“সন্তান জম্ম দানের সময় একজন মহিলা ৫৭ ডেল ব্যাথা অনুভব করে!” এমন একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে , এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সন্তান জম্ম দানের সময় একজন মহিলা ৫৭ ডেল ব্যাথা অনুভব করার তথ্যটি সঠিক নয় এবং ব্যথা পরিমাপের জন্য ডেল (Del) নামে কোনো একক ব্যবহার করা হয় না।
প্রথমত, ব্যথা পরিমাপ করার জন্য “ডেল” নামে কোনো একক নেই। ১৯৪০ এর দশকে ব্যথার তীব্রতা পরিমাপ করার জন্য “ডল স্কেল/ Dol Scale” নামের একটি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছিল যা ডল স্কেল একক হিসেবে পরিচিত। ডলোরিমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যথার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়, ১০.৫ ডল স্কেল হলো সর্বাধিক ব্যথার তীব্রতা। অর্থাৎ আলোচিত পোস্ট গুলোতে ৪৫ ও ৫৭ স্কেল পর্যন্ত যে ব্যথার পরিমাপের কথা বলা হচ্ছে তা ডল স্কেলে হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ডেল স্কেল নামের ব্যথা পরিমাপক এককের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
Harvard Health Publishing এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চিকিৎসা পেশাদাররা ব্যথার তীব্রতা নির্ণয় করতে 10-পয়েন্ট ব্যথা স্কেল ব্যবহার করা শুরু করেছেন। এই স্কেলটি প্রাথমিকভাবে নার্স এবং ডাক্তারদের আরও ভাল নথিতে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল এবং মানুষ কতটা ব্যথা অনুভব করছে তা নিরীক্ষণ করতে এবং এর ফলে সঠিক চিকিত্সার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

World Federation of Societies of Anesthesiologists এর আইনি ও গণসংযোগ কর্মকর্তা Annabel Higgins অর্গানাইজেশনটি ব্যথা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি Dr Charles Rouger Goucke এর বরাতে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান Africa Check কে জানিয়েছেন, “ব্যথা পরিমাপের কোন উদ্দেশ্যমূলক উপায় নেই, যা একটি বিষয়গত অভিজ্ঞতা। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এবং ব্যথার মাত্রা তুলনা করা সহজ নয়। যা আমাকে কষ্ট দেয় তা হয়তো আপনাকে আঘাত নাও করতে পারে এবং এর বিপরীতে! স্কেল 0 (কোন ব্যথা নেই) থেকে 10 (সবচেয়ে খারাপ ব্যথা সম্ভব) ব্যবহার করে ব্যথা গ্রেড করা যেতে পারে। একজন ব্যক্তির 20টি হাড় ভাঙ্গার কারণে যে কেউ বাস্তবিকভাবে কীভাবে ব্যথা পরিমাপ করতে পারে? প্রসব বেদনা, পিত্তথলির পাথর এবং কিডনিতে পাথর সবই মারাত্মক ব্যথার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রকৃত তীব্রতা খুবই ব্যক্তিগত।” অন্য কথায়, যদিও ওষুধ ছাড়া প্রসব অত্যন্ত বেদনাদায়ক, সেই ব্যথার মাত্রাকে কিছুতেই “সমান” বলা যায় না – কারণ আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যথার নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে।”
Gouke ব্যথা পরিমাপের একক হিসাবে “ডেল” এর বিষয়ে বলেছেন, এটি একটি শহুরে মিথ, যা ইন্টারেটে জীবিত রাখা হয়েছে।
ভারতের নিউ দিল্লির প্রাইমাস সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সোরাব গার্গ বিশ্বাস নিউজকে বলছেন, “ব্যথা পরিমাপের কোন বস্তুনিষ্ঠ উপায় নেই। ব্যথা একটি বিষয়গত অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন রোগীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এবং ব্যথার মাত্রা তুলনা করা সহজ নয়। কেউ বাস্তবিকভাবে ব্যথা পরিমাপ করতে পারে না। প্রকৃত তীব্রতা খুবই ব্যক্তিগত। প্রসবের সময় একজন মায়ের 57 DEL ব্যথা অনুভব করার দাবিটি মিথ্যা। “
নিউ দিল্লীর ফর্টিস লা ফেম্মে হাসপাতালের গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনিতা গুপ্ত ৫৭ ডেলের ব্যথা অনুভবের তথ্যটি সঠিক নয় জানিয়ে বলছেন, “ব্যথার তীব্রতা ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়।”
মূলত, কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই একজন মা প্রসবের সময় ৫৭ ডেল ব্যথা অনুভব করেন শীর্ষক দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যেখানে ডেল নামক ব্যথা পরিমাপের কোনো একক ই নেই। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রসবকালীন এই ব্যথা পরিমাপের কোনো বস্তুনিষ্ঠ উপায় নেই। রোগী ভেদে এই ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার হতে পারে।
সুতরাং, প্রসবের সময় একজন মায়ের ৫৭ ডেল ব্যথা অনুভব করার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।