ই-স্পোর্টস হলো ভিডিও গেম এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতার একটি রূপ। আর ভিডিও গেম বা কম্পিউটার গেম হলো একটি ইলেকট্রনিক গেম যেটিতে ভিজ্যুয়াল ফিডব্যাক তৈরি করতে একটি ইউজার ইন্টারফেস বা ইনপুট ডিভাইস; যেমন জয়স্টিক, কন্ট্রোলার, কীবোর্ড বা মোশন সেন্সিং ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই প্রতিক্রিয়াটি সাধারণত ভিডিও ডিসপ্লে ডিভাইসে দেখানো হয়; যেমন টিভি সেট, মনিটর, টাচস্ক্রিন বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ইত্যাদি৷ গেম বা ভিডিও গেম সম্পর্কিত নানাবিধ বিষয় নিয়ে সমাজে প্রচলিত কিছু নেতিবাচক বিষয়সহ বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি গণমাধ্যমেও নেতিবাচক অভিব্যক্তি ও তা প্রয়োগের উদাহরণ পাওয়া যায়।
ই-স্পোর্টস-এ অংশ নেয়ায় গ্রেফতার
১. দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর এর অনলাইন সংস্করণে গত ২০ জুলাই “নিষিদ্ধ পাবজি গেম খেলে আটক ১২০” (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চুয়াডাঙ্গায় পাবজি গেমস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে গিয়ে বিভিন্ন জেলার ১২০ জন কিশোর ও যুবককে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পাবজি গেমসের আয়োজক ১২ জন ও ১০৮ জন খেলোয়াড় রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাবজি গেমস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চুয়াডাঙ্গার একটি কমিউনিটি সেন্টারে জড়ো হন তারা।
২. দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম সময় টেলিভিশন এর অনলাইন সংস্করণে গত ২০ জুলাই “পাবজি গেমস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া ১২০ জন আটক” (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১৯টি দল। প্রতিটি দলে অংশ নেয় চারজন করে।
৩. দেশীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ২৪-এ গত ২০ জুলাই “পাবজি খেলার দায়ে চুয়াডাঙ্গায় আটক ১০৮” (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এখানে ১৯টা খেলোয়াড় গ্রুপ অংশ নেয়। প্রতি গ্রুপে চারজন করে সদস্য রয়েছে। সবার সঙ্গে সবার খেলা হয়। খেলা শেষে বিজয়ীদের ট্রফি উপহার দেওয়া হয়।
যদিও পরদিন ২১ জুলাই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া ২৪ যুবক ২ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শেষে জেলা কারাগার থেকে খালাস পেয়েছেন।
অবশ্য অপ্রত্যাশিত এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে কমিটি ফর এক্সপানশন এন্ড পপুলারাইজেশন অব ই-স্পোর্টস ইন বাংলাদেশ।
ই-স্পোর্টস কি
ই-স্পোর্টস এর পূর্ণরুপ ইলেকট্রনিক স্পোর্টস। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক স্পোর্টস হল সংগঠিত এবং প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও গেমিংয়ের টুর্নামেন্ট। যেখানে সরাসরি প্রতিযোগিতার বদলে অনলাইনে গেমগুলোর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন লিগ বা দলের প্রতিযোগীরা ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টে একই গেমে মুখোমুখি হয়।
যেমনঃ পাবজি, পাবজি মোবাইল, ডোটা-২, ফোর্টনাইট, লিগ অফ লিজেন্ডস, কাউন্টার-স্ট্রাইক, কল অফ ডিউটি, ওভারওয়াচ, ম্যাডেন এনএফএল ইত্যাদি। এই গেমারদের সারা বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত দেখে এবং অনুসরণ করে, ভক্তরা লাইভ ইভেন্টে যোগ দিয়ে, টিভি বা অনলাইনে টিউন ইন করে টুর্নামেন্ট দেখে থাকে। “টুইচ” এর মতো স্ট্রিমিং পরিষেবা দর্শকদের তাদের প্রিয় গেমারদের রিয়েল টাইমে খেলা দেখার সুযোগ দেয়।
ই-স্পোর্টস এর ক্ষেত্রে একজন প্রতিযোগি অন্য কোনও প্রতিযোগির সাথেই (হিউম্যান) প্রতিযোগিতা করতে হবে। এবং গেমটির অবশ্যই অফিশিয়াল গ্লোবাল টুর্নামেন্ট থাকতে হবে। অন্যথায় কোনও গেমকে ই-স্পোর্টস এর অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়না। যেমনঃ জিটিএ অনলাইন, মাইন ক্র্যাফট।
প্রতিযোগিতামূলক কম্পিউটার গেম এর উৎপত্তি
প্রতিযোগিতামূলক কম্পিউটার গেমের প্রথম শুরু ১৯৫২ সালের দিকে। সেই সময়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার শ্যাফটো ডগলাস কেমব্রিজে মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে তার ডক্টরেট থিসিসে কাজ করছিলেন এবং “XOX” নামের কম্পিউটার গেমটি বাস্তবায়নের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন।
