সম্প্রতি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়।
ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ কিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং প্রথম আলোও উক্ত শিরোনামে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বরং, প্রথম আলো’র একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে বিকৃত করে পিটার হাসের নামে এই ভুয়া মন্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে।
সংবাদের স্ক্রিনশট যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত স্ক্রিনশটটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রচারিত স্ক্রিনশটটির ওপরের বাম কোনে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ লেখা দেখতে পাই আমরা। সাধারণত প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে নিউজ পড়ার সময় সাইটের ওপরে লোগোর নিচে পাঠকের নিউজ পড়ার সময়কাল প্রদর্শিত হয়। অন্যদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের সময়কাল উল্লেখ থাকে প্রতিবেদনের ক্রেডিট লাইনের নিচে। তবে আলোচিত স্ক্রিনশটটিতে ক্রেডিট লাইনের নিচে কোনো সময়কাল উল্লেখ নেই। এছাড়া প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটের ক্রেডিট লাইনে ‘প্রতিবেদক, ঢাকা’ শব্দদ্বয়ের পূর্বে নিজস্ব বা কূটনৈতিক শব্দদ্বয় উল্লেখ থাকে অর্থাৎ ‘নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা’ বা ‘কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা’। আলোচিত স্ক্রিনশটে সেটিও অনুপস্থিত।
এসকল অসংগতি ছাড়াও বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ২৭ সেপ্টেম্বর এবং তার পূর্বে পিটার হাসের বিষয়ে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে: পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাবেক-বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমও আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত স্ক্রিনশটের সংবাদের ফিচারে থাকা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের ছবির হুবহু এবং প্রতিবেদকের ক্রেডিট লাইনের আংশিক মিল রয়েছে। তবে প্রথম আলো’র এই প্রতিবেদনের ফিচারে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের লোগো না থাকলেও আলোচিত স্ক্রিনশটের ফিচারে সেটি সংযুক্ত রয়েছে।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট এডিট করেই আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
মূলত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ভিসানীতি গণমাধ্যমও যুক্ত হবে বলে জানান। এ বিষয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে: পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এর শিরোনাম বিকৃতের মাধ্যমে “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর সংবাদ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
উল্লেখ্য, পূর্বে গণমাধ্যমের ফটোকার্ড নকল করে পিটার হাসের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে উদ্ধৃত করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বরাত দিয়ে “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- প্রথম আলো: “ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে: পিটার হাস”
- US State Department: Taking Steps to Impose Visa Restrictions on Individuals Involved in Undermining the Democratic Election Process in Bangladesh
- Facebook Page: Prothom Alo