই ভিয়েতনাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে (পরস্পর সম্প্ররকিত দুটি প্রোফাইল দ্বারা)। একই পরিচালনায় যেহেতু রোনালদোর পেজটিও ভুয়া সেহেতু জর্জিনা রদ্রিগেজ এর পেজটিও ভুয়া। কেননা জর্জিনা রদ্রিগেজ এর আসল পেজ হলে পর্তুগাল ও স্পেন থেকেও পরিচালিত হতো। [ দেশ দুটি থেকে অন্তত একটি প্রোফাইল হলেও পরিচালনায় যুক্ত থাকতো। ]

এছাড়াও, জর্জিনা রদ্রিগেজ এর অন্য কোনো ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়নি ফেসবুকে। অর্থাৎ, জর্জিনা রদ্রিগেজ ফেসবুক ব্যবহার করেননা। 

জর্জিনা রদ্রিগেজ এর ফেসবুক ব্যবহার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকাশ করা আমাদের প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে

Screenshot: RumorScanner

এছাড়াও, জর্জিনা রদ্রিগেজ এর এই ভুয়া ভেরিফাইড পেজ থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের ভুয়া ভেরিফাইড পেজটির (ভুয়া প্রমাণিত) পোস্ট শেয়ার দেওয়ার নমুনাও পাওয়া যায়।

Screenshot: Fake Georgina Rodriguez page

পেজগুলোর মধ্যে যোগসূত্র আছে?

এমবাপ্পের এই পেজটিও জর্জিনা রদ্রিগেজ এর মতো ভিয়েতনাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যায় যে জর্জিনা রদ্রিগেজ, পূর্ণ নাম সহ রোনালদো এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের ভুয়া ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ তিনটি একই ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে (ভিয়েতনামের)।

Screenshot: Collage of two fake pages transparency sections

এনজো ফার্নান্দেজ ও রোনাল্ড আরাউহো নামের ভুয়া ভেরিফাইড পেজ দুটির মাঝে পরিচালনার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। উভয় পেজ-ই পাকিস্তান এবং মরোক্কো থেকে যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ফেসবুকের ভুয়া ভেরিফাইড পেজ যাচাইয়ের উপায়

সাধারণত আসল ফেসবুক পেজ যাচাইয়ের উপায় হিসেবে ভেরিফাইড পেজের কথা উল্লেখ করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া পেজ-ও ভেরিফাইড হওয়ার উদাহরণ দেখা গেছে। সুতরাং সংবাদ প্রকাশ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভেরিফাইড পেজ-ও যাচাই করে নিতে হবে। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার আগে যে কোনো পেজ এর যে কোনো কন্টেন্ট নিয়েই সন্দেহ করা যায়। সবার আগে জরুরি নিউজফিডে আসা পেজের ট্রান্সপারেন্সি চেক করা। যে যে কারণে ভেরিফাইড পেজ এর কন্টেন্ট ও মালিকানা নিয়ে সন্দেহ করা যায়ঃ

  • কোনো তারকার নাম (সঠিক বানানে অথবা পূর্ণনামসহ) ফেসবুকে সার্চ করলে যদি একইসাথে দুটি ভেরিফাইড পেজ পাওয়া যায় তাহলে এর মধ্যে যে কোনো একটি ভেরিফাইড পেজ ভুয়া হয়ে থাকে।
  • সর্বোপরি পেজের নামের তারকার সাথে যদি পেজের পোস্ট কিংবা সার্বিক কার্যকালাপে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায় তাহলেও সেই পেজটিকে।
  • পেজের ইউ আর এল যদি বর্তমান নামের সাথে না মিলে তাহলে পেজটিকে সন্দেহ করা যায়।
  • জনপ্রিয় তারকার পেজে লাইক কিংবা ইন্টার‍্যাকশনের পরিমাণের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা দেখা গেলে।
  • কোনো তারকার নামের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের পোস্টের সাথে তার অন্যান্য অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হলে।
  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফুটবলের অনেক তারকাসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করেননা। সেক্ষেত্রে অধিক পরিচিত তারকা ও তাদের পেজ ব্যতীত অন্যদের ফেসবুক পেজ দেখলে তা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন পড়ে।

