সম্প্রতি ‘আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী হুজুরের লাশবাহী গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে ।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে একই দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন ভিডিও (আর্কাইভ), ভিডিও (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার শিকার হয়নি বরং উক্ত দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকায় জানাজার দাবিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তার লাশ বহনকারী ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ এর অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা পাংচার করে দিলে তার লাশ ‘ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করে সেটিতে করেই পিরোজপুর নিয়ে যাওয়া হয়।
দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে। ভিডিওটি থেকে দেখা যায়, দুর্ঘটনার শিকার হওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি সিনা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এবং অ্যাম্বুল্যান্সটির গায়ে কিছু নাম্বার খুঁজে পাওয়া যায়।
এই নাম্বারের সূত্রে রিউমর স্ক্যানার টিম অ্যাম্বুলেন্সটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান সিনা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানা যায়, ‘শাহবাগ থেকে আসার পথে পিজির সামনে নিয়ন্ত্রণ হারায়। ড্রাইভারেরও গাফিলতি ছিল। গাড়ি শাহবাগেই ছিল। লাশ ছিল না, খালি গাড়ি ছিল।’
অর্থাৎ দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্সটির মালিকানা প্রতিষ্ঠানের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই অ্যাম্বুলেন্সটি খালি ছিল এবং এটিতে কোনো মরদেহ ছিল না।
সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
অপরদিকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও ও প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায়, সাঈদীর মরদেহ দুইটি আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে বহন করা হয়েছিল। তবে এ দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সিনা প্রতিষ্ঠানের কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না।
এ নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ১৫ আগস্ট ‘বিএসএমএমইউ থেকে বের হলো সাঈদীর মরদেহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে সাঈদীকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্সের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ঐ অ্যাম্বুলেন্সটিতে ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ শীর্ষক একটি লেখা খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ১৫ আগস্ট ‘ঢাকায় সাঈদীর জানাজার দাবিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটক‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে একই অ্যাম্বুলেন্সের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত অ্যাম্বুলেন্সটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ২৪ এ একইদিনে ‘পিরোজপুরের পথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,’সাইদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল থেকে বের করতে গেলে ভক্ত ও জামায়াতের কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা দাবি জানান, রাজধানীতে যেন সাঈদীর একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি বের করার সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় জামায়াতের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরে তারা অ্যাম্বুলেন্সের চাকা পাংচার করে দেন ও গ্লাসগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে পুলিশ শাহবাগ মোড় থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি বদল করে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।’
পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার ফেসবুক পেজে ‘সাঈদীর মৃত্যুর পর রাতে কি ঘটেছিলো?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাঈদীর মরদেহ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওটিতেও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্সটি দেখতে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে ছিল ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালের অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে সিনা প্রতিষ্ঠানের কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না।
মূলত, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকায় জানাজার দাবিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তার লাশ বহনকারী ‘লতিফা রশিদ ফাউন্ডেশন’ এর অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা পাংচার করে দিলে তার লাশ ‘ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করে সেটিতে করেই পিরোজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে একইদিনে পিজি হাসপাতালের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হয় ‘সিনা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’ এর একটি অ্যাম্বুলেন্স। পরবর্তীতে এই অ্যাম্বুলেন্সটিকেই সাঈদীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Post: বিএসএমএমইউ থেকে বের হলো সাঈদীর মরদেহ
- Banglanews24: পিরোজপুরের পথে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ
- ATN Bangla: সাঈদীর মৃত্যুর পর রাতে কি ঘটেছিলো?
- Bangla Vision: ঢাকায় সাঈদীর জানাজার দাবিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটক
- Bangladesh Jamaat-e-Islami: গভীর রাতে প্রিয় আল্লামার অপেক্ষায় পিজিতে হাজার-হাজার তৌহিদী জনতা