প্রথম প্রকৃত মাল্টিপ্লেয়ার গেমটি ১৯৫৮ সালে ওপেন ডে-তে “ইনস্ট্রুমেন্টেশন হিগিনবোথাম” এর তৎকালীন প্রধান উপস্থাপন করেছিলেন। গেমটিকে “টেনিস ফর টু” বলা হয় এবং দুইজনকে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি জয়স্টিকের একটি প্রাথমিক ফর্মের মাধ্যমে খেলা হয়েছিল। জয়স্টিকের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা বল আঘাত করো এবং এর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতো। অনেকে একেই ইস্পোর্টসের সূচনা বলে মনে করে।
মহাকাশ নিয়ে গেম “স্পেসওয়ার” কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্টিভ রাসেল এবং এম.আই.টি’র “টেক মডেল রেলরোড ক্লাব”-এর মার্টিন গ্রেটজ এবং ওয়েন উইটানেনের মতো কিছু সহকর্মীর দ্বারা ১৯৬২ সালে একটি PDP-10 কম্পিউটারে লেখা হয়েছিল। এতে, দুটি খেলোয়াড় একে অপরের বিরুদ্ধে একটি করে স্পেসশিপ নিয়ে খেলে। এটিকে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার গেম হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং ২০০৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস দ্বারা সর্বকালের দশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার গেমের একটি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।
১৯শে অক্টোবর, ১৯৭২; স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষাগার বিশ্বের প্রথম ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট, “ইন্টারগ্যাল্যাকটিক স্পেসওয়ার অলিম্পিক” আয়োজন করেছিল। এই দিনে চব্বিশ জন খেলোয়াড় “স্পেসওয়ার”-এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেই সময়ে টুর্নামেন্ট বিজয়ী “রোলিং স্টোনস” ম্যাগাজিনের এক বছরের সাবস্ক্রিপশন পেয়েছিলেন।
ই-স্পোর্টস এর ইতিহাস
সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিল এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল অনুযায়ী, ই-স্পোর্টস এর শুরুটা ১৯৭২ সালে যখন হোম কনসোলগুলি প্রথম সাধারণ হয়ে ওঠে।
১৯৭২ সালে “ম্যাগনাভক্স ওডিসি” নামক প্রথম গেম কনসোল সুবিধা শুরু হয়েছিল যা একটি টিভির সাথে সংযুক্ত করা যেত। এই কনসোলটি ডিজিটাল গেমিংকে জনসাধারণের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।
১৯৭৯ সালে “এস্টেরয়িডস” এবং “স্টারফায়ার” নামে দুটি মেশিন আবির্ভূত হয়েছিল, যা প্রথমবারের মতো গেমারদের একটি ব্যক্তিগত নামের কোড সহ একটি উচ্চ স্কোরের তালিকায় যুক্ত করতো। যেহেতু শুধুমাত্র কয়েকটি মেশিন একে অপরের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দিয়েছিল, তাই এই তালিকাগুলি খেলোয়াড়ের দক্ষতার একটি পরিমাপ হয়ে উঠেছিল। স্পেস ইনভেডারদের সাথে, ১৯৭৮ সালে আতারি বিশ্বের প্রথম বড় ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
প্রথম গেমিং ক্লাসিকটি ১৯৮০ সালে স্পেস ইনভেডারস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা হয়েছিল ১০,০০০ এরও বেশি গেমাররা অ্যাস্টেরয়েডের একটি সংস্করণ জেতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ১০ ই অক্টোবর, ১৯৮০-এ, “উইলিয়াম সালভাদর হ্যানিম্যান” এই চ্যালেঞ্জের বিজয়ী হয়েছিলেন। এইভাবে তিনি একটি জাতীয় ভিডিও গেম প্রতিযোগিতার প্রথম বিজয়ী হয়েছিলেন। এর এক বছর পরে,গেমাররা “কাটথ্রোট” ও “ডংকি কং” টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে “স্ট্রিট ফাইটার” এবং “মর্টাল কম্ব্যাট” প্রতিযোগিতা এবং টুর্নামেন্টগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং পরবর্তীতে “গোল্ডেনআই” এবং অন্যান্য গেম; যেমন স্টারক্রাফ্ট, ওয়ারক্রাফ্ট, ওভারওয়াচ, কল অফ ডিউটি এবং হ্যালো সিরিজের জনপ্রিয়তার পথ প্রশস্ত করেছিল। কম্পিউটারে জনপ্রিয় “স্টারক্রাফ্ট-২” টুর্নামেন্টটি ৫০ মিলিয়নেরও বেশি অনলাইন দর্শক দেখেছিল, যাদের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন টুইচের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছিল।
ই-স্পোর্টস এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেয়া হয়েছে। আইওয়া রাজ্যের ওটুমওয়া এর ওয়াল্টার ডে ৯ ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮২ সালে ভিডিও গেম টুর্নামেন্টের জন্য প্রথম রেফারি পরিষেবা প্রতিষ্ঠা করেন “টুইন গ্যালাক্সি ন্যাশনাল স্কোরবোর্ড”।
১৯৮৩ সালে, তিনি ইউএস ন্যাশনাল ভিডিও টিম প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের প্রথম পেশাদার গেমিং দল। তিনি উত্তর আমেরিকান ভিডিও গেম চ্যালেঞ্জেরও আয়োজন করেছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভিডিও গেম মাস্টার্স টুর্নামেন্ট। “ভিডিও গেমস” বিষয়ে তার ব্যাপক প্রচেষ্টার জন্য তাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে ই-স্পোর্টস এর অগ্রগামীদের একজন বলা যেতে পারে।
ই-স্পোর্টস আসলে জুয়া?