যে যে উপায়ে ভুয়া ভেরিফাইড পেজ ও আসল পেজ শনাক্ত করা যায়ঃ

  • দুটি ভেরিফাইড পেজের মধ্যে যে পেজটিতে লাইক কিংবা ইন্টার‍্যাকশন বেশি থাকে সাধারণত সেটি আসল পেজ হয়ে থাকে।
  • পেজ এর এবাউট অপশন থেকে “Transparency” সেকশন থেকে পেজটি কবে খোলা হয়েছিল, কোথা থেকে পরিচালিত হয়েছিল তা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • সাধারণত আসল পেজটি বেশ আগে খোলা হয়ে থাকে এবং আসল পেজের ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন করা হয়না। আর ভুয়া পেজ এর বয়স বেশ কম হয়ে থাকে অথবা পুরাতন পেজ হলে ভিন্ন নাম থেকে তারকাদের নামে পরিবর্তন করে নেওয়া হয়। 
  • ভিন্ন কোনো নাম থেকে তারকাদের নামে নাম পরিবর্তন করে নেওয়া পেজগুলো সাধারণত ভুয়া হয়ে থাকে।
  • কোনো তারকার ভেরিফাইড পেজ সেই তারকার নিজ দেশ থেকে পরিচালিত না হলে। আসল পেজের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হতে পারে (এডমিন) তবে সেই তারকার দেশ থেকে অন্তত একজন হলেও এডমিন থাকবেন।
  • তারকাদের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। অনেক তারকার ফেসবুক না থাকলেও ইনস্টাগ্রাম অথবা টুইটার অথবা দুটোই থাকে। পাশাপাশি তারা ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার অ্যাকাউন্টে তাদের অন্যসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে উল্লেখ রাখেন কিংবা লিংক রাখেন। ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে যদি ফেসবুকের লিংক না দেওয়া থাকে কিংবা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা থাকে যে তাদের ফেসবুক নেই তাহলে সেখান থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • যদি সরাসরি ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার বায়োতে কিছু উল্লেখ না থাকে তাহলে তার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ফেসবুক পেজ সম্পর্কিত টুইট খোঁজ করা যেতে পারে। হতে পারে ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার বায়োতে কিছু উল্লেখ না করলেও টুইটে তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে কোনো তথ্য বা ঘোষণা দিয়ে টুইট করেছেন। যেমনটা দেখা গেছে রোনাল্ড আরাউহো’র ক্ষেত্রে।
  • পরস্পর সম্পর্কিত ভুয়া পেজগুলো (ভেরিফাইড অথবা ভেরিফাইড ছাড়া) একে অপরের পেজ শেয়ার কিংবা মেনশনের মাধ্যমে প্রমোট করে। ফলে কোনো একটি ভুয়া পেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে সেই পেজ থেকে যে সকল তারকাদের নামে পেজ মেনশন কিংবা শেয়ার করা হচ্ছে সেগুলোও ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে সেই পেজগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
  • পেজগুলোর লিংক ব্যবহার করে আর্কাইভ সার্ভিসে পুরোনো কপি খোঁজ করা যেতে পারে।
  • কোনো তারকা যদি সত্যিকার অর্থেই ইতোপূর্বে ফেসবুকে না থেকে থাকেন কিন্তু নতুন করে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট/পেজ ওপেন করলে সে সম্পর্কে তার অন্য অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য বা ঘোষণা থাকবে। কিছুক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ-ও প্রকাশ হতে পারে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ডে প্রকাশিত খবরও খোঁজ করা যেতে পারে। অর্থাৎ, যদি কোনো তারকার নামে সম্প্রতি খোলা কোনো ফেসবুক পেজ সম্পর্কে সেই তারকার অন্যান্য অফিশিয়াল মাধ্যমে এবং ইন্টারনেটে কোনো তথ্য না থাকে তাহলে সেটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি।
  • পেশাদারিত্বের প্রয়োজনে সন্দেহজনক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ সম্পর্কে যাচাই করতে চাইলে ঐ তারকার অন্যান্য অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টগুলোতে দেওয়া কন্টাক্টস বা মেইলের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।

সুতরাং, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ-ও ভুয়া হতে পারে। তাই সম্ভব হলে সবসময়-ই ভেরিফাইড পেজগুলোর ট্রান্সপারেন্সি সেকশন চেক করে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কোনো পেজ থেকে তথ্য নেওয়া, তথ্য বা উপকরণ ব্যবহার করা এবং এই তথ্য বা উপকরণ থেকে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ-ও যাচাই করে নিতে হবে।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img