সম্প্রতি “মমতাজের গানের বিরুদ্ধে সংসদে কঠিন হুশিয়ার দিলেন জুনায়েদ আহমেদ পলক” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মমতাজের গানের বিরুদ্ধে সংসদে জুনায়েদ আহমেদ পলকের হুশিয়ারির দাবিটি সত্য নয় বরং জুনায়েদ আহমেদ পলকের এই বক্তব্যটি ২০১৩ সালের জাতীয় সংসদে তৎকালীন সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে অশালীন শব্দ ব্যবহারের প্রেক্ষিতে দেওয়া।
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে, জুনায়েদ আহমেদ পলকের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৩ সালের ২৬ জুন “মহান জাতীয় সংসদে অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদ। পলক। পার্থ। ATN News Uncut” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম bdnews24 এর ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ২৪ জুন “সংসদে অশালীন শব্দের জন্য জরিমানার প্রস্তাব” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সংসদে অসংসদীয় বক্তব্য বন্ধে স্পিকারকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের তরুণ সাংসদ জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। তাদের বক্তব্যে আমরা যেন অপমানিত না হই। অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করুন। শুধু এক্সপাঞ্জ করেই শেষ করা যাবে না; কারণ এর আগেই সরাসরি সম্প্রচারে তা পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিটি শব্দের জন্য ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করুন।” জুনায়েদ আহমেদ পলকের এই বক্তব্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া বিবিসি বাংলার অনলাইন সংস্করণে একইদিনে “সংসদে অশালীন ভাষা নিয়ে আলোচনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংসদ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলক অশালীন বক্তব্য দেওয়া বন্ধের লক্ষ্যে কার্যপ্রণালী থেকে অপসারিত প্রতিটি শব্দের জন্য সংশ্লিষ্ট সদস্যের বেতন থেকে ৩০,০০০ টাকা কেটে নেবার বিধান করা উচিত বলে প্রস্তাব দেন। এরপরও কোনো সাংসদ এমন শব্দ বললে জরিমানার পাশাপাশি তাকে এক দিনের জন্য সংসদ থেকে বহিস্কার করারও প্রস্তাব দেন।
আরো পড়ুনঃ ভিডিওটি এমপি মমতাজের বাড়িতে র্যাবের অভিযানের ঘটনার নয়
মূলত, ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালে তৎকালীন বিরোধী দলের রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আখতার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাজমা আক্তার, অপু উকিল, ফজিলাতুন নেছা বাপ্পীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সংসদে উত্তাপ ছড়ায়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে গিয়ে তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক সংসদে অশালীন বক্তব্যের জন্য জরিমানার প্রস্তাব দেন। জুনাইদ আহমেদ পলকের সেই পুরোনো বক্তব্যের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মমতাজের গানের বিরুদ্ধে সংসদে কঠিন হুশিয়ারি দিয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতু নিয়ে করা গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শোনান কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। পরবর্তীতে এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। তার এই ক্ষোভের প্রেক্ষিতে মমতাজ বেগম সংসদে পাল্টা বক্তব্য প্রদান করেন।
সুতরাং, ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্যের ভিডিওকে সম্প্রতি তিনি মমতাজের গানের বিরুদ্ধে সংসদে কঠিন হুশিয়ারি দিয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Zunaid Ahmed Palak: মহান জাতীয় সংসদে অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদ। পলক। পার্থ। ATN News Uncut
Bdnews24.com: সংসদে অশালীন শব্দের জন্য জরিমানার প্রস্তাব
BBC Bangla: সংসদে অশালীন ভাষা নিয়ে আলোচনা