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, জুয়া বা বাজী হচ্ছে এমন একটা ধরণ (খেলার) যা লাভ বা লোকশানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমানের অর্থ বা বস্তু নির্ধারণ করা হয়। তারপর কোনো একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায় সে অপর পক্ষকে সেই নির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে।
অন্যদিকে ই-স্পোর্টস হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের জুয়ার মতো লাভ-লোকশানের সুযোগটা সেভাবে নেই। জুয়ায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে পুরস্কারের অর্থ নির্ধারণ হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তা কম-বেশি হয়। কিন্তু ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে পুরষ্কারের বিষয়টি নির্ধারিত থাকে এবং তা নির্ধারণ করে টুর্নামেন্ট আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ই-স্পোর্টসে বিজয়ী দলকে পুরষ্কার প্রদান করে টুর্নামেন্ট আয়োজক কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে জুয়ার ক্ষেত্রে বিজয়ী দলকে পুরষ্কার প্রদান করে হেরে যাওয়া দল।
খেলাধূলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়ন এর এক প্রতিবেদন এ উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠা বিনোদনমূলক গেইমসকে জুয়ার শামিল করে নেতিবাচক একটি তকমা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ই-স্পোর্টসকে নেতিবাচকভাবে অর্থাৎ জুয়ার নাম দিয়ে নিজেরাই দেশকে ও দেশের তরুণ সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছি।
ই-স্পোর্টসকে আন্তর্জাতিক মাল্টি-স্পোর্টস ইভেন্ট প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্তকরণ
এশিয়ান গেমস-এ ই-স্পোর্টস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এশিয়ান গেমস ২০২২-এ প্রথমবারের মতো সংযুক্ত হতে যাচ্ছে ই-স্পোর্টস। দৈনিক ইনকিলাব এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ান গেমসে ই-স্পোর্টসের আটটি ইভেন্টের মধ্যে বাংলাদেশ খেলবে ফিফা ফুটবল গেমস, পাবজি মোবাইল (এশিয়ান গেমস ভার্সন) ও হার্ডস্টোনে। এছাড়াও এশিয়ান গেমস এর পাশাপাশি অলিম্পিক গেমস এ ই-স্পোর্টসকে প্রাথমিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কমনওয়েলথ গেমসেও অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।

ই-স্পোর্টসের বর্তমান ও ভবিষ্যত
ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এর ভবিষ্যত শুধুমাত্র গেম খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখনে ডেভলপার, থ্রিডি এনিমেটর, ভিডিও এডিটর, স্টোরিটেলার, অর্গানাইজার, ব্রডকাস্টার, কাস্টার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, এ্যানালিস্ট সহ বিভিন্ন দক্ষতার প্রয়োগ করা সম্ভব এবং সেসকল ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। ভিডিও মেকিং, স্ট্রিমিং, সরাসরি ধারাভাষ্য করে আয় করা সম্ভব লক্ষ লক্ষ টাকা।
২০২০ সালে, গ্লোবাল ই-স্পোর্টস বাজারের মূল্য ছিল মাত্র এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে। ২০২১ সালে, বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের বাজারের মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র ১.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উপরন্তু, ই-স্পোর্টস শিল্পের বৈশ্বিক বাজারের আয় ২০২৫ সালে ১.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকা বর্তমানে আয়ের দিক থেকে বৃহত্তম ই-স্পোর্টস বাজারের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে চীন একাই বাজারের প্রায় এক পঞ্চমাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
২০২১ সালে ই-স্পোর্টস এর আয়ের সবচেয়ে বড় অংশটি এসেছে স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন থেকে। সব মিলিয়ে, ২০২১ সালে স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন থেকে বিশ্বব্যাপী আয় ছিল মোট ৬৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে, আয়ের পরবর্তী সর্বোচ্চ উৎস ছিল মিডিয়া রাইটস; ১৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২২ সালের হিসেবে, বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টস দর্শকের সংখ্যা ৫৩২ মিলিয়ন লোকে পৌঁছেছে। আগামী বছরগুলিতে, আরও বেশি সংখ্যক দর্শক তাদের প্রিয় গেমগুলি বিশ্বের সেরা গেমারদের দ্বারা খেলতে দেখার জন্য টিউন ইন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টস ৬৪০ মিলিয়নেরও বেশি দর্শক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ই-স্পোর্টস বাজারের বৈশ্বিক রাজস্বের দিক থেকে চীন ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় ই-স্পোর্টস বাজার হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, এসময়ে তারা আনুমানিক ৩৬০.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে, তারপরে ২৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আয় করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টে অর্থায়ন
ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টও ফুটবল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মত স্পনসরশিপ এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কখনও কখনও তা গেম কোম্পানি নিজেই স্পনসর করে। ই-স্পোর্টস মার্কেটে ভিডিও গেমের উপর ভোক্তা খরচ, ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল রাইটস বা প্রচারসত্ব বিক্রি, ইন-গেম কেনাকাটা এবং সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা সহ বিভিন্ন ধরনের আয়ের অংশ রয়েছে স্পন্সরশিপ ডিল এবং মিডিয়া রাইটসের মাধ্যমে। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত অনেক ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের সাথে যুক্ত পণ্যদ্রব্য এবং টিকিট বিক্রির মাধ্যমেও রাজস্ব উৎপন্ন হয়।
অংশগ্রহণকারীদের আয় কিভাবে হয়?
অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট প্রোমোশন, ব্র্যান্ড প্রোমোশন এবং টুর্নামেন্টের মধ্যে বিজ্ঞাপন প্লেসমেন্ট-এর মাধ্যমে তারা টাকা আয় করতে পারে। এছাড়াও তারা প্রাইজমানির মাধ্যমেও আয় করতে পারে। পাশপাশি ই-স্পোর্টস এর অনলাইন স্ট্রিমিং করে, এর উপর কন্টেন্ট বানিয়ে, আঞ্চলিক ইভেন্ট আয়োজন করে, ওভারভিউ এনালাইসিস সহ বিভিন্নভাবে ই-স্পোর্টস থেকে ফ্রীল্যান্সিং এর মাধ্যমেও আয় করা যায়।
ই-স্পোর্টসের প্রাইজমানি
২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি প্রাইজ পুল ছিল Dota-২ এর৷ অনলাইন যুদ্ধের এই ক্ষেত্রটি গত বছর $৪৭.৭৬ মিলিয়নের সমান মোট পুরস্কার পুল অফার করেছিল৷ ২০২১ সালে ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার শীর্ষ দশটি পুরস্কার পুলের একটি তালিকা হলোঃ
- DOTA 2-$47.76 million
- Counter-Strike: Global Offensive-$21.17 million
- PlayerUnknown’s Battleground Mobile-$17.67 million
- PlayerUnknown’s Battleground-$16.03 million
- Arena of Valor-$14.43 million
- Fortnite-$9.47 million
- League of Legends-$7.82 million
- VALORANT-$6.53 million
- Rainbow Six Siege-$6.22 million
- Call of Duty: Warzone-$6.12 million
জনপ্রিয় ই-স্পোর্টস গেমস এর তালিকা
Sl No. | Game | Prize Money | Tournaments | Players |
1 | Dota 2 | $289,160 496.96 | 1666 | 4400 |
2 | Counter -Strike: Global Offensive | $138,103,027.76 | 6305 | 15028 |
3 | Fortnite | $129,276,316.05 | 800 | 5157 |
4 | League of Legends | $93,369,164.02 | 2707 | 8296 |
5 | Arena of Valor | $53,415, 548.55 | 110 | 1168 |
6 | Players unknown battleground Mobile | $47,196, 435.06 | 177 | 2874 |
7 | PLAYERUNKNOWN’S BATTLEGROUNDS | $46,271,659.03 | 458 | 3243 |
8 | StarCraft II | $37,540,352.67 | 6509 | 2144 |
9 | Overwatch | $34,308,238.00 | 818 | 3814 |
10 | Hearthstone | $28,485,782.72 | 1000 | 2884 |
11 | Rainbow Six Siege | $24,904,456.02 | 411 | 2322 |
12 | Rocket League | $21,466,008.02 | 2061 | 2093 |
13 | Heroes of the Storm | $18,325,647.65 | 479 | 1278 |
14 | Counter-Strike | $13,559,672.19 | 1018 | 4225 |
15 | VALORANT | $12,690,855.28 | 740 | 4088 |
16 | Apex Legends | $12,616,050.24 | 455 | 1592 |
17 | CrossFire | $11,187,426.40 | 322 | 1232 |
18 | Free Fire | $10,721,174.65 | 56 | 730 |
19 | Call of Duty: Warzone | $9,434,531.93 | 323 | 1138 |
20 | SMITE | $9,250,112.75 | 740 | 542 |
জুয়া নিয়ে বাংলাদেশের আইনে কী বলা আছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশ ক্যাসিনোর মতো বিষয়ে যুগোপযোগী পূর্ণাঙ্গ আইন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তেমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায় না। দেশীয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৬৭ সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং আইন যুক্তরাজ্য করেছিল তার উপনিবেশগুলোর জন্য। তারা এই আইন বহুকাল আগেই বাতিল করে দিয়েছে। প্রচলিত আইনে মহানগর এলাকার মধ্যে শুধু ‘রাস্তায় জুয়া খেলার’ (স্ট্রিট গ্যাম্বলিং) ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ সংশোধন করে ঢাকা মহানগরীকে ওই আইনের আওতামুক্ত করে জুয়া খেলার পথ খোলা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে আরেকটি সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সব মহানগরীকে জুয়া নিষিদ্ধ আইনটির আওতামুক্ত করা হয়।
১৮৬৭ সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং আইনটি ইতিহাসের কোনো পর্বেই সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এটি সব সময় নির্দিষ্ট কিছু রাজ্য ও এলাকার জন্য কার্যকর ছিল। তবে লক্ষণীয় হলো, ১৮৬৭ সালের আইনটির নাম পাবলিক গেম্বলিং হলেও এই আইনে কিসে ‘গ্যাম্বলিং’ হয়, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। লটারি বৈধ কিন্তু তারও সংজ্ঞা নেই।
১৯৭২ সালে অন্য অনেক আইনের মতো ১৮৬৭ সালের আইনটি গ্রহণের সময় হর্সরেসিং বা ঘোড়দৌড়ের ওপর বাজি ধরাকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। ১৯২২ সালের বিনোদন ট্যাক্স আইনে তাই বেটিং ট্যাক্স এখনো বহাল আছে। পাকিস্তান আমলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড়ের বাজি জনপ্রিয় ছিল। সে জন্য এলাকাটি রেসকোর্স হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৮৬৭ সালের আইনে ‘কমন গেমিং হাউস’-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ২০০ থেকে ৬০০ টাকা জরিমানা ছিল। অনাদায়ে এক থেকে ছয় মাসের জেল। তবে পরে একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ। তদুপরি অনধিক অর্থদণ্ড ৬০০ টাকা অথবা ১ বছর পর্যন্ত জেল হবে। রাস্তায় পাখি বা প্রাণী দিয়ে জুয়া খেলার শাস্তি অনধিক ৫০ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক এক মাসের বিনাশ্রম বা সশ্রম জেল।
