সম্প্রতি, চীনারা কেমিক্যাল দিয়ে রাবারের বাঁধাকপি তৈরি করছে শীর্ষক ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। কতিপয় ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো খাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ৪ হাজার ৭০১ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বাঁধাকপিটি খাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়নি বরং জাপানের রেস্টুরেন্টগুলোতে স্যাম্পল ফুড বা ডিসপ্লে ফুড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মোমের তৈরি এসব বাঁধাকপি।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে CrazyShit নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি how fake cabbage is made for food display in japan 🥬#shorts #trending #food #viral শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটিতে যে বাঁধাকপি তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে তা মূলত জাপানের ফুড ডিসপ্লের জন্যে তৈরি করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে Process X নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট The process of making fake food. A 71-year-old craftsman who has been making fake food for 53 years. শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত সমজাতীয় আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে উক্ত ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে। তবে উক্ত ভিডিওটিতে তার পরনে ভিন্ন একটি টি-শার্ট দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম এবং সাবটাইটেল থেকে জানা যায়, উক্ত ব্যক্তির নাম তাকেউচি (Mr. Takeuchi)। জাপানের আইচি নামক অঞ্চলে বাসবাসকারী ৭১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গত ৫৩ বছর যাবৎ এই স্যাম্পল ফুড মডেল তৈরি করে আসছেন।
তাছাড়াও ভিডিওতে তাকে ফুড মডেলগুলো তৈরি করার জন্যে গরম পানিতে রাখা পাত্রে বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে মোম তৈরি করতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম Today এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২২ মে A feast for the eyes: The Japanese art of fake food শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রেস্টুরেন্টে ডিসপ্লের জন্যে তৈরিকৃত এসব স্যাম্পল ফুডকে Shokuhin Sampuru বলা হয়ে থাকে। সাধারণত মোম অথবা প্লাস্টিকের মাধ্যমে এই ফুড মডেলগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। যখন রঙিন ছবির প্রচলন ছিল না তখন থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে এ ধরনের ফুড স্যাম্পল ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। মূলত, রেস্টুরেন্টটিতে কী কী খাবার পাওয়া যায় এ বিষয়ে জানানোর জন্যে এগুলোর ব্যবহার করা হতো।
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাঁধাকপি তৈরির আরেকটি ভিডিও নিয়ে ফিলিপাইন ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান VeraFiles এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনেও জাপানের স্যাম্পল ফুড বা রেস্টুরেন্টের ডিসপ্লে ফুড তৈরি করার সংস্কৃতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে Rachel and Jun নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ২৮ জুন Japanese fake food samples! শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, জাপানের Gujo Hachiman নামের একটি শহরে স্যাম্পল ফুড বা ডিসপ্লে ফুড তৈরি করার একটি কারখানা রয়েছে। যেখানে গিয়ে কেউ চাইলে নিজের মত করে এইসব স্যাম্পল ফুড তৈরিও করতে পারেন। কীভাবে মোম দিয়ে এই ধরনের ফেক ফুড স্যাম্পল তৈরি করা হয়ে থাকে সেটিও ভিডিওতে দেখানো হয়েছে।
মূলত, মানুষকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে চীনারা কেমিক্যাল দিয়ে রাবারের বাঁধাকপি তৈরি করছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওতে দেখানো বাঁধাকপিটি মোম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। আর এগুলো খাওয়ার জন্যে নয়, জাপানি রেস্টুরেন্টগুলোতে ডিসপ্লে হিসেবে রাখার জন্যে এই স্যাম্পল ফুড বা ফুড মডেলগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে।
সুতরাং, চীনারা মানুষদের খাওয়ানোর জন্যে কেমিক্যাল দিয়ে রাবারের বাঁধাকপি তৈরি করছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- CrazyShit Youtube Channel: how fake cabbage is made for food display in japan 🥬#shorts #trending #food #viral
- Process X Youtube Channel: The process of making fake food. A 71-year-old craftsman who has been making fake food for 53 years.
- Today Website: A feast for the eyes: The Japanese art of fake food
- Rumor Scanner’s Own Analysis