পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গত ১৭ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরই প্রেক্ষিতে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মীদের সেনাবাহিনীর মারধরের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীদের সেনাবাহিনীর মারধরের ভিডিও নয় বরং অন্তত গত আগস্ট থেকে ভিডিওটি ফেসবুকে রয়েছে। সে সময় এটিকে গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের সামনের দৃশ্য বলে দাবি করা হলেও রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে এটি কোনো ফিলিং স্টেশনের দৃশ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রাজু ইসলামে নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৩ আগস্ট প্রকাশিত একই ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনে এটি গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনাকে ‘দেশত্যাগে বাধ্য’ করার প্রতিবাদে ১০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্তব্যরত সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক ছেড়ে দিতে বলেন। তখন সেনাসদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তাঁরা সেনাসদস্যদের ওপর হামলা করেন। এতে সেনাবাহিনীর ৪ কর্মকর্তাসহ ৯ জন আহত হন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর দুটি রাইফেল ও ছয়টি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নিয়ে একটি গাড়িতে আগুন ও দুটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। পরে দুটি অস্ত্র ও তিনটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এই ভিডিও প্রচার হয় সে সময়। যদিও রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে ভিডিওটি গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামের দৃশ্য বলে প্রতীয়মান হয়নি। যমুনা টেলিভিশিনের স্থানীয় সাংবাদিক জনাব মুন্না রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “এধরনের ঘটনা এখানে ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এটা গোপালঞ্জের কোন ঘটনা সম্ভবতঃ নয়।”
রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে এটি কোনো ফিলিং স্টেশনের সামনের দৃশ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তাছাড়া ভিডিওর কমেন্টেও একজন জানান, ভিডিওটি চট্টগ্রামে নতুন ব্রীজ এলাকার।
রিউমর স্ক্যানার চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট এলাকার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেও কেউই স্থানটির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিওকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মীদের সেনাবাহিনীর মারধরের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Raju Islam – Facebook Video
- Rumor Scanner’s own analysis