১৯৭৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে এ বিষয়ে দুটি ধারা আছে। ৯২ ধারা বলেছে, যারাই জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে কোনো সড়ক বা পাবলিক প্লেসে (জনসমাগম স্থল) মিলিত হবে, তাদের অনধিক ১০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। ৯৩ ধারা বলছে, গণবিনোদনে কেউ কোনো খেলায় যুক্ত হলে তাকে অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা করা যাবে। সেদিক থেকে পুলিশ অধ্যাদেশের চেয়ে ১৮৬৭ সালের আইনটি কিছুটা নির্দিষ্ট। সেখানে ‘জুয়ার’ সংজ্ঞা নেই। কিন্তু কমন গেমিং হাউসের সংজ্ঞায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো বাড়ি, কক্ষ, তাঁবু বা গাড়িসহ যেকোনো স্থানই হোক না কেন, সেখানে মুনাফা বা লাভের আশায় কোনো খেলার সামগ্রী ব্যবহৃত হলে তা দণ্ডনীয়। অবশ্য ১৯১৩ সালেই এক সংশোধনী এনে বলা হয়, যে খেলায় দক্ষতা থাকবে, সেখানে এই আইন প্রযোজ্য হবে না।
দেশীয় গণমাধ্যম মানবজমিন এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৬৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের শাসনাধীন এলাকায় প্রকাশ্য জুয়া খেলার অপরাধে শাস্তি এবং সাধারণ ক্রীড়াভবনের ব্যবস্থা করার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ভিন্ন আইনে মামলার মূল কারণ জুয়া খেলা বন্ধে প্রচলিত আইনটি দেড়শ বছরেরও অধিক পুরনো। ওই আইনে ‘ক্যাসিনো’ বলে কোনো শব্দই নেই। এ কারণে আইনটির কোনো কার্যকারিতাও নেই। তবে, ৭২’-এর সংবিধানে জুয়া নিষিদ্ধের ব্যাপারে বলা আছে।
বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ নামে যে আইনটি রয়েছে তা রাজধানীতে প্রয়োগের সুযোগ নেই। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে ইহা প্রযোজ্য হইবে’। পর্যবেক্ষণে আদালত জানায়, জুয়া আইনে ঢাকা মহানগরীর বাইরে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই আইনে সাজার পরিমাণ খুবই নগন্য, মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ড।
যদিও বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস বিষয়ে কোনও নির্দেশনা (আইন) পাওয়া যায়নি। এখানে শুধুমাত্র পাবজি, ফ্রী ফায়ার গেমসহ কয়েকটি গেমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জুয়ার আইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান কী বলে
দেশীয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষত আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ ১৮ অনুচ্ছেদের ২ উপদফা বলেছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সংবিধান শর্তহীনভাবে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করেছে। উপরন্তু কোনো নাগরিক এই অনুচ্ছেদের কার্যকরতা বলবৎ করার জন্য হাইকোর্টে রিট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার আশা করতে পারে না। কারণ, বাহাত্তরের সংবিধানই বলে দিয়েছে, এই বিধান আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়।
পাকিস্তান আইন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ১৮৬৭ সালের আইন পশ্চিম পাকিস্তানে বহাল ছিল। আইয়ুব খানের আমলে ওই আইন বিলোপ করে জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ জারি করা হয়। কিন্তু ওই আইনেই ব্যতিক্রম রাখা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই আইন করাচির ফেডারেল এলাকা এবং বিশেষ এলাকাগুলোতে কার্যকর হবে না। ১৮৭০ সাল থেকে অননুমোদিত লটারি দণ্ডবিধির ২৯৪(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য করা হয়। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের (কন্ট্রাক্ট ল) ৩০ ধারার আওতায় জুয়াসংক্রান্ত যেকোনো চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হয়। ব্রিটিশ সংসদ হস্তক্ষেপ করার আগ পর্যন্ত ইংলিশ কমন লতে জুয়া নিষিদ্ধ ছিল না। ১৬৬৪ সালের গ্যাম্বলিং অ্যান্ড বেটিং আইনে ‘প্রতারণামূলক ও মাত্রাতিরিক্ত’ জুয়া এবং ক্রীড়াবাজি দণ্ডনীয় করা হয়। এরপর ১৭১০ সালে আসে গেমিং আইন। ১৮৪৫ সালের আইনে প্রথমবারের মতো বলা হলো, জুয়া খেলাসংশ্লিষ্ট সব ধরনের চুক্তিই বেআইনি। ১৮৯২ সালে এই আইন আরও কঠোর করা হয়। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির (যা বাংলাদেশে বলবৎ) ২৯৪(ক) ধারায় অনুমোদনহীন লটারির জন্য জরিমানাসহ ছয় মাসের জেলের বিধান আছে।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় কোন গেমসগুলো
দেশীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতামূলক কয়েকটি গেম হলোঃ
- কাউন্টার-স্ট্রাইক: গ্লোবাল অফেন্সিভ
- ডোটা ২
- রেইনবো সিক্স সিজ
এছাড়াও; ফোর্টনাইট, লিগ অব লিজেন্ডস, এরিনা অব ভেলর, পাবজি ও পাবজি মোবাইল, কল অব ডিউটি, ফ্রী ফায়ার, স্টারক্র্যাফট ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক গেমগুলোও বাংলাদেশে জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে ই-স্পোর্টসের আয়োজন ও বিদেশে অর্জিত সাফল্য
দেশীয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে অনলাইন গেমস প্রতিযোগিতা ই-স্পোর্টস ‘ডিওয়ান কাপ বাংলাদেশ-২০২২’-এর তিনটি ভিন্ন খেলায় জয়ী তিন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। ডিসকভারি ওয়ান লিমিটেডের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট শুরু হয় গত ১৪ জুন। এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিযোগিতা শেষে ‘ডোটা-২’ গেমসে ‘কোভানেন্ট’, ‘এমএলবিবি’ গেমসে ‘ভেনম সিআর’ ও ‘ভ্যালোরেন্ট চ্যাম্পিয়নস’ গেমসে ‘সেপটেম এক্সিয়েরিয়েন্ট’ বিজয়ী হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে মোট ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
দেশীয় সংবাদমাধ্যম আরটিভি এর অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশি একজন গেমারের বরাতে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, তাদের টিম সম্প্রতি দুবাইয়ে পাবজির সবচেয়ে বড় আসরে অংশগ্রহণ করে পুরষ্কার হিসেবে বিশাল অংকের টাকা জিতেছে।
