ইয়েমেনে বহু বিবাহ সংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়নের তথ্যটি মিথ্যা

“ইয়ামান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত বহু বিবাহ সংক্রান্ত নতুন আইন: ১। প্রত্যেক পুরুষকে কমপক্ষে দু’জন স্ত্রীকে বিবাহ করতে হবে, এবং বিবাহ ও আবাসনের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে।২। যে ব্যক্তি সিদ্ধান্তটি প্রত্যাখ্যান করে তাকে কমপক্ষে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।৩। যে মহিলা তার স্বামীকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাকেও কমপক্ষে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে” শীর্ষক শিরোনামে আরবি হরফে ইয়েমেনের মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি সরকারী নথির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হয়ে আসছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইয়েমেনে একাধিক বিয়ে বাধ্যতামূলক দাবিতে যে আইনের কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয় বরং ফটোশপের মাধ্যমে নথি এবং স্বাক্ষর নকল করে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, লেবাননের আরবি দৈনিক আন-নাহার এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত “ইয়েমেন পুরুষদের দ্বিতীয় মহিলাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে (অনুবাদিত)” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ইয়েমেনের এন্ডমেন্ট এবং গাইডেন্স মিনিস্টার জনাব আহমেদ আতিয়ার স্বাক্ষরিত নথিটি সঠিক নয়। আহমেদ আতিয়ার স্বাক্ষর নকল করে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রাকশিত বাধ্যতামূলক বহুবিবাহ”এর গুজব ইরাকে শুরু হয়ে ইরিত্রিয়ায় পৌঁছায় (অনুবাদিত) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ইরাকে আইন করে বাধ্যতামূলক ভাবে পুরুষদের দুটি বিয়ে করতে হবে বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পরে। ইরাকে সরকারি চিঠির লেটারহেড ব্যবহার করে সরকারি লিফলেটের ছবি নকল করে গুজবটি ছড়ানো হয়। একই ভাবে নকল সরকারি নথি ব্যবহার করে গুজবটি সুদান, ইরিত্রিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়াও, ইয়েমেনের মিনিস্ট্রি অফ এনডোমেন্টস এন্ড গাইডেন্স এর ওয়েবসাইটে পুরুষের বাধ্যতামূলক একাধিক বিয়ের অন্যথায় কারাবাস বা জরিমানা সংক্রান্ত কোন আইন খুঁজে পাওয়া যায় নি।

মূলত, নকল নথি ও জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে আরব বিশ্বের দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক একাধিক বিয়ের আইন শিরোনামে একটি গুজব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ইয়েমেনে বাধ্যতামূলক ভাবে পুরুষদের একাধিক বিয়ে, অন্যথায় জেল জরিমানার বিধান করে একটি আইন পাশ হয়েছে দাবিতে ইয়েমেনের মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি নথির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়েমেনে বহুবিবাহ বাধ্যতামূলক সংক্রান্ত এমন কোনো আইন পাস হয়নি

সুতরাং, ইয়েমেনে পুরুষের বাধ্যতামূলক বহু বিবাহ সংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়নের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

An-Nahar: اليمن يلزم الرجال بالزواج من امرأة ثانية”؟ إليكم الحقيقة
FactCheckBBC: The polygamy hoax that spread from Iraq to Eritrea

আরও পড়ুন

spot_img