দেশীয় সংবাদমাধ্যম সমকাল এর অনলাইন সংস্করণে গত ৭ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন ব্যাটল গেম ‘এরিনা অব ভ্যালোর’ গেমটি নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় গেমিং টুর্নামেন্ট। দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আয়োজিত হয় প্রতিযোগিতার বিভাগীয় ফাইনাল। প্রতিযোগিতার ঢাকা বাছাই পর্বের জন্য নিবন্ধন করে ১৯১টি। প্রতিযোগিতায় দেশের পাঁচ সহস্রাধিক তরুণ গেমার অংশ নেন। এতে বিজয়ী দল পেয়েছে ১২ লাখ টাকা পুরস্কার।
দেশীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিং বিডির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকমানের ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছে এরিনা অফ ভ্যালর, বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়া কোয়ালিফায়ার্সের এই আয়োজনে থাকছে ৭৫ লাখ টাকার পুরস্কার।
উন্নত বিশ্ব ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ই-স্পোর্টস নিয়ে পদক্ষেপ এবং সম্ভাবনা
ই-স্পোর্টস দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সাথে এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাও। জাপান এই বছরের এপ্রিলে তাদের প্রথম গেমিং-কেন্দ্রিক উচ্চ বিদ্যালয় খুলতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ই-স্পোর্টস হাই স্কুল-এ তাদের গেমিং দক্ষতা বিকাশ করতে পারবে।
কলেজিয়েট লেভেলে স্কলারশিপ এবং ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট উত্তর আমেরিকায় নতুন নয়। তবে এটি সম্ভবত প্রথমবারের হয়েছে যে একটি জাপানি স্কুল শুধুমাত্র গেমিংকে গ্রহণ-ই করেনি বরং এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারিকুলাম তৈরি করেছে।
আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-স্পোর্টস সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রোগ্রাম রয়েছে। যেমনঃ
- মিয়ামি ইউনিভার্সিটি
- ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,ইরভিন
- ম্যারিভিল ইউনিভার্সিটি
- ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ
- ইলিনইস ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি
- বইস স্টেট ইউনিভার্সিটি
- জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি
- ইউনিভার্সিটি অব আকরন
- ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে
- ডালাস এর ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস
ভারতের ই-স্পোর্টস শিল্পের মোট আকার ২৫ সাল নাগাদ ১১০০ কোটি টাকা ছুঁয়ে যাবে কারণ আরও বেশি সংখ্যক কোম্পানি ভারতে এস্পোর্টস ইকোসিস্টেম বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করছে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন অফ ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টসের জন্য দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (FEAI) জানিয়েছে।
FEAI শীঘ্রই পলিসি পেপার চালু করবে যা ভারতে ই-স্পোর্টস শিল্প উন্নয়নের জন্য কাঠামো রূপরেখা করবে। ফেয়াঈ জেটসিন্থেসিস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি ক্রিকেট ই-গেমিং চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করছে।
কামিয়াব ই-জওয়ান পাকিস্তান সরকারের ই-স্পোর্টস সেক্টরে একটি নতুন ইনিশিয়েটিভ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর যুব বিষয়ক বিশেষ সহকারী (এসএপিএম) মুহাম্মদ উসমান দার একটি সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে শীঘ্রই কামিয়াব ই-জওয়ান নামে একটি ই-স্পোর্টস উদ্যোগ চালু ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন।
খেলাধুলা বিষয়ক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়ন এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিটি ফর এক্সপানশন এন্ড পপুলারাইজেশন অব ই-স্পোর্টস ইন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেশে ই-স্পোর্টস ফেডারেশন গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ইতোমধ্যে এই ফেডারেশন তৈরির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছেছে। কমিটি ফর এক্সপানশন এন্ড পপুলারাইজেশন অব ই-স্পোর্টস ইন বাংলাদেশ মনে করে, প্রতিটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নিজস্ব ইতিবাচকতা এবং নেতিবাচকতা রয়েছে।
ই-স্পোর্টস এর ইতিবাচকতা
প্রতিযোগিতামূলক গেম এর ক্ষেত্রে টিম-ওয়ার্ক বা দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। দ্রুত পরিকল্পনা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ারও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়
দেশের বেকারত্বের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ইস্পোর্টস অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রেও ঘরে বসে উপার্জনের ক্ষেত্রে ই-স্পোর্টস অন্য যে কোনও ক্ষেত্রের চেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রের শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও ঘরে বসে ই-স্পোর্টস এর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
Understood ও GEICO এর বরাত দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট sciencebee এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে,
- গেইম আমাদের মানসিক ভাবে একটিভ করে তুলে
- একাকীত্ব দূর করে
- স্মৃতিশক্তি প্রখর করে
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে (ঘটনা সমূহ ট্র্যাক করার হিসেবে)
- সামাজিক হতে শেখায়
ই-স্পোর্টস (গেম) এর নেতিবাচকতা
কোনও কিছুই অতিরিক্ত করা ভালো নয়। তেমনি অতিরিক্ত গেম বা ই-স্পোর্টস এ সময় ব্যয় করাকেও নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। পাশপাশি ই-স্পোর্টস বা অনলাইন গেম এ আসক্ত হয়ে পড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নেতিবাচক কিছু ঘটনাসমূহ
- দেশীয় মুলধারার গণমাধ্যম সময় টেলিভিশন এর অনলাইন সংস্করণে গত ২১ মে “পাবজি খেলতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিলেন নুসরাত (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঝালকাঠির রাজাপুরে মোবাইলে পাবজি গেম খেলতে না দেওয়ায় এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
- ভারতীয় গণমাধ্যম এবিপি লাইভ এর অনলাইন সংস্করণে গত ০৮ জুন “পাবজি খেলায় আপত্তি, ঘুমন্ত মাকে ‘গুলি করে মারল’ ছেলে (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখনউতে।
- পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম “ডন” এর বরাতে দেশীয় গণমাধ্যম যুগান্তর এর অনলাইন যুগান্তর এর অনলাইন সংস্করণে গত ০৮ জুন “পাবজি খেলতে বাধা: পরিবারের সবাইকে গুলি করে হত্যা করল কিশোর (আর্কাইভ)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এছাড়াও দেশীয় মুলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর এর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ২৬ মে “ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না পেরে ২ আত্মহত্যা!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না পেরে মায়ের ওপর অভিমান করে উম্মে হাবিবা বর্ষা (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এবং ঘরে আড়ার সঙ্গে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আখিরুল ইসলাম (১৩) নামে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করেছে।
উত্তরণ যেভাবে হতে পারে
মূল সমস্যা হলো অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেয়া হচ্ছে। যেখানে ফ্রি ফায়ার গেইম ডাউনলোড করার সময়ই বলে দেয়া হয় এটি ১৭ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য। সেখানে দেশে ১৭ বছরের নিচের বাচ্চারাও এই গেইম খেলছে। যদি এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে বাংলাদেশে বিশ্বের দরবারে গেমিং সেক্টরে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম-কানুন মেনে গেম খেললে এই সেক্টর থেকে নেতিবাচকতার চেয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার সুযোগ বেশি।
ই-স্পোর্টস খেলোয়াড়দের নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিছু উদাহরণ
ই-স্পোর্টস খেলোয়াড় বা গেমারদের নিয়ে সামাজিকভাবে কিছু অভিযোগ রয়েছে। তবে আসক্তির পর্যায়ে না গেলে শুধুমাত্র বিনদন কিংবা পেশাগত নিয়ম-কানুন মেনে গেম খেললে তা অন্য কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনা।
১। প্রচলিত কিছু ধারণা অনুযায়ী, গেম খেলার ফলে তারা পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করতে পারেনা। ভারতীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়াল এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইলে গেম খেলেও দেশের সেরা দশের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া যায়, তা প্রমাণ করে দিল জলপাইগুড়ির স্বয়ম আগরওয়াল।
২। প্রচলিত কিছু ধারণা অনুযায়ী, গেম খেলার ফলে তারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মানবিক মুল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। দেশীয় সংবাদমাধ্যম আরটিভি এর অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশি একজন গেমারের বরাতে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বাংলাদেশি একদল গেমাররা পাবজি মোবাইল ওয়ার্ল্ড ইনভাইটেশনাল খেলে ৩৮ লাখ টাকা ইউনিসেফে অনুদান হিসেবে দিয়েছে। এছাড়াও সিলেটের বন্যার সময়েও দেশীয় গেমারদের অনুদানের ব্যপারে তথ্য পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার হিসেবে ই-স্পোর্টস
বাংলাদেশে কিছুদিন আগে এরিনা অব ভ্যালর নামে একটা গেম এর একটি টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করা হয়েছিল। যার প্রাইজমানি ছিল ৭৫ লক্ষ টাকা। ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এর ভবিষ্যত শুধুমাত্র গেম খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখনে ডেভলপার, থ্রিডি এনিমেটর, ভিডিও এডিটর, স্টোরিটেলার, অর্গানাইজার, ব্রডকাস্টার, কাস্টার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, এ্যানালিস্ট সহ বিভিন্ন দক্ষতার প্রয়োগ করা সম্ভব এবং সেসকল ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। ভিডিও মেকিং, স্ট্রিমিং, সরাসরি ধারাভাষ্য করে আয় করা সম্ভব লক্ষ লক্ষ টাকা।
দেশীয় সংবাদমাধ্যম আরটিভি এর অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশি একজন গেমারের বরাতে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বাংলাদেশেই প্রায় ৫-৬ হাজার স্ট্রিমার আছে। যারা প্রতিদিন পাবজি ও ফ্রি ফায়ার স্ট্রিম করে ইউটিউব ফেসবুকে। উপর থেকে নিচে সব ধরণের আয় মিলে মাসে ১ থেকে ২ কোটিরও বেশি। ফেসবুক কর্তৃক বেতনভূক্ত স্ট্রিমাররা প্রতিজন পায় প্রায় ২ লাখ টাকা। আর তাছাড়া ইউটিউব থেকেও স্ট্রিম করে আয় করা যায়।
দেশীয় সংবাদমাধ্যম ইত্তেফাক এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস: ধারাভাষ্যে ক্যারিয়ার গড়ছে অনেকে।
বাংলাদেশের একটি ই-স্পোর্টস টিম ‘A1eSports’ এর মিডিয়া ম্যানেজার এবং বোর্ড অফ ম্যানেজমেন্ট এর সদস্য শ্রাবণ শান্ত (Srabon Thought) রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, “জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট গুলো গেমসের উপর ডিপেন্ড করে। যেমন পাবজির ক্ষেত্রে PMGC,PEL,PMPL সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট। বর্তমানে ই-স্পোর্টসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে। একজন মিড লেভেলের প্রফেশনাল প্লেয়ার মাসিক লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারে। যদিও আমাদের দেশে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়াটা অনেক কঠিন। একটা সময় বাবা-মা সন্তানকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দিতো না, বলতো ক্রিকেট খেলে কিছু করা সম্ভব নয়। ই-স্পোর্টস এখন সেই সময়টা পার করছে আমাদের দেশে”।
ভ্যালোরেন্ট গেম এর দেশীয় একজন ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী নাফিস শাহরিয়ার রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই স্পোর্টসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও বিদেশে অনেকেই ই স্পোর্টসকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এবং সফলতার সাথে তা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সম্প্রতি একটি ই স্পোর্টস টুর্নামেন্ট টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছিল যা সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে অনেকেই ই স্পোর্টসকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করা যায় অতি শীঘ্রই আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ ই-স্পোর্টস এর ইতিবাচক দিকটি বুঝতে পারবেন এবং তখন এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে”।
ইতোপূর্বে ই-স্পোর্টস এর সাথে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশী গেমারদের আয়ের উদাহরণ
দেশীয় সংবাদমাধ্যম আরটিভি এর অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশি একজন গেমারের বরাতে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ই-স্পোর্টস প্লেয়ারদের আয়ের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের বড় সব টিমের প্রতি জনের বেতন গড় করে হলেও ১০-১৫ হাজার টাকা। আবার টুর্নামেন্ট দিয়েও আয় হয়। বাংলাদেশ রিলেটেড টুর্নামেন্টের প্রাইজপুল ২৬ লাখ টাকা। বছরে ন্যাশনাল ও ইন্টান্যাশনাল টুর্নামেন্ট ১০-১৫টি হয়।পাবজি রিলেটেড স্ট্রিমার, প্রফেশনাল ই-স্পোর্টস প্লেয়ার, কাস্টার এর পাশা পাশি ফ্রিলান্সিং সোশ্যাল মিডিয়া ডিস্কর্ড, ফেসবুক, ইউটিউব ম্যানেজার আছে। তার সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর, ব্রডকাস্টার হিসেবেও আয় করা যায়।
পাশাপাশি, ফ্রি ফায়ার কন্ট্রেন্ট থেকেই ফেইসবুক পার্টনার প্রোগ্রাম থেকে প্রতি মাসে এক লাখ টাকার বেশি আয় করেন দেশীয় একজন গেমার। তবে ফ্রি ফায়ারকে আসক্তি হিসেবে নিচ্ছেন না তিনি। তিনি জানান ই-স্পোর্টস থেকে মাসে ৭০ হাজার টাকার বেশি টিমের এবং অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশে।
আরটিভির এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশীয় একজন গেমার কিছু গেমিং ও স্ট্রিমিং অ্যাপ কোম্পানির সাথে কাজ কছেন। ভারত, মালায়শিয়া ও সিঙ্গাপুর অনেক বড় বড় গেমিং অ্যাপ কোম্পানির সাথে আমরা কাজ করেন তারা। তাদের অ্যাপের প্রমশন থেকে শুরু করে বড় অংকের প্রাইজমানির টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। এগুলো থেকে দেশের বিপুল পরিমান স্ট্রিমার, কাস্টাররা আয় করে থাকেন। যেটা ব্যাংকের মাধ্যমে এদেশে আসে যেটার রেমিট্যান্স হিসেব করলে ভালো অর্থ দেশে আসে। ফ্রি ফায়ারকে কেন্দ্র করেই মূলত এই গন্ডি গড়ে উঠেছে৷
তিনি কমিউনিটির এডমিন গত জুনে Free Fire Game, LOCO ইন্ডিয়া, Booyah স্ট্রিম অ্যাপ এবং মনিটাইজিং করা গেমিং পেইজ ও গেমিং গ্রুপ থেকে চার হাজার ডলার উপার্জন করে। যেটা বাংলাদেশের টাকায় ৩ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া টেলিকম অপারেটর বাংলালিংক ডিজিটাল গত তিন মাস থেকে তাদের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে।
সুতরাং, ই-স্পোর্টস কোনও জুয়া নয় বরং ই-স্পোর্টস হলো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতই ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টগুলো আয়োজিত হয়।
তথ্যসূত্র
‘আমার ছেলে যেভাবে গেমার থেকে তুখোড় জুয়ারি হল’ – BBC News বাংলা
Why Esports in Schools Is a Good Thing – ViewSonic Library
An Overview of the Esports Market in Japan | Insights | Greenberg Traurig LLP
Market size of China’s esports industry to grow 130% to $27 billion this year: report – Global Times
India’s esports industry to become a Rs 1100 crore industry by FY25 – The Economic Times
Why Is Esports Becoming A Significant Part Of Sports Marketing In India?
The 25 Most Anticipated eSports Events
https://www.statista.com/statistics/1109956/global-esports-audience/
গেম থিওরি: বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিজ্ঞান
https://roar.media/bangla/main/sports/e-sports
Esports World Convention – Wikipedia
What is eSports? A look at an explosive, billion-dollar industry |.
.
https://www.siue.edu/esports/about/history.shtml
History of eSports: How it all began.
IOC announces inaugural slate of Olympic-licensed esports events